পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ চাল কুমড়া ভূমিকা রাখে রোগ প্রতিরোধে
চাটমোহর, পাবনা থেকে ইকবাল কবীর রনজু
চাল কুমড়া একটি জনপ্রিয় সবজি। এর পাতা ও ডগা শাক হিসেবে খাওয়া হয়। আমাদের দেশের প্রায় সর্বত্রই চাল কুমড়ার চাষ হয়। সাধারণত ঘরের চালে এ সবজি ফলানো হয় বলে এর নামকরণ করা হয়েছে চাল কুমড়া। তবে বর্তমান সময়ে মাটিতে এবং উঁচু মাচায়ও চাল কুমড়ার আবাদ হচ্ছে। পরিণত বয়সে লম্বাটে সবুজ আকারের চাল কুমড়াগুলোর গায়ে সাদা চুনের মতো দাগ পড়তে থাকে। সম্পূর্ণ পরিপক্ক হলে এটি বাহ্যিকভাবে সাদা রঙ ধারণ করে। অপরিণত চাল কুমড়ার গায়ে রোম থাকে। পরিণত হলে এর গায়ে সাদা চুনের মতো পাউডার জাতীয় পদার্থের আবরণ হয় যার ফলে এটি সংরক্ষণ করা যায়। কাচা ও পাকা উভয় প্রকার চাল কুমড়াই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এ সবজিটি রোগ প্রতিরোধে ও ভূমিকা রাখে।
পাকা চাল কুমড়া দিয়ে মোরব্বা তৈরি করা হয়। এটি তরকারি হিসেবেও খাওয়া হয়। এছাড়া পাকা চাল কুমড়া দিয়ে হালুয়া ও পায়েশ তৈরি করা যায়। কুমড়ো বড়ি তৈরিতে ও এটির ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। সংরক্ষণ উপযোগি বলে পাকা চাল কুমড়া দীর্ঘদিন ঘরে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। চাল কুমড়া আমিষ, শর্করা, চর্বি ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ বলে অনেকে খাদ্য তালিকায় এ সবজিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
প্রতি ১শ’ গ্রাম চাল কুমড়ায় ১৩ কিলোক্যালরী খাদ্য শক্তি, ০.৪ গ্রাম আমিষ, ৩ গ্রাম শর্করা, ২.৯ গ্রাম ফাইবার, ০.২ গ্রাম চর্বি, ১০.১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ১৫০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১১ মিলি গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ২৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ০.২ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.৭ মিলিগ্রাম জিংক, ১৩ মিলিগ্রাম ফসফরাস রয়েছে।
চালকুমড়া অন্ত্রের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া, আলসার রোগ, পাকস্থলীর এসিড দূর করে। মানসিক রোগীদের পথ্য হিসেবে কাজ করে চাল কুমড়া। চাল কুমড়ার রস যক্ষা রোগে ফল দায়ক। মেদ ও শরীরের ওজন কমাতে চাল কুমড়া ভালো ফল দেয়। রক্ত চলাচলে সহায়তা করে। চাল কুমড়ার রস মুখের ত্বক সুন্দর রাখে ও চুল চকচকে করে।
পর্যাপ্ত ফলন হওয়ায় চলতি মৌসুমের মধ্য থেকে শেষ ভাগ পর্যন্ত চাটমোহরে চাল কুমড়ার দাম অকল্পনীয়ভাবে কমে যাওয়ায় এ এলাকার চাল কুমড়া উৎপাদনকারীরা চাল কুমড়া বিক্রি করতে পারেননি। দুই টাকা থেকে পাঁচ টাকায় বিক্রি হয়েছে প্রতিটি চাল কুমড়া। ফলে অনেকে চাল, মাচা বা জমি থেকে চাল কুমড়া না তুলে পাকিয়েছেন। এখন তারা সেগুলো বিক্রি করছেন। কিন্তু ভালো দাম পাচ্ছেন না এখনও।
চাটমোহরের বিলচলন ইউনিয়নের চরসেন গ্রামের জামাত আলীর স্ত্রী রত্না খাতুন বলেন, ‘প্রথমদিকে কিছু চাল কুমড়া বিক্রি করি। মৌসুমের মধ্য ভাগ থেকে দাম কমে যাওয়ায় চালেই কুমড়া পাকিয়েছিলাম। কিছুদিন পূর্বে চাল থেকে পাকা চাল কুমড়াগুলো নামিয়েছি। খুব বেশি দাম না পেলেও পুষ্টির জোগান তো দিতে পেরেছি।’ গুনাইগাছা ইউনিয়নের চড়পাড়া গ্রামের মৃত ফয়েজ সরকারের ছেলে আজাহার আলী চাল কুমড়া কিনে পাঠাচ্ছেন ঢাকার কাওরান বাজার। এ খবর পেয়ে চড়পাড়া ও পাশর্^বর্তী গ্রামগুলোর নারী ও পুরুষ পাকা চাল কুমড়া বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসছেন তার কাছে। চাটমোহর-মান্নাননগর সড়কের পাশে চড়পাড়া এলাকায় গত কয়েক দিন যাবত এভাবে পাকা চাল কুমড়া ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে। সাবেদুল ইসলাম নামক এক বিক্রেতা বলেন, ‘মৌসুমে দাম না পেয়ে চালেই কুমড়া পাকালাম। আকারে অনেক বড় বড় হলো। এখন প্রতি পিস দশ টাকা করে বিক্রি করছি।’ দাম যাই হোক ফলন ভালো হওয়ায় ও পুষ্টির যোগান দিতে পারায় রত্না খাতুনের মতো তিনিও সন্তষ্ট।