সম্ভাবনাময় ফলের নাম টেং ফল

নেত্রকোনা থেকে শংকর ম্রং

ফলটি বর্হিদেশের হলেও আমাদের দেশের মাটি এ ফল উৎপাদনের জন্য উৎকৃষ্ট। ফলটি টেং ফল নামে পরিচিত। গাছটি মুলত লতানো এবং গোলাকার, টেং ফল দেখতে টেনিস বল আকৃতির। কচি অবস্থায় ফলের রং গাঢ় সবুজ, পরিপক্ষ অবস্থায় কালচে সবুজ এবং পাকলে হাল্কা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। কালচে সবুজ বর্ণ ধারণ করলেই বুঝা যায় ফলটি খাওয়ার উপযোগি হয়েছে। ফলের আবরণটি শক্ত এবং প্রায় ১ সে.মি. পূরু। ফলের মূল খাদ্যাংশ দু’টি আবরণ দিয়ে ঢাকা। ফলটি ফাটালে বা চাকু দিয়ে কাটলে একটি সাদা আবরণ থাকে। সাদা আবরণের ভেতরে বীজসহ টক মিষ্টি স্বাদের রসালো হলদে রং এর (কাঁচা ডিমের কুসুমের রং) অংশটিই শরবত তৈরি করে খাওয়া হয়। শরবত ছাড়াও এমনি খাওয়া যায়। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো ফলের এ অংশটি প্রক্রিয়াজাত করে পাউডার আকারে টেং নামে বাজারজাত করে থাকে।

passion-fruit-tree-passion-fruit-farm-thailand-97826519
আমার বয়স যখন ৬/৭ বছর তখন আলেক্স রাবানল নামের এক ফিলিপিনি কৃষিবিদ, যিনি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তৎকালীন সরকার গৃহীত সবুজ বিপ্লব কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে এদেশের কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার সম্পর্কে কৃষক ও কৃষিবিদদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিতে ফিলিপাইন এর আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্র (ওজজও) থেকে কুমিল্লা বার্ড এ আসা বিশেষজ্ঞ টিমের একজন সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি এদেশকে ভালোবেসে স্থায়ীভাবে এদেশেই থেকে যান। টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের জলছত্র ক্যাথলিক খ্রীষ্টান মিশনে ফাদার ইউজিন হোমরিক সিএসসি এর অধিনে থেকে মিশনের কৃষি খামারে এলাকার কৃষকদেরকে আধুনিক কৃষি বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে শুরু করেন।

37215664_1754047448044896_7548088556644728832_n-W600
মিশনে তিনি স্ত্রী ও তিনি ছেলে নিয়ে থাকতেন। এখানে থাকার সময় স্ত্রী ও সন্তানদের ফলের চাহিদা পূরণের জন্য তিনি ফিলিপাইন থেকে বেশ কিছু জাতের ফলের বীজ নিয়ে এসে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেন। আলেক্স রাবানল এর নিয়ে আসা ফলের জাতগুেেলার মধ্যে একটি ট্যাং ফল। ফলটি ধীরে ধীরে গারো আদিবাসীসহ এলাকার সকল জনগোষ্ঠীর নিকট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে এবং তারা মিশন থেকে চারা সংগ্রহ করে নিজ নিজ বাড়িতে চাষ করতে থাকে। এক সময় মধুপুরের অধিকাংশ গারো আদিবাসী পরিবার নিজেদের প্রয়োজনে ট্যাং ফলের চাষ করত। ট্যাং ফলের গাছ লতানো ও জঙ্গলে পরিণত হওয়ায় এবং তৎকালীন সময়ে ভোক্তাদের নিকট এ ফলের গুরুত্ব না থাকায় ধীরে ধীরে এর চাষ হ্রাস পেয়েছে। তবে এখন মধুপুরের অনেক গারো আদিবাসী পরিবারে সখ করে ট্যাং ফলের চাষ করা হয়। যেমন আমার আগ্রজ শেখর ম্রং এর বাড়ির প্রবেশ পথেই ট্যাং ফলের চাষ চোখে পড়ে।

IMG_20180706_172830
বীজ ও লতা উভয় থেকেই ট্যাং ফলের বংশ বৃদ্ধি হয়ে থাকে। পাকা ফলের বীজ থেকে এবং পূর্ণাঙ্গ গাছের লতা কেটে মাটিতে পূঁতে দিলেই সেখান থেকে চারা হয়। ট্যাং ফল মাঁচা ছাড়া যেকোন ফেলনা গাছেও চাষ করা যায়। কোন রকমের যত্ন আত্মির প্রয়োজন হয়না। তবে গাছের গোড়ায় পঁচা গোবর প্রয়োগ করা হলে গাছের স্বাস্থ্য ও ফলের আকার ভালো হয়।

stockfresh_id6174077_89ea9b
ট্যাং ফল চাষে কোন পরিশ্রম করতে হয়না এবং এটি চাষ করতে কোন খরচ নেই। কোন গাছের গোড়ায় এর চারা রোপণ করে দিলেই এ গাছের লতা গাছে উঠে যায় এবং ফল দেয়। এ ফলের গাছে তোমন কোন রোগবালাই হয়না বিধায় এ ফল চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও কোন সম্ভাবনা নেই। এক সময় গ্রামাঞ্চলে যেসব ফল অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকতে দেখা যেত, সেসব ফল বর্তমান সময়ে শহরাঞ্চলে অহরহ বিক্রি হতে দেখা যায়। শহরাঞ্চলে এসব ফলের চাহিদা ও বাজার মূল্যও অনেক। সে তুলানায় ট্যাং ফলটি এদেশের মানুষের নিকট অপরিচিত হলেও, এ ফল দিয়ে তৈরি ট্যাং পাউডার সর্ব সাধারণের নিকট বহুল পরিচিত।

যদিও অদ্যাবধি ট্যাং ফল বাজারে বিক্রি হতে দেখা যায় না, তবে প্রচুর ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এ ফল ভোক্তামহলে ব্যাপক চাহিদা তৈরী করতে সক্ষম হবে বলে আমি মনে করি। তাই বসতভিটার পরিত্যাক্ত জমিতে মাঁচায় বা অকাঠ জাতীয় গাছে ট্যাং ফলের চাষ পরিবারের বাড়তি আয়ের সমূহ সম্ভাবনা তৈরি করবে।

happy wheels 2

Comments