বুলবুল মোকাবেলায় সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিমের উদ্যোগ

সাতক্ষীরা থেকে মারুফ হোসেন (মিলন)

১০ নভেম্বর দূবলার চর আলোর কোলে রাশ উৎসবকে সামনে নিয়ে যখন সবাই হিরোন পয়েন্ট যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক তখন ৪ নভেম্বর বিভিন্ন অনলাইন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয় সমুদ্রপৃষ্টে গভীর নিম্ন চাপের সৃষ্টি হয়েছে এবং সেটি শক্তিশালী হয়ে বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। সংবাদটি শুনে মানুষের মনে তেমন কোন প্রভাব না পড়েনি। ৮ নভেম্বর হঠাৎ আবহাওয়া অধিদপ্তর থকে ৩ নং সতর্কতা সংকেত জারি করে। আবহাওয়া অধিদপ্তর আরো জানায়, নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়ে  ৯ অথবা ১০ নভেম্বর মধ্যরাতে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলের  উপর দিয়ে যেতে পারে এবং সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

সুন্দরবন স্টুডেন্টস টিমের বুলবুল অভিজ্ঞতা (5)

সতর্কতা সংকেত জারীর পরপরই শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান ৮ নভেম্বর সকাল ৯টার সময় সরকারি, বেসরকারি ও স্বেচ্চাসেবী  সংগঠন সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিমের  নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় পূর্ববতী, মধ্যবতী,ও পরবর্তী কার্যক্রম নিয়ে সবার মতামতের ভিত্তিতে  গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং সকলকে দুর্যোগ মোকাবেলায় ভূমিকা পালন করার আহবান জানান। মিটিংয়ের মাধ্যমে বুলবুলের সংকেতটি এসএসএসটির সভাপতি মারুফ হোসেন (মিলন) এসএসএসএটির ১২টি ইউনিটের সদস্যদেরকে জানিয়ে দেয় এবং সকল ইউনিটের সদস্যদেরকে দূর্যোগ মোকাবেলায় স্বেচ্চায় পূর্বের ন্যায় বিশেষ  ভূমিকা পালন করার আহবান জানান।

সুন্দরবন স্টুডেন্টস টিমের বুলবুল অভিজ্ঞতা (4)

দুর্যোগ বুলবুল বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে বিষয়কে সামনে নিয়ে শুরু হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিমের  কার্যক্রম। শুরুতেই ১২টি ইউনিয়নের এসএসএসটির সদস্যরা ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের অবস্থান ও সতর্কতা সংকেতের আপডেট মোবাইলের মাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ও হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে থাকে এবং সকলকে নিরাপদ  সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়ার আহবান জানায়। প্রচারের মাধ্যমে  এসএসএসটির সদস্যরা বিশেষ করে দ্রুত প্রবীণ, প্রতিবন্ধী, গর্ভবতী নারী, শিশুকে  নিরাপদ সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে যাওয়ার জন্য সকলকে আহবান জানান এবং গৃহপালিত পশুপাখিকে নিরাপদ উচু স্থানে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান। সংগঠনের সদস্যরা স্ব স্ব ইউনিয়নের ইউপির  সাথে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে পাশে থাকে এবং কন্ট্রোল রুমের দ্বায়িত্বও পালন করে। ৮ নভেম্বর শুক্রবার বিকালে এসএসসির কার্যকরী কমিটির সদস্যরা সংকেতের সংবাদ মানুষকে জানিয়ে সচেতন কারার জন্য মাননীয় সংসদ সদস্যর  সাথে শ্যামনগরের ১২টি  ইউনিয়নের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ  স্থানে হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে প্রচারে অংশ নেয়। এসএসএসটির সদস্যরা প্রচার প্রচারণার সাথে সাথে অনেক সদস্য শুক্রবার রাতে বিশেষ করে প্রতিবন্ধী,প্রবীণ, শিশু, গর্ভবতী নারীকে নিরাপদ সাইক্লোন শেল্টারে যেতে সহযোগিতা করে। শুক্রবার রাতে আশ্রিত ব্যক্তিদের খাওয়ার জন্য এসএসএসটির সদস্যরা  স্বেচ্চায় রান্না ও খাবার পরিবেশনে সহযোগিতা করে এবং সেটি চলমান রাখে দুর্যোগের পরবর্তী সময় পর্যন্ত। সারারাত ব্যাপী মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যু প্রচারণা কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।

সুন্দরবন স্টুডেন্টস টিমের বুলবুল অভিজ্ঞতা (3)

৯ নভেম্বর সকাল ১০ টার সময় আবহাওয়া অধিদপ্তর ৭ নং বিপদ সংকেত জারী করে এবং জানিয়ে দেয় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে শ্যামনগর উপজেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সংকেতে সাথে সাথে বেড়ে চলেছে বৃষ্টি ও বাতাসের গতিবেগ। বিপদ সংকেত জানার সাথে সাথে এসএসএসটির সদস্যরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সংবাদটি জানায় এবং উপজেলাব্যাপী প্রচারণা চালিয়ে মানুষকে সচেতন করে, যারা আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি তাদেরকে যাওয়ার অনুরোধ জানায়। মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতেও সহযোগিতা করে।

৯ নভেম্বর বিকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর ১০নং মহাবিপদ সংকেত ঘোষণা করে। সংকেতের আপডেট মানুষকে এসএসএসটির সদস্যরা প্রচুর বৃষ্টির মধ্য দিয়ে অধিক রাত পর্যন্ত  প্রচারের মাধ্যমে  সকলকে  জানিয়ে দেয়। এসএসএসটির কার্যকরী কমিটির সদস্যবৃন্দ পুনরায় মাননীয় সংসদ সদস্যর সাথে ১২টি ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে মানুষকে সচেতন করে এবং মানুষকে দ্রুত সাইক্লোন শেল্টারে যেতেও সহযোগিতা করে।

সুন্দরবন স্টুডেন্টস টিমের বুলবুল অভিজ্ঞতা (2)

১০ নভেম্বর রাত্র ১টার পর প্রচুর বৃষ্টির সাথে বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যায়। ১০ নভেম্বর রাত ৩ টার সময় বুলবুল ১২০ কিঃ মিঃ বেগে আঘাত হানতে শুরু করে। প্রচন্ড ঝড় যখন চলছে ঠিক সেই মুহূর্তে ভোর ৫ টার সময় গোপালপুর গ্রামের একজন গর্ভবতী নারীর প্রসব বেদনা দেখা দেয়। এসময় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই, পথে বড় বড় গাছ পড়ে আছে। তখন এসএসএসটির সদস্যরা ঝুকি নিয়ে স্থানীয় ধাত্রী দিয়ে মহিলাটিকে  বাচ্চা জন্মাতে সহযোগিতা করে। বুলবুলের তান্ডব চলতে থাকে ১০ নভেম্বর সকাল ৭ টা পর্যন্ত। ঘূর্ণিঝড়ের পর কোন মানুষের প্রাণহানি না ঘটলেও লন্ডভন্ড হয়ে যায় ঘরবাড়ি, গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি, ফসল,মৎস্য ঘেরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মারা যায় অনেক গৃহপালিত ও বন্য পশুপাখি।

সুন্দরবন স্টুডেন্টস টিমের বুলবুল অভিজ্ঞতা (1)

সকাল ৭ টার পর ঝড়ের গতি কমে আসলে স্বেচ্চাসেবী সংগঠন এসএসএসটির সদস্যরা উদ্ধার অভিযান শুরু করে। এসএসএসটির সদস্যরা বুলবুল পরবর্তীতে বিশেষ ভূমিকায় নিয়োজিত থাকে যেমন-আহত ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, আহত বন্য ও গৃহপালিত পশুপাখিদের নিরাপদ স্থানে রেখে সেবা দেয়া, গাছ পড়ে ভেঙে যাওয়া ঘরের ভিতরে থাকা  মূল্যবান সম্পদ সংরক্ষণে মানুষকে সহযোগিতা করা , স্বেচ্ছাশ্রমে পথে পড়ে থাকা গাছ পরিষ্কার করে যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখা, আশ্রয়হীনদের দ্রুত নিরাপদ সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে যাওয়া, আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থিত মানুষকে খাবার প্রদানে সহযোগিতা করা, সুপেয় পানির পুকুরে পড়ে থাকা গাছপালা ও আবর্জনা পরিষ্কার করা, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ভিডিও ধারণ এবং মুঠোফোনে  ছবি সংগ্রহের করা এবং সেগুলো ফেসবুকে দেওয়া, দূর্যোগ পরবর্তীতে মানুষকে  জরুরি সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা পেতে সহায়তা করা ইত্যাদি। ১১ নভেম্বর থেকে বুলবুলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা পেত আবেদন করতে সহযোগিতা করছে এসএসএসটির সদস্যরা।

 

happy wheels 2

Comments