করোনায় প্রবীণ জনগোষ্ঠী

নেত্রকোনা থেকে খাদিজা আক্তার লিটা:

করোনাকালীন সময় নেত্রকোনা সদর এলাকার কিছু এলাকার প্রবীণদের অবস্থার তথ্য নিতে গিয়ে জানা যায়, পরিবারে প্রবীণ ব্যক্তিটি এখন মানসিকভাবে সবচেয়ে স্বস্থির অবস্থানে আছেন। কারণ পরিবারের প্রতিটি সদস্যরা বেশির ভাগ সময়ে পরিবারের বাইরে থাকতে নানান প্রয়োজনের কারণে। পরিবারের আয় করা সদস্যটি চাকুরি বা কাজের প্রয়োজনে বাইরে থাকেন।অনেক পরিবারের নারীরাও নানাকাজে ব্যস্ত থাকেন। এমন পরিবারও আছে জীবিকার তাগিদে সন্তানদের নিয়ে বাইরে বের হতে হয়।কেউ কেউ নিজেদের কাজের কারণে অনেকদিন পরিবারের বাইরে থাকতে হয়। তখন অসহায় প্রবীণ ব্যক্তিটিকে এক ধরনের নিঃসঙ্গতা ও হতাশার মধ্যে সময় কাটাতে হয়।

কিন্তু করোনাকালীন সময়ের চিত্র একেবারে বদলে গেছে। নেত্রকোনার আমতলা, সিংহের বাংলা ও সদর নেত্রকোনার বেশ কিছু এলাকায় করোনার কারণে অনেকে বাড়িতে অবস্থান করছেন।এতে করে সবাই মিলে প্রবীণ ব্যক্তিদের দেখাশোনা করার সময় পাচ্ছেন। বিশেষ করে প্রবীণ ব্যক্তিরা অসুস্থ হলে সবাই মিলে তার দেখাশোনা করা হয়।

আমরা জানি প্রবীণ ব্যক্তিরা সবার সাথে সময় কাটাতে চান। তাঁরা তাদের জীবনের গল্প ও অভিজ্ঞতা সবার সাথে সহভাগিতা করতে পছন্দ করেন। তাই করোনাকালীন সময়ে যেহেতু পরিবারের প্রায় সব সদস্যই বাড়িতে অবস্থান করেন এই কারণে প্রবীণ ব্যক্তিরা তাদের সাথে গল্প-গুজব করতে পারেন। এভাবে  সন্তানরা তার বাবা মা, দাদা দাদীর সাথে তার আগামী পরিকল্পনা জানাতে পারেন। কিংবা তাদের নানান সমস্যাগুলো প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করতে পারেন। এভাবে প্রবীণ ও নবীনদের মধ্যে যে দূরত্ব ছিলো সেটা কাটাতে পারেন; নতুন একটি সম্পর্ক তৈরি হয়।

এ সর্ম্পকে রেলকলোনীর ‘সবুজের সন্ধানে কিশোরী’ গ্রুপের সভা প্রধান স্বর্ণা রায় বলেন, ‘আমাদের এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিগণ হঠাৎ করে যেন  একটু বেশি সুস্থ্ হয়ে পড়েছেন। এ কয়েক মাসে কেউ বড় ধরনের কোন স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়েনি। এর প্রধান কারণ হয়তো তারা সবার সাথে গল্প-গুজব করতে পারেন বলে মানসিক প্রশান্তি পান ।’

প্রবীণ ব্যক্তিগণ নানান শারীরিক সমস্যায় রয়েছেন। অনেকে জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়াবেটিস, বাত, উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগে আক্রান্ত হন। তাদের নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্য বিষয়ক চেক-আপ করতে হয়। কিন্তু করোনার কারণে তাদের বেশির ভাগ ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন না। ফলে তারা একই ধরনের ওষুধ ও স্থানীয় চিকিৎসকের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এই কারণে পরিবারের অন্য সদস্যরা নিয়মিতভাবে প্রবীণদের খোঁজ-খবর নিতে হয় এবং একটু বেশি সচেতন হওয়ার প্রয়োজন পড়ে।

নেত্রকোনায় প্রবীণদের অধিকার আদায়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছে বারসিক সাংস্কৃতিক প্রচারণার মাধ্যমে সমাজে প্রবীণদের প্রতি অসঙ্গতিগুলো সমাজের বিভিন্ন মানুষের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে এই সংগঠনটি। সেই সাথে নবীন ও প্রবীণদের মধ্যে একটি সু-সর্ম্পক স্থাপনের  মধ্য দিয়ে প্রবীণদের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যর প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি বহুত্ববাদী সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছে।

বারসিক এর সহায়তায় সিংহের বাংলার আদি সাংস্কৃতিক সংগঠন, রেলকলোনীর সবুজের সন্ধানে কিশোরী সংগঠন এবং ধলাইপাড়ের কিশোরী সংগঠন নিজেদের এলাকার প্রবীণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মানুষকে সচতেন করার কাজ করছে করোনার শুরু থেকেই।

happy wheels 2