ধানের সাথে আমাদের সংষ্কৃতি ও আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে

সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান

জলবায়ু সহনশীল ও স্থায়িত্বশীল কৃষি চর্চাায় উদ্বুদ্ধকরণ এলাকা উপযোগী ধানের জাত নির্বাচনের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে স্থানীয় জাতের ধানচাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বারসিক সিংগাইর কর্ম এলাকার বায়রা, বলধারা, তালেবপুর, জামশশা ৪টি ইউনিয়েনের উত্তর গোলাইডাঙ্গা, খোলাপাড়া, গোলাই,বায়রা, নয়াবাড়ি আদর্শগ্রাম নয়াবাড়ি, শিবপুর, মজলিশপুর, জামালপুরের গ্রামের কৃষক কৃষাণিদের নিয়ে বোরো মৌসুমে কৃষক নিয়ন্ত্রিত ধান জাত গবেষণা কার্যক্রমের উপর এক অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্প্রতি।

উক্ত অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরে সহায়তা করেন বারসিক কর্মকর্তা, বিউটি সরকার, শারমিন আক্তার, আছিয়া আক্তার এবং সঞ্জিতা কির্তুনিয়া। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়করি বিমল রায়, শিমুল কুমার বিশ^াস, মোঃ মাসুদুর রহমান, গাজী শাহাদাত হোসেন বাদল, রিনা আক্তার ও অনন্যা আক্তার। অংশগ্রহনকারিগণ অভিজ্ঞ কৃষক ইব্রাহিম মিয়ার নেতৃত্বে বারসিকে’র সহায়তায় নয়াবাড়ি কৃষক কৃষাণি সংগঠন কর্তৃক পরিচালিত জাত গবেষণা কার্যক্রম প্লটে চাষকৃত ধানজাতগুলো সরজমিনে পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শন শেষে ইব্রাহিম মিয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সাভায় বারসিক আঞ্চলিক সন্বযকারি বিমল রায় কৃষক নিয়ন্ত্রিত ধানজাত গবেষণা কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য অংশগ্রহণকারী কৃষদের মধ্যে উপস্থাপন করে জানান, জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষির সাম্প্রতিক প্রেক্ষিত বিবেচনায় কৃষক ও কৃষি প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা এবং কৃষিতে কৃষকের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ‘কৃষক নিয়ন্ত্রিত কৌশল ‘র’ মাধ্যমে কৃষকের নিজস্ব প্রচেষ্ঠাকে সহযোগিতা করা বারসিক’র জাতগবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পরবর্তীতে বারসিক কর্মকর্তা শিমুল বিশ^াস বোরো মৌসুমে পরিচালিত জাত গবেষণা কার্যক্রম এর পক্রিয়া অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তুলে ধরেন। তিনি জানান ১০ শতাংশ জমির মধ্যে চার শতাংশ জমিতে মাদার ট্রায়াল করা হয়। মাদার ট্রায়াল জাত সংখ্যা ১৫টি যথাক্রমে ওয়ারেজ, জুনটি, মকবুল, বাশমতি (পাকিস্তানি), সোনালী পাইজাম, ব্রী-৮৪, টিয়া, রয়েল, যুবরাজ, কালামানিক, এম-২৫২, সুশীল, এলভি, ময়নাটিয়া, স্বর্ণলতা এবং ৬ শতাংশ জমিতে বাশমতি (পাকিস্তানি ও স্বর্ণলতা বর্ধন প্ল্ট করা হয়।) তিনি অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে আরো জানান, ৪টি ধাপে জাত গবেষণা পরিচালিত হয়। ১. জাত সম্পর্কিত কৃষকের চাহিদা নিরূপণ (প্রত্যাশিত গুণাবলী, কৃষকের প্রত্যাশিত জাত সংগ্রহ এবং পাশপোর্ট ডাটা তৈরি ২. স্থানীয় বীজের সন্ধান ও সংগ্রহ ৩. সংগৃহীত জাত পরীক্ষণের আওতায় আনা মাদার ট্রায়াল- প্রতিটি প্লটের দৈর্ঘ্য ২.৫ মিটার ( ৮ ফুট), প্রস্থ ২.৫ (৮ ফুট), ২টি করে চারা রোপণ করতে হবে। চারা থেকে চারার দূরত্ব ১৫ সেন্টিমিটার (৬ইঞ্চি) এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫ সেন্টিমিটার (১০ ইঞ্চি), সেই সাথে নিয়মিত পরিচর্যা ও সাপ্তাহিক তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। জাত নির্বাচনের পর কৃষক তার নিজস্ব জমিতে বেবী ট্রায়ল করবে। ৪. নির্বাচিত জাতসমুহের বিস্তার বা সম্প্রসারণ করা।

অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরে আসা কৃষক কৃষাণিদের উদ্দেশ্য জাত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনাকারি কৃষক ইব্রাহিম মিয়া বলেন, ‘সকল জাতের ধানগুলো কর্তনের পরে ধানগুলো সংগ্রহ করে ধান ও খরের ভেজা ও শুকনা অবস্থায় দুটি পরিমাপ করা হয়। এর মধ্যে থেকে শতাংশ প্রতি ফলন বের করে কৃষকদের মাঝে ছোট আকারে চাষ করার জন্য বিতরণ করা হয়ে থাকে। তাছাড়া ধানের রোপণ থেকে শুরু করে প্রতি সপ্তাহের তথ্য সংগ্রহ করা, পোকা মাকড়ের আক্রমণ ও ধানের গোছা ও শীষের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।’

আলোচনা শেষে অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরে আসা কৃষক মোঃ লুৎফর রহমান তার মতামত ব্যক্ত করেন তিনি বলেন, ‘কৃষক নিয়ন্ত্রিত জাত গবেষণা কার্যক্রম আমার ভালো লেগেছে। নিজ নিজ এলাকার আবহাওয়ার সাথে উপযোগী জাত চাষ করতে হলে স্থানীয় জাতের জাত চাষ বৃদ্ধি করতে হবে। নিজেদের জাত নিজেদের তৈরি করতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাজার থেকে আমার যে বীজ ক্রয় করে চাষ করি তা থেকে কৃষক প্রতারিত হয়। কৃষক কোম্পানির নিকট থেকে বের হতে হলে স্থানীয় জাতের বীজ নিজেদের সংরক্ষণ করতে হবে।’ কৃষাণি সুফিয়া বেগম বলেন, ‘ধানের সাথে আমাদের সংষ্কৃতি ও আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে। মুড়ি, চিড়া ও খই দিয়ে আমরা আমাদের আত্মীয়স্বজনদের ও মেহমানদারী করে থাকি। এখানে এসে দেখলাম মুড়ি ও চিড়া তৈরি করার জন্য কয়েকটি জাতের ধান রেেয়ছে। আমার এই ধান চাষ করে নিজেরা নিরাপদ মুড়ি তৈরি করতে পারবো এবং এই ধানগুলো আত্মীয়স্বজনদের সাথে বিনিময় করে আমাদের দেশীয় জাতে ধানের সংষ্কৃতি রক্ষা করতে পারবো।’

উল্লেখ্য উক্ত অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরে ২৬ জন কৃষক কৃষাণিগণ বাশমতি, যুবরাজ,এম ২৫২ স্বর্ণলতা, সুশীল, টিয়া ব্রী-৮৪ এবং রয়েলসহ ৮টি জাতে ধান চাষ করার জন্য পছন্দ করেন।

happy wheels 2

Comments