![স্বপ্নের বাঁশ বাগান করতে হাবাদা-১ এর আর কোন বাধা নেই](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2016/02/ha.jpg)
স্বপ্নের বাঁশ বাগান করতে হাবাদা-১ এর আর কোন বাধা নেই
নেত্রকোনা থেকে হেপী রায়
ছোট ছোট বালু কণা, বিন্দু বিন্দু জল,
গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল।
বিন্দু বিন্দু জলকণা নিয়ে যেমন মহাসগরের সৃষ্টি হয় তেমনি অল্প অল্প করে সঞ্চয় করা টাকা একদিন এমন একটা পরিমাণ তৈরি করে, যা দিয়ে মনের ভিতর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব হয়। দারিদ্রতা যেখানে মানুষের নিত্যসঙ্গী সেখানে ইচ্ছাশক্তি, মনোবল আর ঐক্যের এক মিলিত রূপই হাবাদা (হাত, বাঁশ, দা)-১ সংগঠন। আটপাড়া উপজেলার স্বরমশিয়া ইউনিয়নের রামজীবনপুর গ্রামে ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে ২৫ জন কুটির শিল্পী নিয়ে এই সংগঠনটি গড়ে উঠে। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ৩৮জন। মূলত বাঁশবেতের বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করায় হাবাদা-১ সংগঠনের সদস্যদের মূল জীবিকা।
হাবাদা- শব্দটি ভাঙলে হাত, বাঁশ ও দা আসে। সুতরাং এ সংগঠনটি তৈরি করার পেছনে তাদের একটি উদ্যেশ্য ছিল যে তারা একদিন একটি বাঁশের ঝাড় তৈরি করবে যাতে করে সেখান থেকে তারা বাঁশ সংগ্রহ করে কুটির শিল্পের কাজ করতে পারেন। সে উদ্যেশ্যকে সামনে রেখে সদস্যরা নিজ উদ্যোগে সঞ্চয় কার্যক্রম শুরু করেন। প্রত্যেক সদস্য মাসিক ২০ (বিশ) টাকা করে সঞ্চয় করতেন। সঞ্চয়কৃত টাকা জমা রাখতেন সংগঠনের ক্যাশিয়ারের নিকট। ২০০৮ সালে তারা গ্রামীণ ব্যাংক এর অভয়পাশা শাখায় ‘হাবাদা-১ কুটির শিল্পী সংগঠন” নামে একটি যৌথ হিসাব চালু করেন, যা তিনজনের স্বাক্ষরের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। চলতি মাসে তারা এই হিসাবে যে টাকা জমেছিল তা সংগ্রহ করে রামজীবনপুর গ্রামে এক লাখ টাকা দিয়ে ১০ শতাংশ জায়গা কিনেছে। এই জায়গায় তারা বাঁশের ঝাড় (বাগান) তৈরি করবেন বলে জানান। যাদের বাড়িতে বাঁশ আছে তারা প্রত্যেকেই এর কেরুল (বাঁশের চারা) এনে রোপণ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী মাসিক সভায় সিদ্ধান্ত নিবেন যে এই ঝাড় কিভাবে পরিচালিত হবে।
জমি কেনার টাকা প্রদানের পর সকল সদস্য আনন্দে মেতে উঠে। গান, নিজেদের মতো করে নাচ গান করে তারা তাদের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। কেননা তারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করার পথে। বাঁশঝাড় গড়ে তোলার পর বাঁশবেতের কুটির শিল্পের জন্য তাদেরকে বাইরে থেকে আর উপকরণ সংগ্রহ করতে হবে না!
উল্লেখ্য যে, সংগঠনটি গড়ে তোলার পর সদস্যরা কুটিরশিল্পের কাজের পাশাপাশি সবজি চাষ, হাঁস মুরগি ও ছাগল পালন ইত্যাদি কার্যক্রম শুরু করে নিজেদের পরিবারের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনে। নিজেদের আয় যখন বাড়তে থাকে তখন ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার প্রতিও তারা গুরুত্ব দেয়। কুটির শিল্পের কাজকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য সদস্যরা বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে তাদের পণ্য বিক্রি, অন্য গ্রামের নারীদের কাজ শেখানো, হাবাদা-২ নামে আরেকটি সংগঠন গড়ে তোলা, কুটির শিল্পের সামগ্রী প্রদর্শনসহ বিভিন্ন কাজ করেছে। এর পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন কাজ যেমন বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, নারী নির্যাতন বন্ধ করা, বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পরিষেবা আদায়, নিজ গ্রাম ও অন্যান্য গ্রামের মানুষকে তথ্য ও উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা ইত্যাদি নিয়মিতই করে যাচ্ছে।