ব্যক্তি ও সমন্বিত উদ্যোগে কলমাকান্দায় বৃক্ষরোপণ
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2020/07/106984301_2885867288189197_9113474919975472867_n.jpg)
কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে আল্পনা নাফাক ও মুন্না রংদী:
গাছ আমাদের প্রিয় বন্ধু, যাকে ছাড়া আমাদের এক মুহূর্ত চলা সম্ভব নয়। গাছ ফুল দেয়, ফল দেয়, কাঠ ও লাকড়ি দেয়। আর দেয় আমাদের জীবনধারণের জন্য প্রিয় অক্সিজেন। গাছ আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। পরিবেশ থেকে বিষাক্ত কার্বনডাই অক্সাইড শুষে নিয়ে পরিবেশ নির্মল রাখে এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কার্বন নিঃসরণে বাধা দেয়। গাছের এতসব উপকারী গুণাবলীর জন্য আজ গাছ হয়ে উঠেছে মানুষের পরম বন্ধু। দিন দিন মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছে এর উপকারিতা। তাই প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও বর্ষাাকালে আমাদের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী নিজেদের প্রয়োজনীয়তা ও সামর্থ্য অনুযায়ী বৃক্ষরোপণ করেছে। কলমাকান্দা উপজেলায় বাঙালিসহ বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস। অন্যান্য কাজের পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই তারা নিজ বাড়ির আঙিনা ও পতিত জায়গায় বৃক্ষরোপণ শুরু করেছেন। ফলজ, বনজ, ঔষধি ও কাঠ জাতীয় গাছের চারা সবই রোপণ করছেন তাঁরা। তাদের রোপণকৃত গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, জাম্বুড়া, কমলা, পেঁপে, নারিকেল, মাল্টা, বিলম্বি, মেহগনি, কলা, বদ্দিরাজ, সুপারি, সাজনা, ডালিম, অর্জুন, আমলকি, কৃষ্ণচূড়া ও লেবু ইত্যাদি। এই সমন্বিত উদ্যোগে তাঁরা ২২ ধরণের প্রায় ১৩,০৭৬টি গাছের চারা বিভিন্ন গ্রামে রোপণ করেছেন।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2020/07/107144586_1236638266734712_8123914748039588328_n.jpg)
যে মোট ২৩টি গ্রাম এসব গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে সেগুলো হলো- নলছাপড়া, ভেলুয়াতলী, পাঁচকাঠা, উত্তর লেঙ্গুরা, তারানগর, গৌরীপুর, চৈতানগর, গোড়াগাঁও, ফুলবাড়ি, কাওবাড়ি, শিবপুর, খারনৈ, বামনগাঁও, নয়াপাড়া, কচুগড়া, দমদমা, সুন্দরীঘাট, কুড়াখাল, বগাডুবি, রানীগাঁও, মধুকুঁড়া, আনচেংড়ি ও বনবেড়া। কলমাকান্দা উপজেলার নলছাপড়া গ্রামে বহুত্ববাদী সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রে ৩০টি মেহগনি গাছের চারা রোপণ করার মাধ্যমে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের সূচনা করে। অন্যদিকে উত্তর লেঙ্গুরা গ্রামের হাজং সম্প্রদায়ের ১৮জন সদস্য তাঁদের শ্মশানের চারপাশে প্রায় ৪০ কাঠা জমিতে ৫৬০০টি গাছের চারা রোপণ করে। গত পাঁচ বছর আগে একইভাবে গাছ রোপণ করেছিলেন, তবে পরিমাণে অনেক কম ছিল। এবছর এগুলো মাত্র এক লাখ টাকা বিক্রি করতে পেরেছিলেন। এই গাছ বিক্রির টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। নিজেদের অংশ থেকে পুনরায় সকলে মিলে ১০ হাজার টাকা একত্রিত করে এ বছর চারা কিনে রোপণ করেন। প্রথমবার চারা রোপণ করার পর তারা নিজেরাই এর পরিচর্যা ও দেখভাল করেন। আগেরবার মোটামুটিভাবে লাভবান হওয়ায় এবছর তারা আবারও বৃক্ষরোপণ করেন।
খারনৈ গ্রামের সুরুজ মিয়া বেশ কয়েক বছর আগে তাঁর বাড়িতে ৫টি জাম গাছের চারা রোপণ করেছিলেন। গত মৌসুমে প্রতিটি গাছে ফল আসে। তিনি প্রতি গাছ থেকে ৩ হাজার টাকা করে মোট ১৫ হাজার টাকার জাম বিক্রি করেন। গত বছর লাভ হওয়ার কারণে এবছর তিনি নিজ উদ্যোগে ২৫টি জামের চারা তাঁর বাড়িতে লাগিয়েছেন।
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশ এক মহামারীর ছোবলে ভয়ংকর সময় অতিক্রম করছে বিশ্বের সব মানুষ। কিন্তু পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন মানুষ তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চলমান রেখেছেন। একদিকে শস্য ফসল আবাদ, হাঁস-মুরগি পালন অর্থাৎ গ্রামের প্রতিটি মানুষ যে যার পেশায় যুক্ত আছেন তারা সকলেই কর্মব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন। দেশের এই ক্রান্তি লগ্নেও নিজের পরিবেশ রক্ষায় সচেতন মানুষেরা থেমে নেই।
নিজ উদ্যোগ বা সমন্বিত উদ্যোগ যেভাবেই হোক না কেন মানুষ পরিবেশের স্বচ্ছতা তৈরির পাশাপাশি বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছেন। এছাড়া প্রয়োজনের সময় গাছ বিক্রি করে এর অর্থ দিয়ে চাহিদা পূরণ করতে পারছেন। প্রকৃতি প্রেমীরা গাছের গুণাগুন বুঝতে পেরেছেন এবং নিজের আঙিনা সবুজ করার মধ্য দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা থেকে আমাদের পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য এই মহতী উদ্যোগ নিয়েছেন।