গাছের চেয়ে বড় উপহার আর দেখি না

রাজশাহী থেকে মো. শহিদুল ইসলাম শহিদ

যেকোন নিমন্ত্রণ বা দাওয়াতে গেলে তিনি অন্যান্য মানুষের মতো প্যাকেট করে খাবার কিংবা অন্যান্য উপহার সামগ্রী নিয়ে যান না! তিনি নিয়ে যান গাছের চারা! নিমন্ত্রণকারীদেরকে তিনি বিভিন্ন গাছের চারা হিসেবে উপহার দিতে ভালোবাসেন এবং এ চারাগুলো রোপণে তাদের সহযোগিতা করেন। আমরা বলছি রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার আলোকছত্র গ্রামের সাবেক নৌবাহিনী মো. আব্দুল মজিদ খানের কথা।

মো. আব্দুল মজিদ খানের বয়স ৫৪ বছর। গাছের প্রতি তার ভালোবাসা ও অনুরাগ অসীম। তিনি নিজে তার বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় প্রজাতির গাছ রোপণ করেন। বাড়িতে গড়ে তোলা বাগানে বর্তমানে রয়েছে ৩০ প্রকার ফুল, ২০ প্রকার ঔষধি, ১৫ প্রকার ফল, ৩ প্রকার বৃক্ষ ছাড়াও ১৫ ধরনের সবজি রয়েছে। এগুলোর পরিচর্যা নিজেই করে থাকেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছের চারা সংগ্রহ করেন এবং নিজেই গাছ থেকে কলম করে থাকেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গাছগুলোই আমার সাথী, আমি বেশির ভাগ সময় তাদের সাথে কাটাই। এরা কোনদিন আমার ক্ষতি করেনি এবং করবেও না।” যেসব গাছ তাঁর বাগানে নেই সেগুলো সংগ্রহ করে  বাগানকে আরও সমৃদ্ধশালী করে রাখতে চান বলে তিনি জানান।
moj.jpg 1
গাছের প্রতি অনুরাগের কারণে তিনি যেকোন দাওয়াতে গেলে দাওয়াতকারীকে গাছের চারা উপহার হিসেবে নিয়ে যান। অন্যদের কাছে এটি অন্যরকম মনে হলেও তিনি তার এ সংস্কৃতি চর্চা করে আসছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সর্বশেষ তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা শহিন ফিলিং স্টেশনের মালিকের ইফতার দাওয়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে হাসনাহেনা, বাগান বিলাস ও কৃঞ্চচুড়ার গাছের তিনটি চারা প্রদান করি ও রোপণে সহায়তা করি।” তিনি আরও বলেন, “গাছ যেহেতু অক্সিজেনের ভান্ডার আর প্রতি মিনিটে এটি আমাদের প্রয়োজন হয় তাই আমি এর চেয়ে বড় উপহার আর দেখি না।”

বৃক্ষপ্রেমী এই মানুষটি বিভিন্ন সামাজিক সেবামূলক কাজও করেন। তাঁর  গ্রামের প্রথম থেকে ৫ম শ্রেণীর ১৪০ শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে নিজের বাড়িতে পড়ান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ছোটবেলায় দেখেছি স্কুলের পড়া তৈরি থাকলে স্কুলে যাওয়ার মজাই আলাদা।  গ্রামের শিক্ষার্থীরা এ সময়টিতে বিদেশি টিভি চ্যানেল দেখে তা থেকে বিরত রাখি।” তিনি আরও বলেন, “লেখাপড়ার পাশাপাশি তাদের কিছু নৈতিক শিক্ষাও দেয়া হয়। সময় অভাবে বর্তমান বন্ধ থালেও পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি।” নিজের পাড়া  ও আশপাশের পানি নিষ্কাশনের জন্য নিজেই ড্রেন পরিষ্কার করেন। পাড়ার কারো বাড়িতে পায়খানা না থাকলে তিনি নিজে গিয়ে বানিয়ে দেন। পাশাপাশি গ্রামের মসজিদের সভাপতি থাকার সময় সবার সহায়তায় মসজিদ পূনঃনির্মাণ করেছেন। বর্তমানে গ্রামের সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটিতে না থাকলেও বিভিন্ন কাজে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা করে যাচ্ছেন। ২০০৮-২০০৯ সালে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়ে উপজেলার শ্রেষ্ঠ সভাপতি হয়েছেন।

moj.jpg 2

তিনি গ্রাম ঘুরে দেখেছেন গ্রামে কিছু বয়স্ক পিতামাতা রয়েছেন যারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তিনি তাদের জন্যও কিছু করে যেতে চান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার  ইচ্ছা আমি আমার গ্রামের বয়স্ক পিতামাতা যারা আছেন তাদের জন্য কিছু করার। যারা অসহায় পিতামাতা রয়েছেন তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, খাবারের নিশ্চয়তা, উপহার হিসেবে কাপড়, লাঠি ও চশমা হাতে ধরিয়ে দেয়ার মত কাজটি করতে চাই।”

ছোটবেলা থেকেই আব্দুল মজিদ খানের স্বপ্ন ছিল সৈনিক হয়ে দেশের জন্য কাজ করা। ইচ্ছা আর আগ্রহ থাকার ফলে তাঁর কলেজ অধ্যক্ষ বেশিদিন কলেজে ধরে রাখতে পারেননি। তাই ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী খুলনার তিতুমীরে যোগদান করেন। ত্রিশ বছর চাকুরি করার কথা থাকলেও গ্রামের সেবা করার জন্য ২১ বছর চাকুরি করে তিনি অবসর নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি ভালো আছেন।

happy wheels 2

Comments