প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণই সমান গুরুত্বপূর্ণ
সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান
‘সকল জীবনের জন্য সমান ভাগে বণ্টিত আগামি” প্রতিপাদ্যর আলোকে আন্তর্জাতিক প্রাণ বৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার ব্রী-কালিয়াকৈর নয়াপাড়া গ্রামে প্রাণবৈচিত্র্য চিহ্নিতিকরণ এবং সংরক্ষণে আমাদের ভূমিকা শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বারসিক’র সহযোগিতায় ব্রী-কালিয়াকৈর নয়াপাড়া কৃষক কৃষাণি সংগঠন অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। অংশগ্রহণকারীগণ পতিত জমিতে বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ চিহ্নিত করে প্রত্যেকটি উদ্ভিদের গুনাগুণ তুলে ধরে সংগঠনের সহ-সভাপতি রমেলা বেগমের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের মানিকগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি গাজী ওয়াজেদ আলম লাবু, সংগঠনের সহ-সভাপতি মোঃ সাহবুদ্দিন, সদস্য সুনেলা বেগম, মনোয়ারা বেগম, শহীতন বেগম, শিক্ষার্থী জিসান আহমেদ, আলীরাজ, সংগঠনের অন্যান্য সদস্যসহ বারসিক কর্মকমর্তা শিমুল কুমার বিশ্বাস ও শারমিন আক্তার প্রমুখ।
আলোচনায় গাজী ওয়াজেদ আলম লাবু বলেন, ‘আধুনিক উন্নয়ন ও বৈশি^ক জলবাযূ পরিবর্তনের কারণে আমাদের চারপাশের প্রাণবৈচিত্র্য সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। প্রাণবৈচিত্র্য যত সংকুচিত হচ্ছে মানুষের টিকে থাকার পরিবেশর কঠিন হয়ে যাচ্ছে। মাুনষের বেঁচে থাকার অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় সকলেরই সমান দায়িত্ব রযেছে। সকল প্রাণের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণে যত্নশীল হতে হবে।’ শিক্ষার্থী জিসান আহমেদ বলেন, ‘প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণের মধ্যে মানুষ মাত্র একটি প্রাণ। এাছাড়াও পৃথিবীতে কোটি কোটি প্রাণ রয়েছে যা মানুষের জীবন রক্ষায় সহযোগিতা করে। প্রত্যেকটি প্রাণের টিকে থাকার পরিবেশ আমাদেরই তৈরি করতে হবে।’
রমেলা বেগম বলেন, ‘প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণেরই আলাদা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। আমাদের চারপাশে পতিত জমিতে নানা ধরনের উদ্ভিদ জন্মে। আমরা এগুলোকে আগাছা মনে করি। আসলে আগাছা বলে কিছু নেই। সকল উদ্ভিদই কোন না কোনভাবে মানুষের উপকারে লাগে। মাটির উপরে এবং নিচে উভয় স্থানেই অসংখ্য প্রাণ রয়েছে, যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। কিন্তু জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার, বিষ প্রয়োগ করে নির্বিচারে আমরা সেই প্রাণগুলো ধ্বংস করে ফেলছি। প্রকৃতির প্রাণ সমূহের কোন একটির যদি ঘাটতি থাকে তাহলে পরিবেশের কোন একটি জায়গায় এর প্রভাব ফেলবে। কেননা,প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণই সমান গুরুত্বপূর্ণ।’
এর আগে বারসিক কর্মকর্তা শাহীনুর রহামানের ধারণাপত্র পাঠের আলোকে বারসিক কর্মকর্তা শিমুল কুমার বিশ^াস আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণই একটি আন্তঃনির্ভরশীল সম্পর্কের মধ্য দিয়ে মানুষ ও পরিবেশের উপকার করে থাকে। এই আন্তঃনির্ভরশীল সম্পর্কের কারনেই পৃথিবী টিকে আছে। কাজেই আন্তঃনির্ভরশীল প্রাণ বৈচিত্র্যময় প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
উল্লেখ্য, অংশগ্রহণকারীগণ একটি পতিত জায়গা পরিদর্শন করে খসখসা, ডুমরা, অজাতকচু, কেশুরজা, হাতিশুড়া , বিশজারণ, ঢেঁকিশাক, ছিটকী, ভেন্না, কানাইডগা, পিপল, টেকা খারকুন, দুধ কচু, ভাটি, বিলাই এচড়া, গীমা, নুনকুটে, চুতরা, পাথরকুচি, দূর্ব্বা, চেরচেরী, গইচা, কৈটুরা, বৈথা, ওলটকম্বল, কালা কচু, নাকফুল, দন্ডকোলস, বেরাটি, তিত বেগুন, লাল বিষকাটালী, সাদা ফুল, কলমী, বড় কলমী, খেতা শাক, খারকুন, গন্ধবাদাইল, নেটাপেটা শাক, জল হেচি, বউটুনী, গোড়া হেচি, ফুল হেচি, আগড়া, ঘাওপাতা, তেলাকুচ পাতা, ভাদাইল, চিনিগুড়া, কাঁটাখইুরা ৪৮টি আপনজ¦লা উদ্ভিদ চিহ্নিত করেন এবং এগুলো সংরক্ষণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।