হাওরে বর্ষায় যারা জেলে, শুকনায় তাঁরা কৃষক

:: কিশোরগঞ্জ থেকে টিটু দাস ::

Rice
হাওরে পাঁচ মাসের বর্ষা শেষ। অথৈ পানিতে ডুবে থাকা হাওর শুকিয়ে এখন আবাদী জমিতে রূপ নিয়েছে। আর কয়দিন পরেই হাওরের কৃষকদের ব্যস্ততা শুরু হবে। যারা বর্ষায় নৌকা নিয়ে মাছ শিকার করে তাদের অধিকাংশ আগামী সাত মাস জমিতে কাজ করবেন। বর্ষায় যারা জেলে ছিল, বর্তমানে শুকনায় তাঁরা পুরোপুরি কৃষকে পরিণত হয়েছেন।

সরেজমিনে হাওর ঘুরে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন ও নিকলী এ ৪ উপজেলা হাওর দ্বারা বেষ্টিত। এসব উপজেলার জমি প্রতিবছর বর্ষায় (জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশি^ন মাস) পানিতে ডুবে থাকে। সে সময় হাওরের মানুষ বিভিন্ন নৌকায় জাল নিয়ে হাওরে মাছ শিকার করে। তবে বর্তমানে হাওরে মাছের আকাল চলছে। তারপরও রুজি-রোজগার ও খাবারের আশায় হাওরের মানুষ বর্ষায় নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে যায়।

পানিতে ডুবে থাকা বিশাল হাওর আবার প্রতিবছরের কার্তিক মাসে পানি নেমে শুকিয়ে জমিতে রূপ নেয়। বর্ষায় যারা মাছ শিকার করে হাওরে শুকনায় (কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাস) জমিতে কাজ করে। শুকনায় তাঁরা পুরোদমে কৃষক। এ সাত মাস তাঁরা মাছ শিকারের কথা ভুলে গিয়ে নিজের বা মানুষের বেতনভুক্ত হয়ে জমিতে কাজ করে।

কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরবেষ্টিত অষ্টগ্রাম উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের চৌদন্ত গ্রামের শুক্কুর চন্দ্র দাস বলেন, “আমরা বাইস্যায় (বর্ষায়) মাছ ধইরা খাই, আবার আমরাই শুকনায় ক্ষেতে (জমি) আল-চাষ (হাল-চাষ) কইরা খাই। হের ল্যাই¹া শহরের মানুষ আমরারে কয়, বর্ষায় আমরা জেলে, শুকনায় আমরা কৃষক।
কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলা ছাতিরচর ইউনিয়নের ফজলু মিয়া জানান, আমরার তো বছরে দ্ইুডা কাল (ঋতু) বর্ষা ও শুকনা। বর্ষায় আমরা মাছ ধরি, আর শুকনায় জমিতে কাজ করি।

সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টারের কৃষি বিজ্ঞানী ও হাওরের ভূমিপুত্র হিসেবে খ্যাত ড. নিয়াজ পাশা বলেন, “হাওরের জেলে এবং কৃষকরা ভাসমান শ্রম বিক্রেতা। তাঁরা ধনাঢ্য মানুষের জলাশয় বা জমিতে মজুরিভিত্তিক কাজ করে। ভাসমান শ্রম বিক্রেতাদের জলাশয় এবং জমিতে অধিকার দিলে, হাওরের টেকসই উন্নয়ন এবং উন্নতি হবে।”

happy wheels 2