লবণাক্ততার সাথে অহর্নিশ বসবাস

লবণাক্ততার সাথে অহর্নিশ বসবাস

শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল

আমরা চুনা নদীর চরে সেই এরশাদের আমল থেকে আছি। আমাদের এই গ্রামের নাম সুন্দরবন গুচ্ছ গ্রাম। গ্রামের একপাশে চুনা নদী আর অন্যপাশে লবণ পানির চিংড়ি ঘের। দুপাশের এই লবণ পানির মাঝখানে আমাদের বসবাস। এখানে আমরা প্রায় ৪৫টি পরিবার আছি। প্রতিনিয়তই লবণ পানির সাথে আমাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এই লবণ পানির মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের সংসাবের চাকাকে সচল রাখার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কখনো ব্যক্তি বা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় পুকুর খনন করে মিষ্টি পানি সংরক্ষণের চেষ্টা করি। কখনো লবণ সহনশীল গাছের চারা লাগানো। কখনো সবজি চাষের  উপযোগী পরিবেশ তৈরির জন্য নানান চেষ্টা করি। কখনো বিভিন্ন জাতের হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ও ভেড়া পালন করি। আবার পুকুরগুলোতেও লবনাক্ততায় টিকতে পারে সেরকম মাছ চাষ করি। এভাবেই আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হচ্ছে অবিরত। এ চেষ্টা করে কিন্তু আমরা মোটামুটি সফল হচ্ছি। আমরা বর্ষা মৌসুমে তো প্রায় সব রকমের সবজি চাষ করতে পারছি। অন্য মৌসুমেও সবজি লাগানো হয় কিন্তু পরিমাণে কম। আমরা ফলজ গাছ হিসেবে কদবেল, ছবেদা, নারকেল, খেজুর, পেয়ারা রোপণ করি। ভালোই হচ্ছে। সব থেকে বড় কথা হলো চেষ্টা করলেই কিছু না কিছু হবে। আমরা সব রকমের চেষ্টা করে থাকি এই পরিবেশে কিছু করার জন্য। যেখানে লবণে কিছু হবার কথা নয় সেখানে কিন্তু আমরা কিছুটা হলেও সফল হয়েছি। এ সফলতা আমাদের কাছে যেনো লবনের মধ্যে সোনা খুজে পাওয়ার মতো।

উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন শ্যামনগর উপজেলা শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের সুন্দরবন গুচ্ছ গ্রামের প্রবীণ কৃষক আব্দুল গনি। বিগত সময়ে মাঠ  পর্যবেক্ষণে পুষ্টিভিত্তিক কৃষির মাধ্যমে তৈরিকৃত পুষ্টি ব্যাংক বা শত বাড়ির তৈরির লক্ষ্যে আগ্রহী উদ্যোগী পরিবার চিহ্নিত করার জন্য সুন্দরবন গুচ্ছ গ্রামের কৃষক আব্দুল গনির সাথে কথা হয়।

আব্দুল গনি বলেন, আমাদের এখানে প্রায় বাড়িতে কিন্তু সবজি চাষ হয়। বিভিন্ন ধরনের হাঁস-মুরগি পালন করি। লবণের মধ্যে সমস্যা হয়। তারপরও নিজেদের মতো করে সবাই কম বেশি চেষ্টা করি। কারণ গুচ্ছ গ্রামের অধিকাংশ পরিবার দরিদ্র। যোন-মজুরি এবং ভাটার কাজ এখানকার লোকেরা বেশি করে। বর্তমান সময়ে করোনার জন্য অনেকে বাইরের কাজ তেমন করতে না পারলেই নিজ নিজ বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করার চেষ্টা করছে।

তিনি আরো জানান, দীর্ঘদিন ধরেই বসতভিটায় বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদ করেন। তাঁকে দেখে গ্রামে অনেকই আগ্রহী হয়ে এ কাজ করছে। সারাদিন বাড়িতে থেকে কোথায় কি লাগানো যাবে? কোন টি হবে? তা নিয়ে সব সময় চেষ্টা করেন তিনি। এ কাজে তাঁর পরিবারের সবাই সহায়তা করে। প্রতিবছর সবজি, গবাদি পশু পালন, মাছ চাষ করে সংসারের চাহিদা মিটিয়ে কিছুটা হলেও আর্থিক লাভবান হচ্ছেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, আমার কাজের এ আগ্রহ দেখে এ বছর বারসিক থেকে সবজি চাষের জন্য কিছু উপকরণ সহায়তা পেয়েছি, যা দিয়ে সবজি ক্ষেত আরো ভালোভাবে সাজানোর চেষ্টা করছি। পুকুরের মধ্যে মাছ চাষ করছি এবং কিছু পাতি হাঁস উঠিয়েছি। ভবিষ্যতে ছেলে পুকরের মধ্যে মাছ ও হাঁসের খামার আরো বড় করার পরিকল্পনা করছি।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকুলীয় অঞ্চলে লবণক্ততার পরিমাণ একটু বেশি। যার জন্য ইচ্ছা করলেই সব সময় সবকিছু চাষ করা সম্ভব হয়ে উঠেনা। তারপর উপকূলবাসী প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে  খাপ-খাইয়ে নিয়ে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

happy wheels 2

Comments