পুষ্টির ফেরিওয়ালা মোস্তফা
নেত্রকোনা থেকে অহিদুর রহমান:
নেত্রকোনা সদর উপজেলার দরুণবালী গ্রামের মো. মোস্তফা অচাষকৃত নিরাপদ খাদ্য নিয়ে পুষ্টির ফেরিওয়ালা হয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে জেলা শহরে ভ্যানে করে বিষমুক্ত খাদ্য বিক্রি শুরু করছেন। দুপুরে নেত্রকোনা জেলা প্রেসক্লাবের সামনে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামলেন্দু পাল পুষ্টির ফেরিওয়ালার কাজ উদ্বোধন করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাবের সহসভাপতি হায়দার জাহান চৌধুরী, সাংবাদিক খলিলুর রহমান শেখ ইকবাল, আলোকিত নেত্র’র সম্পাদক মনিরুজ্জামান মহসিন, সাংবাদিক এ কে এম আবদুল্লাহ, আল্পনা বেগম, দেবল চন্দ্র সরকার সহ প্রমুখ।
সমাজে চার পাশে অচাষকৃত যেসমস্ত খাদ্যসম্পদ আছে সেগুলো বিষমুক্ত, নিরাপদ ও প্রাকৃতিকভাবে জম্মায়। তিনি দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর ধরে অচাষকৃত স্থলজ, জলজ, বনজ খাদ্যসম্পদ বিক্রি করে আসছেন। গিমাই, কুইড়া, বাউত্তা, পালই, বউটুনি, থানকুনি, হেলেঞ্চা, কলমী, কলার তুর, কেউরালি, শাপলা, শালুক, কচুশাক, ঢেকিশাক, বন আলু, দন্ডকলস, আলুপাতা সহ ২৫ জাতের শাক বিক্রি করেন। এর আগে তিনি গ্রামের বাজারে হাট বারে বসে বিক্রি করতেন।
মোস্তফা বলেন, “আমি এই বিষমুক্ত খাবার বিক্রি করে মনে শান্তি পাই। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বিক্রি করে থাকি। এতে আমার ভালই লাভ করতে পারি। সংসারে পাঁচজন সদস্যের মরেধ্য এক মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। ছোট মেয়ে সালমা আক্তার স্কুলে যায়। আমার স্ত্রী রেজিয়া আমাকে কাজে সহায়তা করে। বারসিক আমার এই কাজকে দেখে প্রশংসা করে এবং আর্থিকভাবে সহায়তা করে।”
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট জেলা কমিটির যুব সংগঠক এ কে এম এরশাদুল হক জনি বলেন, “আত্মশক্তিতে বলীয়ান ব্যক্তি কখনো দরিদ্র থাকতে পারেনা। বন জঙ্গলের অবহেলিত লতা পাতা প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে বিক্রি করে যে স্বাবলম্বী হওয়া যায়, তার একটি সফল উদাহারণ মোস্তফা।”
নেত্রকোনা জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামন্দেু পাল জানান, শুনেছি ফেরিওয়ালা মোস্তফা একজন উদ্যমী মানুষ। তার এই উদ্যোগ সফল হোক। শহরের মানুষের মাঝে বিষমুক্ত নিরাপদ খাবার গ্রহনে সচেতনতা সৃষ্টি হোক।
অচাষকৃত খাবার আগে ছিল গরিবের, আর এখন ওই সমস্ত খাবার হলো ধনীদের। বাজারে সবাই এই বিষমুক্ত খাবার খোঁজেন। অনেকেই কিনে নেন। কিন্তু উন্নয়নের জোয়ারে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এই প্রাকৃতিক খাবারগুলো। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক খাবারের উৎসগুলো। এই খাবার বিক্রি করে অনেক পিছিয়ে পড়া নারী আয় উপার্জন করেন। আমাদের প্রয়োজনেই এই খাদ্যজগতকে বাঁচিয়ে রাখা উচিত।