গোদাগাড়ীতে শীত ও কুয়াশায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ধানের বীজতলা
রাজশাহী থেকে জাহিদ আলি:
ক্রমাগত তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বোরো মৌসুমে ধানের বীজতলা। তাই চলতি বোরো মৌসুমে ধানের আবাদ নিয়ে শঙ্কিত এখানকার কৃষকেরা। উপজেলার গ্রোগ্রাম ইউনিয়নের বড়শী পাড়া গ্রামের কৃষককদের ধানের বীজতলা তীব্র শীত ও কুয়াশায় বোরো ধানের বীজতলায় চারা গুলো হলুদ হয়ে পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। ঘন কুয়াশায় বীজ তলায় এক ধরনের আঠার মত আবরণ তৈরী হয়। এই আঠার কারণে পাতা পুড়ে যাচ্ছে। বীজতলায় সবসময় পানি ধরে রেখেও রক্ষা করা যাচ্ছে না এই সমস্যাকে।
কৃষক ধীরেন হাসদা ও আব্দুর রাজ্জাক জানান, আমরা উভয়েই জমিতে ৩০ কেজি করে বীজ বপন করেছিলাম। কিন্তু কুয়াশা ও শীতের কারণে দুইজনেরই সব চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন বাজার থেকে বিঘা প্রতি প্রায় এক হাজার টাকা খরচ করে আবাদ করতে হবে। একইরকম অভিজ্ঞতার কথা বলেরন কৃষক হাসান হাবীব, “আমি ৪ বিঘা জমির জন্য ৩০ কেজি ব্রি-২৮ জাতের ধানবীজ বীজ তলা বপন করেছিলাম। এখন যে অবস্থা তাতে অর্ধেক ভালো চারা পাবো কিনা সন্দেহ আছে। শেষ পর্যন্ত বাজার থেকে কেনা বীজ দিয়েই জমি আবাদ করতে হবে।”
কৃষক রেজাউল ইসলাম বলেন, “এবছর আবাদের জন্য আমি ও আমার ভাই একত্রে ১ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮, ব্রি-৭৬ ও জিরাশাইল জাতের বীজতলা করি। কিন্তু শীতের তীব্রতা ও বেশি সময় ধরে চলমান থাকার কারণে আমার জমির বেশিরভাগ বীজের উপরিভাগে শুকিয়ে যাচ্ছে। এমনিতে শীতের দিনে চারা বাড়তে সময় লাগে। মাঘের শুরুতে জমি লাগাব মনে করেছিলাম। এখন শঙ্কায় আছি জমিতে লাগালেও গাছ লাগতে সময় লাগবে বা মরা চারা জায়গায় নতুন চারা রোপন করতে হবে।”
কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান, “শীতে বীজ তলায় চারা দেরিতে বাড়ে, বোরো মৌসুমে ধানের চারা ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে জমিতে লাগালে ভালো ফসল পাওয়া যায়। শীতের কারণে বীজ তলার চারা বয়স বেশি হয়ে যাচ্ছে। ৫০-৬০ দিনের বেশি বয়সী চারা লাগালে ভাল ফলন পাওয়া যাবে না। আবার জমিতে লাগানোর পর পর্যাপ্ত রোদ না পেলেও গাছ মরে যাবে।” গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসের দায়িত্ব প্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আকবর হোসেন বলেন, “শীতের কারণে অনেকের জমির বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ সময় জমিতে পানি ধরে রাখা, সকালে শিশির ধুয়ে দেওয়া ও সাদা পলিথিন দিয়ে চারা ঢেকে রাখার পরামর্শ দিয়েছি। এলাকার অনকে কৃষকই এই পদ্ধতি ব্যবহার করছে।”
ভালো ফসল পাবার পূর্বশর্ত ভালো মানের সুস্থ্য সবল চারাগাছ নিশ্চিতকরণ। এলাকায় প্রতিটি কৃষকই তার নিজ অভিজ্ঞতা নিয়ে চেষ্টা করছেন তার বীজতলাকে রক্ষা করার। এরপরও যদি ভালো চারা না পান তাহলে কেনা চারায় কৃষি আবাদের খরচ বাড়বে কৃষকের।