সাম্প্রতিক পোস্ট

বাঁশবেতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন বাদেসুকুন্দিয়া পাড়ার নারীরা

নেত্রকোনা থেকে খাদিজা আক্তার

বাঁশ কাটার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় অর্চনা ও কাঞ্চনী রাণীর। সকালে উঠেই সঞ্চিতা রাণী ব্যস্ত হয়ে যান নেত্রকোনায় অবস্থিত দোকানে জিনিসপত্র দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার। কেউ চালূন, ডালা, কেউবা ধারি, পাখা, পাটি বুনন করেন। এভাবেই শুরু হয় নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলা মৌগাতি ইউনিয়নের মৌগাতি গ্রামের বাদে সুকুন্দিয়া পাড়ার নারীদের। নেত্রকোনা জেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত বাদেসুকুন্দিয়া পাড়া। লোকায়ত জ্ঞান-অভিজ্ঞতা, পরিবেশবান্ধব চর্চায় নারীদের একমাত্র আয়ের প্রধান উৎস বাঁশ ও বেতের কাজ। গ্রামীণ নারীদের হাত ধরেই টিকে থাকা বৈচিত্র্যময় শস্য ফসলের বীজ, ঔষধি জ্ঞান, নকশা ও বয়নশৈলী। এই গ্রামের নারীদের হাতের কাজের মূল্যায়ন সর্বত্র। নারীরা বাড়িতে বসে কাজ করেন সারাদিন, তাদের অবসর নেই। বাঁশ ও বেতের কাজ, ঘর সংসার সামলানো, রান্নার কাজ, শিশুদের স্কুলে পড়ানোসহ সকল কাজের পাশাপাশি সংসারের আয়ের উৎসকে সচল রেখেছেন এই বাদে সুকুন্দিয়া পাড়ার নারীরা। এই পাড়ার ২৫ জন নারীর সারাবছরই কুটির শিল্পের কাজের সাথে যুক্ত থাকেন। এই কাজের সাথে যুক্ত থেকেই তারা সংসারের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে ভূমিকা রাখেন।

case-stduy-from-netrakona
এই প্রসঙ্গে অর্চনা রাণী বলেন, “নিজেরা আয় করি আমরা খরচ করতে পারি। নিজের ইচ্ছায় যা ইচ্ছে কিনতে পারি। আয় করতে পারি বলে আমার সংসারে আমার মূল্য আছে। সন্তানদের পড়াশুনা করাতে পারি। সমাজে আমাদেরকে মুল্যায়ন করে।” তবে বাজারে প্লাস্টিক পণ্য আসার পর থেকে বাঁশ ও বেতের পেশায় কিছুটা ভাটা পড়েছে। তাই তো দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “তবে বাজারে পাস্টিক পণ্য আসায় বিক্রি কমে গেছে।

শুধুমাত্র বাঁশ ও বেতের কাজেই নিজেদের যুক্ত করেননি এই নারীরা। বরং সংসারে আর্থিক সংস্থানের জন্য তারা বসতভিটায় বিভিন্ন শস্য-ফসল আবাদ করেন। জৈব পদ্ধতিতে ফসল আবাদের মাধ্যমে সংসারের জন্য বাড়তি আয় নিশ্চিত করেন তারা। তাই দেখা গেছে, বাঁশবেতের কাজের পাশাপাশি স্থানীয় জাতের বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও চাষ করেন নারীরা। সকল নারীই তাদের বাড়ির সামান্য জায়গাতেই মৌসুমভিত্তিক সবজি চাষ করে পরিবারের সবজি চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করেন। শুধু তাই নয়; এ সবজির মাধ্যমে তারা পুষ্টি চাহিদা পূরণ করনে ঠিক তেমনি সবজির জন্য তারা বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়েছেন। সবজি কেনার টাকা দিয়ে তারা সংসারের অন্য চাহিদা পূরণ করেছেন।

তাই বলা যায়, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা, নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনায় গ্রামীণ নারীদেরর একটি অপরিহার্য ভূমিকা রয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস, দুষণ, ভঙ্গুর পরিস্থিতি গ্রামীণ নারীকে উৎপাদনশীল তৎপরতা থেকে বিচ্যুত করছে, যা নিরাপদ ও সুস্থ পরিবেশের প্রতি হুমকিস্বরূপ। আসুন আমরা গ্রামীণ নারীদের সহায়তা করি, তাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশ, প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষা করার চেষ্টা করি।

happy wheels 2