কৃষক অরুন গমেজ এর ভোগান্তি ও ফসল সংরক্ষণাগার

কলমাকান্দা, নেত্রকোনা থেকে গুঞ্জন রেমা
কলমাকান্দা উপজেলার বরদল গ্রামের অরুন গমেজ। পেশায় একজন কৃষক। প্রতিবছরই তিনি বিভিন্ন ধরনের শাকসব্জি উৎপাদন করে থাকেন। উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে তিনি প্রতিবছরই ভালো লাভ করেন। এবছর তিনি চালকুমড়া, ধনিয়া, করলা ও মিষ্টি কুমড়া বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চাষ করেন। চাল কুমড়া আগাম চাষ করায় এবার তিনি ভালো দামে কিক্রি করতে পেরেছিলেন। কিন্তু সমস্যা হয় করলা ও মিষ্টি কুমড়া বিক্রির ক্ষেত্রে। করোনা ভাইরাসের ফলে ঢাকা থেকে পাইকার আসা বন্ধ হয়ে যায় ফলে করলা ও মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করতে পারলেন না। গ্রামের বাজারে করলা মাত্র ১০ টাকা কেজি; তাও আবার বেশি পরিমাণে বাজারে নিয়ে গেলে সবগুলি বিক্রি করতে পারতেন না। বিক্রি করতে না পারাতে দেখা গেল গাছেই করলা পেকে যাচ্ছে। কোন টা নষ্ট হচ্ছে এমন করে এ বছর করলা চাষ করে লোকসান গুনতে হয়েছে তাকে। করলার মত একই ঘটনা ঘটে মিস্টি কুমড়ার ক্ষেত্রে। স্থানীয় বাজারেও মিষ্টি কুমড়ার দাম নেই। শেষে সিদ্ধান্ত নিলেন সবগুলি মিস্টি কুমড়া পাকিয়ে সংরক্ষণ করবেন। তারপর বাগানের সবগুলি মিষ্টি কুমড়া পাকাতে শুরু করেন। যেগুলি পুরোপুরি পেকে যাচ্ছে সেগুলি বাড়ীতে নিয়ে এসে সংরক্ষণ করতে শুরু করলেন। এভাবে তিনি প্রায় ১০০০ টি মিষ্টিকুমড়া সংরক্ষণ করতে সক্ষম হন। বাজারে এখন বিভিন্ন ধরনের শাকসব্জি পাওয়া যায় তাই সব্জির দাম এখন মোটামুটি কম। আবার যখন বর্ষা মৌসুম আসবে তখন শাকসব্জি দাম বেড়ে যাবে। তার সংরক্ষণকৃত মিষ্টিকুমড়া তিনি বর্ষা মৌসুমে দাম বেশি হলে বিক্রি করবেন বলে জানালেন।


কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসল নিজ উদ্যোগে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করছেন। মিষ্টিকুমড়া দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা সম্ভব বলে আজ অরুন গমেজের মত সাধারণ কৃষক মিষ্টি কুমড়া সংরক্ষণ করে রাখতে পারছেন। কিন্তু যেসব ফসল দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না সেগুলির কি হবে? কৃষকের কষ্টের বিনিময়ে উৎপাদিত ফসল তারা কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন সংরক্ষনাগার না থাকার কারণে। যদি কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসল কোন হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারতেন তবে হয়তো বা কৃষক তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য পেতেন। একজন কৃষক প্রকৃতির সাথে কত লড়াই করে ফসল উৎপাদন করে এর কোন শেষ নেই। কখনো বৃষ্টিতে ভিজে, কখনো রোদে পুড়ে কখনো আবার কোন একজন কৃষককেই বজ্রপাতে প্রাণ হারাতে হয়। কখনো আবার ঘুর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টিতে কৃষকের ফসলের মাঠ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। এমন নানা বাধা বিপত্তির পর কৃষক তার উৎপাদিত ফসল বাজারে নিয়ে আসেন বিক্রির উদ্দেশ্যে। অথচ কষ্টের তুলনায় পান না ন্যায্যমূল্য। যে কৃষির উপর নির্ভর করে আছে আমাদের দেশের সিংহভাগ মানুষ অথচ কৃষি নিয়ে আমাদের ভাবনা চিন্তা খুবই ক্ষীণ। তাই আপনার আমার সবার কৃষি কেন্দ্রিক চিন্তা ভাবনা আরো জোরদার করতে হবে। কৃষকের কৃষি পণ্যের ন্যাযমূল্য নিশ্চিতে সবারই সোচ্চার হতে হবে।

happy wheels 2

Comments