প্রান্তিক মানুষের জন্য টেকসই কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্তি ও তা বাস্তবায়নের দাবি

প্রেসবিজ্ঞপ্তি
রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহার ও অঙ্গীকারে এবং নির্বাচন উত্তর কার্যক্রমে প্রান্তিক মানুষের জন্য কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্তি ও বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরার দাবি জানিয়েছেন প্রান্তিক মানুষের প্রতিনিধিরা। আজ ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ রোজ বৃহস্পতিবার, সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া (ভিআইপি) সম্মেলন কক্ষে বারসিক ও ঢাকা কলিং প্রকল্পের উদ্যোগে বস্তিবাসীর অধিকার সুরক্ষা কমিটির (বিওএসসি) সভানেত্রী হোসনে আরা বেগম রাফেজার সভাপতিত্বে ও খন্দকার রেকেকা সান-ইয়াত এর সঞ্চালনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নারী ও শিশুসহ সকলের সুরক্ষায় স্মার্ট এবং টেকসই নগরায়ন গড়ার লক্ষ্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে পরিবেশবান্ধব কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রস্তাবিত সুপারিশসমূহকে রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহার ও অঙ্গীকারে অন্তর্ভুক্তির জন্য এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।


সংবাদ সম্মেলনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ধারণাপত্র তুলে ধরেন শাহিনুর আক্তার। ধারণাপত্রের উপর সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ হিসেবে মতামত ব্যক্ত করেন বিশিষ্ট গবেষক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় (বুয়েট) এর সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও বিশিষ্ট পরিবেশবিদ প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান ও বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ লেলিন চৌধুরী। সংবাদ সমে¥লনের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বারসিক’র প্রজেক্ট ম্যানেজার ফেরদৌস আহমেদ এবং প্রকল্প সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন ডিএসকের কনসোর্ডিয়াম কোর্ডিনেটর মো: রকিবুল ইসলাম। এসময় প্রান্তিক মানুষদের পক্ষ থেকে মতামত ও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বস্তিবাসী নেত্রী ফাতেমা আক্তার, কাপের প্রজেক্ট ম্যানেজার মাহবুল হক, ইনসাইটস এর নিগার রহমান প্রমূখ।


সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ঢাকা শহরের ৭০ শতাংশ বর্জ্য সংগৃহীত হয়, তাহলে বাকি ৩০ শতাংশ বর্জ্য কোথায় যায়? ভারতের ইন্দোর শহর থেকে ১০০ ভাগ বর্জ্য তারা সংগ্রহ ও পৃথকীকরণ করতে পারে, যা একটি দারুণ উদাহরণ। আমরা আমাদের বর্জ্যগুলোকে কাজে লাগাতে পারি। বর্জ্য থেকে জৈব সার উৎপাদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের কৃষি জমিতে জৈব উপাদানের পরিমাণ ১ শতাংশের নিচে নেমে গিয়েছে, এটি আমাদের জন্য মারাত্মক উদ্বেগের বিষয়। কৃষি জমির উর্বরতা ফিরিয়ে আনার জন্য কৃষি জমিতে জৈব উপাদান ফিরিয়ে দেয়ার কোন বিকল্প নেই। যা আমরা খুব সহজেই বর্জ্য থেকে সার উৎপাদনের মাধ্যমে সমাধান করতে পারি।
বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ লেলিন চৌধুরী বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দল ও সরকারগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় প্রান্তিতক জনগোষ্ঠীর কথা খুবই বিবেচনায় নেয়। ঢাকা শহরের দূষণের দিকে থেকে পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ জায়গা দখল করে আছে আর এর অন্যতম ভুক্তভোগী প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। ঢাকা শহরের যেকোন পর্যায়ের নাগরিকরা যে পরিবেশগত সমস্যায় ভুগে তার বর্ণনাতীত। জনস্বাস্থ্যেও দিক থেকে ঢাকা শহরের প্রান্তিক মানুষেরা সবচেয়ে বেশি প্রান্তিক।


প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান বলেন, সামনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো, স্বতন্ত্র পার্থীদের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, একই ভাবে দায়িত্ব রয়েছে নাগরিকদেরও। তিনি বলেন, দেশে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ সালে হয়েছে কিন্তু কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা হলো ২০২১ সালে। দেশের পরিবেশ বিষয়ে সরকারগুলো কতটা আন্তরিক তা এ থেকেই বুঝা যায়। তিনি আরও বলেন, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকার আরও উদ্যোগী হবেন এবং রাজনৈতিকদলগুলো নির্বাচন উত্তর তা বাস্তবায়ন করবেন এটাই প্রত্যাশা।
সংবাদ সমে¥লনে নগরের দরিদ্র যুবাদের পক্ষ থেকে শাহিনুর আক্তার বলেন, আমরা সবচেয়ে প্রান্তিক এ শহরের বস্তিবাসী মানুষ যারা নিজেদের আত্মপরিচয় থেকেও বঞ্চিত। আমাদের না আছে থাকার জায়গা আর না আছে আমাদের সুস্থ এক জীবনের আশা । প্রতিবার সরকার আসে আর সরকার যায় কিন্ত ু আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। আমাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বস্তিতে আর এই জীবন একটি অভিশপ্ত জীবন। একটি স্মার্ট ও জলবায়ু সহিষ্ণু নগরে একটি টেকসই কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দাবিতে আমরা বছরের পর বছর ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। ঢাকা কলিং প্রকল্প আমাদের ভাগ্য পরিবর্তনের একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।


বস্তিবাসী নেত্রী হোসনে আরা রাফেজা বলেন, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে নগরে রোগ শোক ও সংকট লেগেই থাকে। আর এই অব্যবস্থাপনার জন্য কেউ কোন দায় নেয় না। আমরা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিল থেকে একদম মন্ত্রনালয় পর্যন্ত গেছি কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা চাই যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন তারা আমাদের প্রান্তিক মানুষের কথাগুলো তাদের ইলেকশন মেনুফেস্টুতে ও অঙ্গীকারে লিপিবদ্ধ করবেন ও তার নির্বাচনের পর মনে রেখে তা বাস্তবায়ন করবেন।


সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, রাজধানী ঢাকার প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে প্রায় ২৩,২৩৪ জন এবং বিশেষজ্ঞদের মতে ২০৩০ সাল নাগাদ ঢাকা হবে বিশে^র ষষ্ঠ বৃহত্তম মেগাসিটি। কিন্তু বিশ্বের বসবাস অনুপযোগী নগরের তালিকায় ঢাকা অন্যতম। যার অন্যতম কারণ নগরীর বর্জ্য অব্যবস্থাপনা। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন তাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা ব্যবহার করে প্রতিদিন উৎপাদিত বর্জ্যরে প্রায় ৭০ শতাংশ সংগ্রহ করতে পারে। অন্যদিকে, নগরে যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা অবশিষ্ট অসংগৃহীত বর্জ্য নগরীর বাতাস, ভূ-উপরিভাগ ও ভূ-গর্ভস্থ পানি, এবং মাটিকে যেমন দূষিত করছে, তেমনি বৃদ্ধি করছে নগরবাসীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং চিকিৎসা খরচ। বিশেষ করে, বয়োবৃদ্ধ ও শিশুদের ক্ষেত্রে শ^াসতন্ত্রীয় রোগ, হৃদরোগ, ডায়রিয়া, এলার্জিসহ নানা ধরনের চর্মরোগ ও অপুষ্টিজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায় যা শিশুদেরকে খর্বাকৃতির ও কৃশকায় করছে। অন্যদিকে গর্ভবতী মায়েরাও মুখোমুখি হচ্ছেন মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির যা তাদের গর্ভের শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।


আমিনবাজার ও মাতুয়াইল ভাগাড় অনেক আগেই তার সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা অতিক্রম করেছে। ফলে অনিয়ন্ত্রিত খোলা অবস্থায় পড়ে থাকা এই বর্জ্যরে পাহাড় নগরের পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্যের জন্য সৃষ্টি করছে মারাত্মক ঝুঁকি, যার মূল ভুক্তভোগী হচ্ছে নগরের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নারী ও শিশুসহ লিঙ্গ বৈচিত্র্য জনগোষ্ঠী। সেই সাথে এই দুর্বল কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির ফলে মিথেন জাতীয় জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী গ্যাসের নির্গমন বৃদ্ধি পেয়ে সামগ্রিকভাবে জীববৈচিত্র্যের জন্য সৃষ্টি করছে চরম বিপর্যয়।

happy wheels 2

Comments