কৃষকের জমি থেকে সরকারি দামে সরাসরি ধান ক্রয় করা হোক
ঢাকা থেকে ফেরদৌস আহমেদ
করোনাকালে দেশ ও দুনিয়া লকডাউন হলেও থেমে নেই কৃষকের কাজ। দেশের খাদ্য উৎপাদনের মূল চালিকাশক্তি দেশের কৃষকসমাজ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তুলছেন বোরো মওসুমের ধান। কিন্তু হাওরসহ দেশের গ্রামীণ অঞ্চলে ন্যায্যদামে বিক্রি করতে পারছেন না কষ্টের ফসল। চলতি বোরো মওসুমে ৬ লাখ মেট্রিক টন ধান, সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিন টন আতপ ও সেদ্ধ চাল এবং ৭৫ হাজার মেট্রিক টন গম কিনছে সরকার। সরকারিভাবে প্রতি মণ ধানের মূল্য ১০৪০ টাকা। কিন্তু গ্রাামাঞ্চলে অনেক কৃষককে এবারো মাত্র ৬০০ টাকায় ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে কৃষকের চাষের খরচই ওঠছে না। বৃষ্টি, পরিবহন ও স্থান সংকটের কারণে কৃষক ধান শুকাতে পারছেন না। করোনাকালের স্বাস্থ্যবিধিকে বিবেচনা করে কৃষকের জমি থেকে সরকারি দামে সরাসরি ধান কেনা হলে বাঁচবে কৃষক, বাঁচবে দেশ, নিশ্চিত হবে খাদ্য নিরাপত্তা। বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা বারসিক ও পরিবেশ সংগঠন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ১২ মে ‘ধানের ন্যায্যমূল্য ও কৃষকের প্রত্যাশা’ এক অনলাইন সংলাপের আয়োজন করে। উক্ত সংলাপে সাতক্ষীরার আলোচনা করেন শ্যামনগরের কৃষক দিলীপ তরফদার ও রাজশাহীর কৃষক প্রতিনিধি রায়হান জুয়েল, পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির লাকি আক্তার, কৃষিবিদ এবিএম তৌহিদুল আলম, গবেষক পাভেল পার্থ, নৃবিজ্ঞানী সৈয়দ আলী বিশ্বাস ও বারসিক রাজশাহী অঞ্চলের সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম। অনলাইন সংলাপটি সঞ্চালন করেন বারসিকের নগরদারিদ্র্য গবেষক ও পরিবেশবার্তার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল।
উক্ত আলোচনায় বক্তারা নিন্মলিখিত প্রস্তাব তুলে ধরেন:
লটারি পদ্ধতি নয়, সরকারিদামে সকল কৃষকের জমি থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করতে হবে।
সরকারিভাবে ধানক্রয়ের সীমা বাড়াতে হবে।
ধান মজুত ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য স্থানীয় বিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের ভবন সাময়িকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
গ্রামের কোনো গৃহস্থ পরিবার বা কৃষকের গোলা ভাড়া নিয়েও আপদকালীন ধান মজুত করা যেতে পারে।
ধানের মতোই কৃষিজ অন্যান্য ফসল, মৎস্য, পোল্ট্রি, প্রাণিসম্পদের ক্ষেত্রেও সরকারিভাবে ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করে মাঠপর্যায়ে এর সুফল নিশ্চিত করতে হবে।
স্থানীয়ভাবে ধানকেনাবেচার বিষয়টি সমন্বয় ও তদারকির জন্য স্থানীয় সরকার, স্থানীয় কৃষক সংগঠন, যুব প্রতিনিধি, গণমাধ্যম, প্রশাসন, কৃষি ও খাদ্য বিভাগের প্রতিনিধিসহ একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে।
ধানসহ ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনার প্রস্তুতি নিতে হবে।