পাখির নিরাপদ ঠিকানায়…
মানিকগঞ্জ থেকে সুবীর কুমার সরকার
পাখিকে নিয়ে যারা স্বপ্ন দেখেন, পাখিকে নিয়ে যাদের ভাবনা তৈরি হয় সেই এক ঝাঁক তরুণদের উদ্যোগে ঘিওর উপজেলার গাংডুবী গ্রামে গড়ে উঠেছে পাখির নিরাপদ আবাসস্থল। পাখিকে নিরাপদে রাখতে যাদের এই উদ্যোগ তারা সেই কৌশলটি শিখেছে ধামরাই থানার ভেতরে পাখিদের আবাসস্থল দেখে। এই আবাসস্থল দেখার সুযোগ করে দেয় বারসিক, যারা শুরু থেকে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার কাজ করে যাচ্ছে।
১৫ সদস্যের এই তরুণ দল দেখে আসে কিভাবে পাখি রক্ষায় গাছের ডালে ডালে হাঁড়ি বাঁধতে হয়। এই সফরে তারা দেখে যে সব গাছেই হাঁড়ি বাঁধা যায় না। নির্দিষ্ট গাছে এই হাঁড়িগুলো বাঁধতে হয়। সেই নির্দিষ্ট গাছগুলোর মধ্যে আছে আম, ডয়্যা, গাব, বন্ন্যা, হিজুর গাছের ডালগুলো। এসব গাছের ডালে ডালে হাঁড়ি বেঁধে দেওয়া হয় যেখানে ঘুঘু, পেঁচা, টিয়ে, চড়–ই, শালিক, কবুতর, দোয়েল, বক, কাক, কানাকুয়া তাদের ঠিকানা ফিরে পায়। এই আপন ঠিকানায় তারা নিরাপদে তাদের বংশ বৃদ্ধি করতে পারে। নতুন আবারস্থলে যেন পানি জমতে না পারে সে কারণে প্রতিটি হাঁড়ির নিচটি ফুটো করে দেয়া হয়। আর এই হাঁড়িতে পাখি থাকলে রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ের হাত থেকে পাখি রক্ষা পায়। তরুণেরা ৩৫টি মাটির হাঁড়ি গাছের ডালে বেঁধে দিয়ে পাখির নতুন নিরাপদ ঠিকানা তৈরি করে দেয়।
কেন এই উদ্যোগ গ্রহণ করা জানতে চাওয়া হলে তরুণদের প্রতিনিধি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা বই পড়ে, সংবাদপত্র দেখে, টেলিভিশন দেখে এবং এলাকায় চলাচল করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি দিন দিন পাখির আবাস স্থল কমে যাচ্ছে। কেন পাখি কমে যাচ্ছে সেই প্রশ্নটিও আমাদের মাথায় আসে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা এলাকা পর্যবেক্ষণ করে দেখি, আগের মতো গাছ নেই, নদী-নালা নেই, কোথায় পাখিরা তাদের আবাসস্থল গড়ে তুলবে। আর এই পাখি না থাকার কারণে এর প্রভাবও পড়ছে আমাদের পরিবেশের উপর। এই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখি যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সেটা আমরা বন্ধুরা সবাই জানি। আর তাই আমরা সকলে মিলে পাখি রক্ষার শপথ নিয়েছি।”
শীতের শুরুতে গাংডুবী ক্ষিরাই নদীতে দেশি মাছ খেতে দেশী-বিদেশী অনেক পাখি আসে। সকল পাখির নিরাপদ বিচরণ করাতে সবাই এক সংগে কাজ করে যাবো বলে গাংডুবী পল্লী উন্নয়ন যুবক সমিতি সমন্বরে শপথ নিয়ে জানিয়েছে “আমরা পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল তৈরী করবো, পাখি কাউকে মারতে দিবো না,আমরা ও পাখি মারবো না । পাখি যাতে নিরাপদে বিচরণ করতে পারে তার জন্য কাজ করে যাব ” ।