অদ্ভুত সুন্দর অপরাজিতা!
সাতক্ষীরা থেকে সোনিয়া আফরোজ:
অপরাজিতা! কি অসাধারণ সুন্দর এক নাম। আর নামের মতই তার সৌন্দর্য। সে যেন সকলকে হার মানিয়ে দেয় তার রূপ আর সুন্দরের ছটায়। যেকোন সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ এই ফুলকে ভালবাসে আর বাড়ির শোভাবর্ধনেও অপরাজিতা ফুল লাগিয়ে থাকেন। কখনো কখনো অপরাজিতা ঝোপঝাড়ে বুনো ফুল হিসেবে ফোটে আবার কখনো অনেক যত্নে শোভা পায় কারও বাড়ির আঙিনায়। সাদা ও বেগুনী রঙের মিশ্রণ এই ফুলকে বিশেষ বৈশিষ্টমন্ডিত করেছে। এর সৌন্দর্য দেখে থমকে দাঁড়ায় সকলে আর নিমিষেই চোখ ধাঁধিয়ে যায় সবার।
অপরাজিতা ফুলের পুরো অংশই নীল বর্ণের হওয়ায় এটিকে অনেকে নীলকণ্ঠ নামে অভিহিত করে থাকেন। তবে অপরাজিতা সাদা, হালকা নীল ও বেগুনী রঙের হয়ে থাকে। সাধারণত নীল অপরাজিতা বেশি দেখা যায়। অপরাজিতা বহুবর্ষজীবী গুল্ম প্রকৃতির একটি উদ্ভিদ। এর পাতা অনেকটা উপবৃত্তাকার। পাঁচ-সাতটি পাতা একটি ডালে সারিবদ্ধভাবে থাকে। ফুলে অনেক সময় একটি পাঁপড়ি আবার কখনো কখনো দুইটি পাঁপড়িও থাকে।
অপরাজিতার পাঁপড়ি গাঢ় নীল, সাদা ও বেগুনী প্রভৃতি রঙের হয়ে থাকে। বীজ অনেকটা মটরের মতো হওয়ায় এর নামকরণ করা হয়েছে Butterfly Pea। সাধারণত জুন-মার্চ মাসে অপরাজিতা গাছে ফুল ও ফল আসে। বীজের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়ে থাকে।
অপরাজিতা বাংলাদেশের সমগ্র জেলায় আবাদী বা বুনো ফুল হিসেবে পরিচিত। এছাড়া ভারতে ও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোতেও এই ফুল দেখতে পাওয়া যায়। অপরাজিতা সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ভেষজ চিকিৎসারও উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলার শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের বসিন্দা মো. আফায উদ্দীন বলেন, “অপরাজিতার মূল বা শেকড়ের রস এক চা-চামচ ও দেড় কাপ পরিমাণ গরম পানিতে একসাথে মিশিয়ে গড়গড়া করলে কাশি ভালো হয়ে যায়। এছাড়া অপরাজিতার পাতা জ্বর ও পেটের ব্যথায় ভালো কাজে দেয়।”
উদ্ভিদ ও প্রাণি জ্ঞানকোষের তথ্য মতে, ‘অপরাজিতার বৈজ্ঞানিক নাম Clitoria ternatea। অপরাজিতার মূল মূত্রবর্ধকরূপে কাজ করে। এর পাতার রস লবণের সাথে মিশিয়ে কানে দিলে কানের ব্যথা অনেকটা উপশম হয়। এর মূল, কান্ড এবং ফুল সাপের কামড় ও পোকার হুল ফোটানোর বিষ কাটাতে ব্যবহৃত হয়।’
সবুজ পাতার মাঝে নীল ফুল যেন তার সৌন্দর্য বিলিয়ে দিচ্ছে। অপরাজিতা ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মানুষ এটিকে বেলকুনিতে, বারান্দায়, ছাদে ও গেটে লাগিয়ে থাকেন। নীল রঙ পছন্দকারীদের কাছে নীল অপরাজিতার গুরুত্ব ও মহাত্ম অনেক বেশি। এই ফুলের কোন সুবাস না থাকলেও তার বাহারী রঙ যে কাউকেই খুব সহজেই মুগ্ধ করে।