আমরা কিশোরী, বাল্যবিয়ে রোধ করি

মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার
‘নারী-পুরুষে বৈষম্য হ্রাস করি, বহুত্ববাদী সমাজ গড়ি” শ্লোগানকে সামনে রেখে গতকাল স্যাক কার্যালয়, মানিকগঞ্জ এ কিশোরীদের অংশগ্রহণে জেন্ডার, বৈচিত্র্য, আন্তঃনির্ভরশীলতা ও বহুত্ববাদী সমাজ বিনির্মাণেন কিশোরীদের অংশগ্রহণে নারীর ক্ষমতায়নে নেতৃত্ব বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সামাজিক তথা শারীরিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মানিকগঞ্জ পৌরসভা ও কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৬টি গ্রামের ১৬ জন কিশোরী অংশগ্রহণ করে।


কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী টিম লিডার অন্তরা রাজবংশী বলেন, ‘আমি আমার এলাকায় বাল্যবিবাহ বন্ধে কাজ করবো। এখানে এসে আমার খুব ভাল লেগেছে।’ সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘আমি প্রত্যয় কিশোরী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। আজ কিশোরী ভলেন্টিয়ার টিমের টিম লিডার হতে পেরে ভালো লাগছে। আমি আমার গ্রামের বাল্যবিয়ে বন্ধে মায়েদের সচেতন করবো। বাল্যবিয়ে রোধ করবো। সেই সাথে পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ করবো।’ একা দাস বলেন, ‘আমি আমার পাড়ায় কারো বাল্য বিয়ে হতে দেবনা। বাল্যবিয়ে বন্ধে কাজ করবো।’
বিভিন্ন সূত্রে ও মাধ্যমে জানা যায়, মহামারী করোনার কারণে বাল্যবিবাহ ১৩% বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি গত ২৫ বছরে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে সর্বোচ্চ হার। ২০২৫ সালের মধ্যে ২৫ লাখ মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার হতে পারে বলে উল্লেখ করেছে সেভ দ্য চিলড্রেনের গ্লোবাল গার্ল হুড প্রতিবেদনে।

বাল্যবিয়ে একটি অভিশাপ। দেশের উন্নয়নে সব সময়ই বাধা। যদিও সরকারি-বেসরকারি পর্যায় বিভিন্নভাবে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বাল্য বিয়ে রোধে। বাল্যবিয়ে রোধে কিশোরীদের এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে কিশোরীরা সফল হোক। কিশোরীদের হাত ধরেই বন্ধ হোক বাল্যবিয়ে, রোধ হোক শিশু ও নারীর প্রতি সহিংসতা। গড়ে উঠুক বৈষম্যহীন বহুত্ববাদী সমাজ। যে সমাজে সকলে বসবাস করবে পরস্পর আন্তঃনির্ভরশীলতার মধ্য দিয়ে তার নিজস্ব মর্যাদার সাথে।


উল্লেখ্য যে, করোনা মহামারীর কারণে গ্রামাঞ্চলে বাল্যবিয়ে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন। করোনা মহামারী বহু পরিবারকে দারিদ্র্যের মুখে ঠেলে দিচ্ছে । শিক্ষা প্িরতষ্ঠান বন্ধ থাকায় কিশোরীরা ঘরের মধ্যে এক ধরণের বন্দী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। বাড়িতে লেখাপড়া ঠিকমত করছে না। বিদ্যালয়গুলো অনলাইন ক্লাসের আওতায় সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসলেও গ্রামের কিশোরীরা দারিদ্র্যতা ও অসচেতনতার কারণে এসব সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেকে আবার অনলাইন ক্লাস করার নামে সুযোগের অপব্যবহার করছে। অনেকেই ফেইসবুক আসক্ত হয়ে পড়ছে। মা-বাবা সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে অভিভাবকেরা মনে করছেন এই পরিস্থিতিতে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথ নাই। বিয়ে হলে তাদের আর কোন ঝামেলা নেই বলে তারা মনে করছেন। অভিভাবকদের এই ধরণের মানসিকতার কারণে অনেক কিশোরী শিকার হচ্ছে বাল্যবিয়ের। সেই সাথে বাড়ছে নির্যাতন ও সহিংসতা।

বারসিক নারীর প্রতি সহিংসতা, নারী ও শিশু নির্যাতন, বাল্যবিয়ে রোধসহ নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কিশোরীদের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। কাজের ধারাবাহিকতায় গ্রাম পর্যায় গড়ে উঠেছে কিশোরী সংগঠন। কিশোরীরা বাল্যবিবাহ রোধে নিজ নিজ কাজ করে যাচ্ছে। কিশোরীদের এই কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে, তাদের কাজকে আরও বেগবান করতে, বিাল্যবিয়ে, শিশু-কিশোরী ও নারী নির্যাতন রোধ করতে এবং কিশোরীদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এই কর্মশালার মধ্য দিয়ে গঠন করা হয় কিশোরী ভলেন্টিয়ার টিম। মানিকগঞ্জ পৌরসভা ও সদর উপজেলার ৬ জন কিশোরীকে ৬টি গ্রামের (অন্তরা রাজবংশী- জয়নগর, তাহিয়া আক্তার- আন্ধারমানিক, একা দাস- নওখন্ডা, সুমি দাস- সরুন্ডী, সুমাইয়া আক্তার- চরমত্ত, শ্রাবন্তী দাস- চর হিজুলী) টিম লিডার করা হয়। প্রতিটি গ্রামের টিম লিডার তাদের গ্রামের বাল্যবিবাহ, শিশু-কিশোরী ও নারী নির্যাতন রোধে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে

happy wheels 2

Comments