নিরাপদ খাদ্য আমাদের অধিকার

নেত্রকোনা থেকে খাদিজা আক্তার লিটা

‘পৃথিবীতে জনসংখ্যা অত্যধিক হারে বেড়েই চলেছে। এই অধিক জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা মেটাতে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীগণ নিত্য নতুন খাদ্য উৎপাদন প্রযুক্তি ও কৌশল আবিষ্কার করে চলেছেন। নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তির আবিষ্কারের ফলে সারা পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও খাদ্য উৎপাদনও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্য ঘাটতি পূর্বের ন্যায় নেই বললেই চলে। তবে পৃথিবীব্যাপী বিশাল জনসংখ্যার জন্য খাদ্য উৎপাদনের নামে যেসব খাদ্য মানুষ ঘরে তুলছে আসলে তা কতটুকু নিরাপদ? পৃথিবীতে খাদ্যের অভাবে অনাহারে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমেছে। কিন্তু খাদ্য গ্রহণের ফলে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এমন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে আশঙ্খাজনক হারে, যার সঠিক সংখ্যা বের করা কঠিন।’ নেত্রকোনা পৌর এলাকার ধলাই পাড়ের কিশোরী সংগঠনের উদ্যোগে গত ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ‘নিরাপদ খাদ্য আমার অধিকার’ আলোচনায় উপরোক্ত কথাগুলো বলছিলেন নেত্রকোনা জেলা সদর উপজেলার নেত্রকোনা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রুহুল আমীন।

20190202_103909
‘নিরাপদ খাদ্য আমার অধিকার’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গত ২রা ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা উচ্চ বিদ্যালয়ে বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এক রচনা প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।

নিরাপদ খাদ্যের উৎসগুলো সংরক্ষণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি লক্ষ্যে নেত্রকোনা সদর উপজেলা ধলাই পাড়ের কিশোরী সংগঠন স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এক রচনা প্রতিযোগিতা ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আলোচনায় সভায় বারসিক’র কর্মকর্তাগণ বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবসের তাৎপর্য শিক্ষার্থীদের নিকট তুলে ধরেন।

20190202_104417
নেত্রকোনা উচ্চ বিদ্যালযের সহকারী শিক্ষক এ.বি.এম রুহুল বারী আলোচনায় কিভাবে ফসলের মাঠ থেকে বাজার এবং বাজার থেকে খাবার টেবিলে বিষাক্ত খাবার পৌছাছে যা, মানবদেহের পাশাপাশি আমাদের পরিবেশ ও প্রতিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে সে বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের নিকট তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, ‘জমিতে অপকারী পোকা দমনে অধিক পরিমাণ রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের ফলে দেখা অদেখা অনেক উপকারী পোকাও মারা যাচ্ছে, হ্রাস পাচ্ছে প্রাকৃতিক জলাশয়ে প্রতিবছর বেড়ে ওঠা প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অচাষকৃত খাদ্য ভান্ডার যা, আমাদের নিরাপদ খাদ্যের যোগানে নীরব ভূমিকা রাখে চলেছে। নিরাপদ খাদ্যের প্রাকৃতিক উৎসগুলো কমে যাওয়ায় প্রতিটি পেশার মানুষকে বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে নির্ভর হতে হচ্ছে বাজারের উপর।”

ধলাই পাড়ের কিশোরী সংগঠনের সদস্য উর্মি আক্তার ভেজাল খাদ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘বাজারে কেনা প্রতিটি খাদ্য এখন মানুষসহ সকল প্রাণীর স্বাস্থ্যের জন্য অনিরাপদ। মাছ, মাংস, ফল সকল কিছুতেই এখন ভেজাল। নিরাপদ খাদ্য খেতে হলে আমাদের নিজেদের বাড়িতে খাদ্য উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদনে, খাদ্যে ভেজাল সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, তবেই আমরা নিরাপদ খাদ্য খেতে পারব।’

20190202_103919

রচনা প্রতিযোগিতা ও আলোচনা শেষে স্কুলের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ‘পরিবেশে ক্ষতি হয় এমন কাজ না করা এবং নিরাপদ খাদ্যের সকল প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উৎসগুলো সংরক্ষণের শপথ নেয়।

আধুনিক কৃষিতে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন কৃষির উৎপাদন প্রযুক্তি। উদ্ভাবিত হচ্ছে জিন প্রযুক্তিতে নতুন উচ্চ ফলনশীল ধানসহ বিভিন্ন জাতের ফসলের জাত। এসব উন্নত জাতের ফসল চাষে কৃষকরা বাধ্য হচ্ছে মানুষসহ সকল প্রাণীকূল ও পরিবেশের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর রাসায়নিক উপকরণ। এসব কৃষিজ খাদ্য উৎপাদনে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপকরণ ব্যবহারের ফলে প্রাকৃতিকভাবে জম্মানো (অচাষকৃত) খাদ্য উদ্ভিদ ও প্রাণীজ খাদ্য বিলুপ্তির উপক্রম। পূর্বের প্রজম্মের জনগোষ্ঠী এসব অচাষকৃত উদ্ভিদের কদর খুব ভালভাবেই জানত, তাই তারা এসব খাদ্য উদ্ভিদগুলো সংগ্রহ করে খেত এবং সংরক্ষণ করে রাখত। অথচ প্রাকৃতিকভাবে জম্মানো এসব খাদ্য ছিল সম্পূর্ণ নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত। কিন্তু বর্তমান প্রজম্মের জনগোষ্ঠী এসব অচাষকৃত খাদ্য সম্পর্কে অসচেতন এবং তারা আধুনিক বাজারজাত খাবারের প্রতি বেশি আসক্ত। তাদের নিকট এসব অচাষকৃত নিরাপদ খাদ্য গুরুত্বহীন।

happy wheels 2

Comments