আমরা আর কেউ সুন্দরবনের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল নই
সাতক্ষীরা থেকে চম্পা মল্লিক
মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের উপকূলীয় অঞ্চল চুনকুড়ি গ্রাম। সম্পূর্ণ নদীর পাশেই বসবাস করেন এই গ্রামের জনগোষ্ঠীরা। এই গ্রামের প্রায় অধিকাংশ জনগোষ্ঠী সুন্দরবনের ওপর নির্ভর করছেন তাদের জীবিকার জন্য। তারা মাছ, কাঁকড়া, পোনা ধরেন এবং সুন্দরবন থেকে গোল পাতা ও মধু সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু এসকল কাজ করতে এখন তারা পড়ছে নানান সমস্যায়।
এই বিষয়ে সুনিতা রানী (৫৬) বলেন, ‘এই গ্রামে তেমন কোন কাজ নেই আমাদের। বছরে শুধু পৌষ মাসে কিছু কাজ বের হয়, যেমন- শামুক বাছা, ঘাস বাছা, ঘেরের রাস্তায় মাটি দেওয়া প্রভৃতি। এসব কাজ করে আমরা ভালো কিছু অর্থ উপার্জনও করে থাকি। তারপর জীবিকা সচল করার জন্য যেতে হয় সুন্দরবনে। কিন্তু সেখানে আরেক জ¦ালা। পাশ না কেটে সুন্দরবনে যাওয়া যায় না। আবার এই পাশ অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। শুধুমাত্র গৌণ মুখে বি.এল.সি করে পাশ কাটতে হয়। এটি আবার সবাই করতে পারেনা। তাই সবাই যেতেও পারেনা। তবে নিয়ম আছে, যাদের বিএলসি কাটা আছে তাদের সাথে একজন করে যেতে পারবে, আর সেক্ষেত্রে যার সাথে যাবে তাকে সাথে নিয়ে সেই ব্যক্তির এক কপি ছবি, নাম ও ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি বনবিভাগ অফিসে জমা দেওয়া লাগে। কিন্তু এ সুযোগ ও হয়না! কে কখন আগে থেকে এক এক জনকে ঠিক করে রাখে।’
রেকছোনা খাতুন (৪২) বলেন, ‘সারা বছর আমরা জ¦ালানি হিসেবে জঙ্গলের ভেসে আসা ফল ব্যবহার করে আসছি, কিন্তু এখন আমরা এই ফলও নিজের ইচ্ছেমতো তুলতে পারিনা। তাছাড়া আছে ডাকাতের ভয়। তবে এই সমস্যায় পুরুষদেরকে বেশি পড়তে হয়। কারণ পুরুষেরা বেশি গভীর জঙ্গলের দিকে যায়। আবার গভীরে না গেলে মাছ বা কাঁকড়া বেশি পাওয়া যায় না।’
অন্যদিকে কমলা রানী (৬৫) বলেন, ‘এতো কড়াকড়ি আগে ছিলোনা। এই জঙ্গলেই ছিলো আমাদের ভাত। কিন্তু এখন নানান সমস্যার কারণে আমরা আর জঙ্গলকে আগের মতো ব্যবহার করতে পারিনা। এরপর আছে গৌণ-ভাটা। গৌণ থাকলে পাশ কেটে যেতে হবে। আবার ভাটিকায় সব বন্ধ। তখন কখনো খেয়ে আবার কখনো না খেয়ে কাটাতে হয় কারো কারো। এই সমস্যায় থাকতে থাকতে এখন আমরা বেছে নিয়েছি অন্য কাজ।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই এখন ইটের ভাঁটায় কাজ করে, মধুর খামারে মাইনা থাকে কেউবা দিনমজুরি কাজ করে আবার যাদের একটু জায়গা আছে তারা সেখানে করছে কাঁকড়া চাষ। এখন আমরা আর কেউ জঙ্গলের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল নই। সবসময় খুঁজি নতুনভাবে কি কাজ করতে পারি আর কিভাবে একটু সুস্থভাবে চলতে পারি। নারীরা যার যেটুকু জায়গা আছে সেখানে বারোমাস কোন না কোন সবজি চাষ করে। কারণ আমরা যেখানে বাস করি, ইচ্ছে করলেই কোন কিছু কিনতে পারিনা বাজার দূরে হওয়ায়। অনেক সবজিই এখানে মোটামুটি ভালো হয়। ফলে এখন আমাদের বাজার নির্ভরশীলতাও কমে গেছে।’