পরিবেশ রক্ষায় কিশোরীদের ক্ষুদ্র প্রয়াস
নেত্রকোনা থেকে রোখসানা রুমী:
জলবায়ু পরিবর্তনে সারা দুনিয়া আজ গভীর সংকটে। এ সংকটে সবচেয়ে বেশি ঝুকিপূর্ণ বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশ বিপর্যয় এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে মানুষের রোগবালাই প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।
নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের একটি গ্রাম ফচিকা। এ গ্রামে কাজ করছে অগ্রযাত্রা কিশোরী সংগঠনের পরিচালনায় ‘কিশোরী তথ্য কেন্দ্র’ নামে কেন্দ্র। বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালীন সংকটে কিশোরীরা তথ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে নিজ গ্রামের উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা, নিজস্ব সংস্কৃতি সুরক্ষা এবং গর্ভবতী নারী ও নবজাতকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ছোট ছোট উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে আসছে। কিশোরীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমাজের গণ্যমান্য ব্যাক্তিদেরকে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে উদ্ধুদ্ধ করছে। কিশোরীরা সংগঠনের সভায় আলোচনার মাধ্যমে উদঘাটন করে যে, এলাকায় ফলের ও ঔষধি সংখ্যা অনেক কমে। তারা আরও উদঘাটন করে যে, স্থানীয় প্রজাতি ও কৃষি প্রাণবৈচিত্র্যবান্ধব জীবন ব্যবস্থাকে ধবংস করে দিচ্ছে আগ্রাসী ও বিদেশী প্রজাতির গাছ। ফলে নষ্ট হচ্ছে দেশীয় গাছ, বিদেশী গাছের পাতা পুকুরে পড়ে মাছ মারা যাচ্ছে। তাই তারা অনুধাবন করে যে, গ্রামের পরিবেশ ঠিক রাখতে হলে স্থানীয় জাতের গাছ রোপণ করতে হবে। তাই কিশোরীরা উদ্যোগ নেয় গ্রামের জনগোষ্ঠীকে দেশীয় জাতের ফলের ও ঔষধি গাছ রোপণে উদ্বুদ্ধকরণের।
এই প্রসঙ্গে সংগঠনের সদস্য লাবণী আক্তার বলেন, ‘আমরা সব সময় বিভিন্ন ধরণের রোগবালাইয়ে ভোগার কারণ হল বৈচিত্র্যময় ফল না খাওয়া। কারণ আমাদের অনেকের বাড়িতে খুবই কম ফলের গাছ রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমাদেরকে বাজার থেকে ফল কিনে খেতে হয়, যাতে রাসায়নিক দব্য ব্যবহার করা হয়। দেশীয় ফলের প্রতি আমাদের আগ্রহ দিন দিন কমে যাচ্ছে। গ্রামে ঔষধি গাছের পরিমাণও কমে গেছে। আমরা এখন শাক-সবজি ও ফলমূল কম খাই তাই আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাই আমরা নিজেদের উদ্যোগে পরিবেশ সুরক্ষায় বিগত দুই বছর ধরে প্রত্যেক বাড়িতে ফলের গাছ লাগাই। চলতি জুলাই মাসে পরিবেশ সুন্দর করার জন্য এবং গ্রামে ফলের বৈচিত্র্য বৃদ্ধির জন্য ১০০টি ফলের চারা রোপণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠনের প্রত্যেক সদস্য ১০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে ১০০টি ফলদ গাছের চারা কিনে গ্রামে রোপণ করেছি।’
সংগঠনের আহবায়ক শেফারী আক্তার গ্রামের শ্রেণী, পেশা ও বয়স নির্বিশেষে সকলকে বৈচিত্র্যময় গাছের চারা রোপণের আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আসুন আমরা সবাই মিলে ফলের গাছ লাগাই এবং পরিবেশকে বাচাই।’
গ্রামের পরিবেশ ও সমাজ উন্নয়নে কিশোরীদের এই উদ্যোগে এলাকার ভবিষ্যত প্রজন্ম প্রকৃতির সাথে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে ও সকলের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে এই হল কিশোরীদের অঙ্গিকার।