সাম্প্রতিক পোস্ট

সড়ক যেখানে চাতাল!

সড়ক যেখানে চাতাল!

তানোর রাজশাহী থেকে মিজানুর রহমান

রাজশাহীর তানোর উপজেলার কাঁচা-পাকা সড়কগুলোতে ধানমাড়াই ও খড় শুকানো হয়। এ কারণে যানবাহনসহ জনসাধারণের চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা।

এ সড়কে চলাচল করা বিভিন্ন যানবাহনের সাত-আটজন চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ উপজেলার প্রায় সব পাকা সড়ক দখল করে এখন খড় শুকানোর জন্য সবাই ব্যস্ত। খড়ের কারণে সড়কের দুই পাশ পিচ্ছিল হচ্ছে। এর ফলে যানবাহন বেশি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সড়কের ওপর খড় ফেললে খানাখন্দ দেখা যায় না। ফলে সাইকেল, মোটরসাইকেল বা অন্যান্য যানবাহন গর্তে পড়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এ ছাড়া সাইকেল, ভ্যান, রিকশার শ্রমিকদের দ্বিগুণ শক্তি প্রয়োগ করতে হয়। কোনো কোনো ভ্যান ওই সব সড়কে যেতে চায় না। ফলে ভোগান্তির শিকার হতে হয় যাত্রীদের।

Tanore Rasta @ Dan Photos-01 09.05.2018

সম্প্রতি রাজশাহীর তানোর-চৌবাড়িয়া, তালন্দ-কলমা, হাতিশাইল-কামারগাঁ ও দেবীপুর-মুন্ডুমালা সড়কে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় পুরো সড়ক কৃষকের দখলে। দেখে মনে হয়, সড়ক নয় যেন চাতাল! দল বেঁধে কৃষকেরা সড়কের ওপর যন্ত্র দিয়ে ধান মাড়াই করছেন, অনেকে সড়কজুড়ে ধান ও খড় বিছিয়ে রেখেছেন। আবার অনেকে ধান কেটে এনে সড়কের ধারে স্তূপ করে রাখছেন। এর মধ্যেই সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন।

একটি মোটরসাইকেলে চড়ে এক যুবক উপজেলা শহরে যাচ্ছিলেন। দুপুর ১১টার দিকে তানোর-চৌবাড়িয়া সড়কের সমাসপুর এলাকায় খড়ের ওপর পিছলে পড়ে যান। এ নিয়ে খড় শুকানো কৃষকের সঙ্গে ঝগড়া বেঁধে যায় তাঁর। মোটরসাইকেলের চালক জাফর ইকবাল বলেন, “প্রায় প্রতিদিনই এভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু প্রতিকারের কেউ নেই।”

তালন্দ ইউনিয়নের কৃষক সাইদ রানা (৩১) দেবীপুর-মুন্ডুমালা সড়কের ওপর ধান স্তূপ করে রাখছিলেন। তিনি বলেন, “আগের মতো বাড়ির সামনে মানুষজন আর ফাঁকা জায়গা ফেলে রাখে না, ঘরবাড়ি করে ফেলেছে। ধানমাড়াইয়ের জায়গার অভাব।” তাই মানুষ নিরুপায় হয়ে সড়ক বেছে নিয়েছে। তিনি একা নন, তাঁর মতো এলাকার প্রায় সব কৃষক এখন সড়কের ওপর ধান মাড়াই করেন।

Tanore Rasta @ Dan Photos-04 09.05.2018
উপজেলার চাপড়া গ্রামের আলতাফ আলী, কালনা গ্রামের আলম হোসেন, গোকুল গ্রামের মরিয়ম বিবি, মিন্টু হোসেন, হরিদেবপুর গ্রামের সুকুমার রবিদাস সহ অনেকেই সড়কে ধান মাড়াই ও শুকানোর কথা স্বীকার করে বলেন, তাঁদের আলাদা কোনো জায়গা না থাকায় এ কাজের জন্য সড়ককেই বেছে নিয়েছেন। তাঁরা জানান, শুধু তাঁরা নন, তাঁদের মতো অনেকেই এই কাজ করছেন। তবে চলাচলে সমস্যা হলেও তা সাময়িক বলে মন্তব্য করেন তাঁরা।

মাইক্রোবাসের চালক আব্দুস সালাম (৩৯) বলেন, বর্তমানে এ উপজেলার পাকা সড়কগুলো দিয়ে যাতায়াত করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। পথচারী ও যানবাহনের চালকেরা একটু অসতর্ক হলেই নিশ্চিত দুর্ঘটনা ঘটবে। উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “অনেক স্থানে সড়কের ওপরই ধান মাড়াই, ধান ও খড় শুকানোর কারণে সড়কেরও ক্ষতি হচ্ছে। সড়কে ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজ করা ঠিক নয়।”

তানোর পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান বলেন, “পৌর এলাকার কিছু সড়কসহ উপজেলার বেশির ভাগ সড়কে ধান কাটা মৌসুমে এ রকম অবস্থার সৃষ্টি হয়। কৃষকেরা মূলত জায়গার অভাবে এভাবে সড়কে আসেন। তবে এতে দুর্ঘটনারও খবর পাওয়া যায়।” তাঁরা লোকজনকে এতে প্রতিনিয়ত বারণ করছেন বলে জানান।

happy wheels 2

Comments