চর উপযোগী ফসল চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে
সত্যরঞ্জন সাহা হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর নিম্ন প্লাবন ভূমি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ খরা, অতি বৃষ্টি, বন্যার সাথে তাল মিলিয়ে এখানে ফসল চাষ হয়। প্রাকৃতিকভাবেই বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানি প্রবাহিত মাঠে ঘাটে। মাঠ থেকে বন্যার পানি চলে গেলে পলি মাটিতে কৃষি ফসল বৈচিত্র্য ও প্রচুর ঘাস হয়। জমির ঘাস গরু ছাগল ভেড়াসহ অন্যান্য প্রাণি সম্পদের খাবার। প্রাণি সম্পদের বিষ্ঠা পচিয়ে জৈব সার ও অতিরিক্ত ঘাস জমিতে পচিয়ে সবুজ সার তৈরির ফলে ফসল উৎপাদনে সহায়ক হয়। ভিন্ন ধরনের আবাদ ফসল বৈচিত্র্য বৃদ্ধি ও বীজবৈচিত্র্য সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে। তেমনিভাবে কৃষক প্রাকৃতিক প্রতিকুলতা ও পারিপাশি^ক অবস্থার পেক্ষিতে চাষাবাদে উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকেন। তাঁরা প্রায় হারিয়ে যাওয়া ফসলের মধ্যে কাউন, গুজিতল, তিশি চাষ করছেন। বারসিক এসব বীজ কৃষকের মধ্যে বিতরণ বা সহযোগিতা করে।
এ বিষয়ে হরিরামপুরের বাহিরচর কৃষক গবেষক শহীদ বিশ^াস বলেন, ‘গুজিতিল এলাকায় আর চাষ হয় না, ফলে বীজ হারিয়েছি। মানিকগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে কোথাও গুজি তিলের সন্ধান পায় নাই। অবশেষে বারসিক সহযোগিতায় গুজি তিলের বীজ পাই রাজশাহী থেকে। আমরা যে বীজ হারিয়ে ফেলেছি সেই গুজি তিলের বীজ পেয়েছি ও চাষ করছি। এলাকার কৃষকগণ গুজি তিলের চাষ দেখে নতুনভাবে ৫ জন কৃষক চাষ করছেন। গুজিতিল নদীর তীরসহ যেখানে সেখানে চাষ করা যায়। জমির আগাছা বাছাই করা লাগে না। পোকার আক্রমণ করে না। গুজি তিল চাষে খরচ খুবই কম। গুজি তিলে মৌমাছি পরাগায়ন করে বেশি। ফলে উৎপাদন ও তেলের মান ভালো হয়।’
হরিরামপুর বাহিরচরের কৃষক সুচরণ সরকার বলেন, ‘গ্রামের মানুষের কৃষি জীবিকায়নের প্রধান উৎস ফসল বৈচিত্র্য। আমাদের কাছে বিভিন্ন ধরনের বীজ থাকলে বিভিন্ন ধরনের জমিতে চাষ করে ফসল ফলাতে পারি। আমি এবছর গুজি তিল চাষ করেছি। আগামীতে আরো বেশি পরিমাণে চাষ করব ও কৃষক পর্যায়ে গুজি তিল চাষাবাদে সম্পসারণ করব। বারসিক জৈব উপায়ে চাষাবাদ ও বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদে উদ্বুদ্ধ করে সহযোগিতা করছে। ফলে কৃষকগণ বীজ সংরক্ষণ করে আবাদ করছে। বর্তমানে তিল কাউন চাষ সম্প্রসারণ হচ্ছে বসন্তপুর, এনায়েতপর, সুতালড়ি, কর্মকান্দি এলাকায় চাষ হচ্ছে। ফসলগুলো বপন করা হয় কার্তিক- অগ্রহায়ন মাসে, উঠে চৈত্র- বৈশাখ মাসে।’
হরিরামপুর বাহিরচর অনিতা সরকার বলেন, ‘আবাদ করেই কৃষকদের বীজ সংরক্ষণ করতে হবে। নিজের কাছে বীজ থাকলেই আবাদের নিশ্চয়তা থাকে। বীজ কৃষকের সম্পদ কোনোভাবেই হারানো যাবে না। আমাদের ভুল আমরা বুঝতে পেরেছি। আমরা যে ফসলগুলো চাষ কম হয় সেই ফসল যেমন তিল, কাউন, তিশি, দেশি টমেটু, লাল মুলা, আউশা ডাটা, গুজিতির চাষ করে বীজ সংরক্ষণ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবছর চাষ করে সজীব রাখা ও বীজ সংরক্ষণ করব। দেশীয় এসব ফসল আবাদে সার বিষ লাগে না, ফলে উৎপাদন খরচ কম। এসব খাবার নিরাপদ ও বিভিন্ন ধরনের জমিতে চাষাবাদে সহায়ক। এসব ফসল চাষের মাধ্যমে প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় ও মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।’
তিনি জানান, আমি গোবর সার দিয়ে আবাদের মাটি রক্ষা করে আবাদ করি। আমরা চরাঞ্চালের মাঠে কাউন পরিমাণে কম হলেও বীজ সংরক্ষণ করে আবাদ করছি। কাউন এখন আবার মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠছে। আগের তুলনায় কাউনের চাহিদা বেশি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাউনের পায়েশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কাউন নিরাপদ খাদ্য হওয়ায় গ্রাম ও শহরে বেশ জনপ্রিয় খাবার। তবে এক বছর যে জমিতে কাউন চাষ করা হয়, সেই জমিতে কিছু কাউনের বীজ পড়ে নিজে নিজেই জমিতে আবার কিছু কাউন হয়, ফলে বীজ সহজে হারায় না।
কৃষি ফসল বৈচিত্র্য সবচেয়ে বড় সম্পদ। প্রকৃতির মাটি পানি আলোকে ব্যবহারের জন্য কৃষি বীজবৈচিত্র্য প্রয়োজন। আর বীজবৈচিত্র্য আবাদের মাধ্যমে মানুষসহ সকল প্রাণির খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়ক হয়। দুর্যোগ মোকাবেলায় উদ্যোগ গ্রহনে সহায়ক হয়।