বর্ষার আগমন এবং ক্ষিরাই নদী
ঘিওর, মানিকগঞ্জ থেকে সুবীর কুমার সরকার:
বর্ষার আগমনে গাংডুবী গ্রামের মানুষের জন্য এক অনন্য প্রতীক্ষার অবসান হলো। গ্রীষ্মের রোদে যখন প্রকৃতি শুস্ক প্রায়, মৃত পায়, এক ফোটাঁ বৃষ্টির জন্য যখন মানুষ ‘আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে’ বলে গান গেয়ে ওঠে তখন বর্ষার আগমন তাদের ক্লান্তি দূর হয়। টিনের চালের ঝুম ঝুম বৃষ্টিতে মুখরিত হয় গ্রাম বাংলা। খরতাপে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত প্রাণীরাও এতে স্বস্তি পায় এবং মানুষও জীবন্ত একটা অনুভূতি অনুধাবন করে। বর্ষার বৃষ্টি ভেজা বাতাস প্রকৃতিকে সতেজ করে। খা খা করা পুকুর, খালবিল, মাঠ-প্রান্তরও বর্ষায় জীবন্ত হয়ে উঠে। টইটুম্বুর হয়। বাংলা আষাঢ ও শ্রাবণ দুই মাস নিয়ে বর্ষাকাল যার পুরোটা সময় জুড়েই থাকে বৃষ্টিধারায়। এ সময় কদম ফুল ফোটে, চারিদিকে সবুজ ক্যানভাস, যা মনকে জুড়িয়ে দেয়।
ঘিওর উপজেলার গাংডবী গ্রামের পাশে বয়ে গেছে ক্ষিরাই নদী। বর্ষায় এ নদী পূর্ণ যৌবনা হয়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। এ সময় নদী তার আসল সৌন্দর্য খুজে পায়। ক্ষিরাই নদী পাড়ের সবুজ ঘাস আরও সবুজ হয়ে ওঠে। যতদুর চোখ যায় নদীর দু’কূলসহ মাঠ ভর্তি জল আর জল। এই প্রসঙ্গে গাংডুবী গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি মো. দবির উদ্দিন (৮১) ও খগেন্দ্র মন্ডল (৮৩) জানান, ক্ষিরাই নদীকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক উৎসব চলতো যেমন-নৌকা বাইচ, ভেলা ভাসানো, মণষা পুজা, গঙ্গা স্নান, অষ্টসখির গান, গঙ্গা মাকে লবণ দেয়া, সাতাঁর প্রতিযোগিতা এবং মাঝিদের গান। বিশেষ করে বর্ষায় এ নদী পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এলাকার মানুষ বিশেষ করে যারা ক্ষিরাই নদীকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করেন তারাও ব্যতি-ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
অন্যদিকে বর্ষাকে কেন্দ্র করে কৃষকদের কাজের শেষ নেই। তাঁরা সোনালিী আঁেশর দেশকে আরো এগিয়ে নেয়ার জন্য পাট কাটা, পাট জাগ দেয়া নিয়ে সময় পার করেন। এছাড়া জেলে সম্প্রদায়েরা মাছ ধরার জন্য ভেসাল তৈরি করেন। কারণ বর্ষাকালে মাছ ধরে তা বিক্রি করে তাদের জীবিকা চলে। ক্ষিরাই নদী কল্যাণে গাংডুবী মাঠে বর্ষাকালে দেশীয় মাছ পাওয়া যায়। বর্ষার পলি মাটিতে গাংডুবী মাঠের জমিও হয়ে উঠে উর্বর।
বাংলার সংস্কৃতিতে মিশে আছে বর্ষা খাতু। বর্ষাকে নিয়ে বাংলায় যতো গান রচিত হয়েছে অন্য কোন ঋতুর জন্য এমন এত সংখ্যক গান রচিত হয়নি। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যে বড় একটা অংশজুড়ে রয়েছে বর্ষার ঋতুর বন্দনা এবং বর্ষার সৌন্দর্য বন্দনা। রবীন্দ্রনাথের ‘পাগলা হাওয়ার বাদলা দিনে’ কিংবা ‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদর দিনে’ প্রভৃতি গান আজও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের মনে সাড়া দিয়ে যায়।