বস্তিতে আগুন: খতিয়ে দেখতে কমিশন গঠনের দাবি

ঢাকা থেকে ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল

বস্তি কেন পুড়ে তা খতিয়ে দেখতে ও নিম্ন আয়ের মানুষদের আবাসনের জন্য জাতীয় বস্তি কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি জননেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য। গত সম্প্রতি (২২ আগস্ট) প্রেসক্লাবের ভিআইডি লাউঞ্জে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বারসিক’র উদ্যোগে পবা চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।

22.1

সংলাপে পঙ্কজ ভট্টাচায বলেন, ‘জনগণ বারবার ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে ধোকা খায়। বস্তিবাসীদের জন্য মহামান্য হাইকোর্টেও রোল জারি করা থাকলেও প্রতিবছর বস্তিতে আগুণ লাগে আর বস্তি উচ্ছেদ হয়। কেন বস্তি পুড়ে তা খতিয়ে দেখা জরুরি। একটি পৃথক কমিশন গঠন করে সকল অগ্নিকান্ডের কারণ অনুধাবন করে বস্তিবাসীদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘জনগণের কাছে দায়বদ্ধ আবাসন কর্তৃপক্ষ তৈরি করে বস্তিবাসীদের ন্যায্য আবাসন অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বস্তিতে আগুণ লাগে না; লাগিয়ে দেয়া হয় তা খতিয়ে দেখতে হবে এবং বস্তি নিয়ে রাষ্ট্রের বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। মনে রাখতে হবে বস্তিবাসীরা মানুষ আর তাদের অবদানের উপর এই রাষ্ট্র ও দেশ টিকে আছে।’

অনুষ্ঠিত সংলাপে বক্তারা আরো বলেন, ‘বস্তিবাসী আজ সমাজে গালি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু ঢাকা শহরের নি¤œ আয়ের এই মানুষরা যদি একদিন কাজ না করেন তবে শহর অচল হয়ে যাবে। অথচ কি অদ্ভুতভাবে নিয়মিত বিরতিতে আমাদের এই বস্তিগুলোকে পুড়তে দেখতে হয়।’ বক্তারা সকল অগ্নিকান্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের ও ক্ষতিপূরণের প্রদানের দাবি জানান।

সংলাপে বস্তিবাসী নেতারা বলেন, ‘আমরা ভিক্ষা চাই না। আমরা চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বস্তিবাসীদের জন্য যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তার বাস্তবায়ন করা হোক। আর এই বস্তিবাসী ও নিম্ন আয়ের মানুষরাই যেনো আবাসন অধিকার পায়।

সংলাপে আরো বক্তব্য রাখেন ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা: ওয়াজেদুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেবাশীষ কুমার কুন্ডু, পবার সাধারণ সম্পাদক প্রৌকশলী আব্দুস সোবহান, গবেষক ও লেখক পাভেল পার্থ, আওয়ামী বাস্তুহারা লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ হালদার, বস্তিবাসী নেতা কুলসুম বেগম, রাফেজা বেগম ও প্রবাস ফেরত নুরজাহান বেগম প্রমূখ। সংলাপে বস্তিবাসী ও অতিথিরা নিম্নলিখিত দাবি তুলে ধরেন:

22.2

১. মিরপুর ঝিলপাড়ের চলন্তিকা বস্তিতে ভয়াবহ অগিকান্ডে আনুমানিক ৫০০০ পরিবারের ক্ষতির পরিমাণ ১৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে।
২. উক্ত স্থানে তাদের দ্রুত পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. নগর বস্তিবাসীদের জন্য নিরাপদ ও স্থায়ী অবাসনের ব্যবস্থা সরকারিভাবে করতে হবে।
৪. বস্তিবাসীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দ্রুত আবাসন তৈরির কাজ শুরু করতে হবে।
৫. বস্তিবাসীদের জন্য নির্মিত ফ্লাট প্রাপ্তির প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সহজলভ্য করতে হবে।
৬. ফ্ল্যাটের দাম বস্তিবাসীদের সাধ্যের মধ্যে রাখতে হবে।
৭. দূর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলায় নগর দরিদ্রের জন্য বিশেষ ঝুঁকি ভাতা /প্রণোদনা দিতে হবে।
৮. নগর দরিদ্রের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৯. জাতীয় দূর্যোগ পরিকল্পনায় নগরের দূর্যোগ ও ঝুঁকিকে সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করে যুক্ত করতে হবে।
১০. বড় বস্তির কাছে সার্বক্ষণিক ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট রাখতে হবে।
১১. প্রতিটি বস্তিতে প্রশিক্ষিত ভলেন্টিয়ার তৈরি করতে হবে।
১২. প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

উল্লেখ্য, সংলাপে ধারণাপত্র পাঠ করেন বারসিক’র সমন্বয়কারী মো জাহাঙ্গীর আলম। সংলাপে ঢাকার বিভিন্ন বস্তিবাসী, শিক্ষার্থী, উন্নয়নকর্মী, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণী ও পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

happy wheels 2

Comments