থোক বিলাসী

দেবদাস মজুমদার, বিশেষ প্রতিনিধি, পিরোজপুর

পতিত জমি নিবিড় ব্যবহার করে মৌসুমে দেশী উন্নত জাতের সবজি পরিকল্পিত আবাদ করে একজন কৃষক লাভবান হতে পারেন। হাইব্রিড কৃষির সম্প্রসারণ ঘটলেও কৃষক তাঁর লোকায়ত জ্ঞান ও কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আবাদে সফলতা আনতে সক্ষম।পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের উত্তর সোনাখালী গ্রামের ষাটোর্ধ বয়সী কৃষক মো. জয়নাল আবেদীন জমাদ্দার এক একর জমিজুড়ে শুধু মাত্র উন্নত দেশী জাতের বেগুন চাষ করে এমন সফলতা এনেছেন। বছরজুড়ে এক একর পতিত জমিতে শুধু মাত্র থোক বিলাসী (উন্নত দেশী জাত) বেগুন চাষ করেই তিনি এখন লাখপতি। সমৃদ্ধ কৃষক জয়নালের সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক এখন থোক বিলাসী বেগুন আবাদ করছেন।
devdas-pic-4
কৃষক জয়নাল আবেদীন জানান, বসতবাড়ির আশপাশে জমি পতিত পড়েছিল। এ জমিতে আগাছা জন্মে থাকত। ১০ বছর আগে পতিত জমি পরিষ্কার করে জমি প্রস্তুত করেন তিনি। অর্থের অভাবে প্রথম বছর আবাদ করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে এক একর জমিতে ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে দেশী উন্নত জাতের বেগুন থোক বিলাসী আবাদ করেন। বছরজুড়ে এ বেগুনের ফলন ফলে থোকায় থোকায়। বাজারে চাহিদাও প্রচুর। কৃষক জয়নাল বেগুন আবাদে জৈবসার ব্যবহার করেন যা নিজেই বাড়িতে প্রস্তুত করেন। তিনি বছরে থোক বিলাসী বেগুন আবাদ করে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় করছেন। আর বেগুনে ক্ষেতের ভেতর মৌসুমে ক্ষিরই আবাদ করে আয় করেন আরও ৫০ হাজার টাকা। কেবল বেগুন চাষ করেই দরিদ্র কৃষক জয়নাল একন আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ।

জয়নালেল চার মেয়ের তিনজনই ভালোভাবে পাত্রস্থ করেছেন। ছোট মেয়ে স্থানীয় কলেজে অনার্স শ্রেণীতে লেখাপড়া করছেন। থোক বিলাসী বেগুন একদা দরিদ্র কৃষক জয়নালের ক্ষুধা জয় করেছে। গ্রামের কাঁচা রাস্তাটা এখন পাকার কাজ চলছে কৃষি পণ্য পরিবহনে আর বেগ পেতেও হবে না তাকে। কৃষক জয়নাল বলেন, “সপ্তাহে দুইবার ফলন তুলি। ২০/২২ মণ ফলন এই বেগুন ক্ষেত থেকে হাটে যায়। এবার মৌসুমের শুরুতে ৮০০ টাকা করে মণ পাইকারী বিক্রি করেছি। বর্তমানে সাড়ে ৫০০টাকা থেকে ৬০০ টাকা মণ বিক্রি করছি। পাইকাররা বাড়িতে এসেই আমার বেগুন কিনে নেন। একসময় নিজেই হাটে যেতাম এখন পাইকার বাড়িতে আসে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের কৃষি থেকে দেশী উন্নত জাত হারিয়ে যাচ্ছে। হাইব্রিড কৃষির আবাদ বাড়ছে। দেশী জাতও ভালো ফলন দেয় ভেবেই থোক বিলাসী জাতের বেগুনের আবাদ করছি। এ বেগুনের গুণেই আমি আর্থিকভাবে খুব ভালো আছি।” তিনি বলেন, “আমার বেগুন আবাদের সফলতা দেখে এলাকার আরও কয়েকজন কৃষক আমার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করেছেন। স্থানীয়  গুলিসাখালী গ্রামের শামীম তালুকদার, মধ্য সোনাখালী গ্রামের জীবন বরি ও মানিক মল্লিক থোক বিলাসী জাতের বেগুন আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন।
devdas-pic-1
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে,  থোক বিলাসী একটি উন্নত জাতের দেশী বেগুন। থোকায় থোকায় এ বেগুন ফলে। দেখতে নয়নাভিরাম ও স্বাদে সুস্বাদু বলেই এর নাম থোক বিলাসী। প্রতিটি থোকায় ৭/৮টি বেগুন ফলে। সারাবছর এ বেগুন ফলন দেয়। হাল্কা লম্বা ও উজ্জল বেগুনী রঙের এ বেগুন দেখতে শোভন। লম্বাটে স্বভাবের ফল হওয়ায় ডগা ছিদ্রকারী  পোকা ও রোগ ব্যাধির  আক্রমণ খুব কম। আন্তঃপরিচর্যা ও সেচ ছাড়াও ভালো ফলন দেয়। এ ক্ষেত্রে আবাদে কৃষকের ব্যয় কম। হেক্টর প্রতি ৫০ থেকে ৬০ মেট্রিকটন ফলন দেয় থোক বিলাসী।

এ বিষয়ে মঠবাড়িয়ার সোনাখালী কৃষি ব্লকের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. হেমায়েত উদ্দিন  বলেন, “পতিত জমিতে যে কেউ থোক বিলাসী জাতের বেগুনের আবাদ করে জয়নালের মত লাভবান হতে পারেন। বেগুনের আবাদ দিয়ে এ কৃষক স্বাবলম্বী হয়েছেন। থোক বিলাসীর সুবিধা হচ্ছে এতে রোগের উপদ্রব কম এবং সারাবছর ফলে। এ কৃষকের বেগুন চাষে সফলতা দেখে এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক বেগুন চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

এ বিষয়ে মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, “পিরোজপুর উপকূলের মাটি ও আবহাওয়া থোক বিলাসী বেগুন চাষে অনুকুল। পতিত জমিতে এর আবাদ সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগের পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট (পিজিবি) প্রকল্পের মাধ্যমে থোক বিলাসী বেগুনের  প্রদর্শনী প্লট করে স্থানীয় চাষীদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।”

happy wheels 2

Comments