ধইঞ্চার বহুমূখী উপকারিতা
মানিকগঞ্জ থেকে মাহফুজা আখতার
সাধারণত ধইঞ্চা চাষকে অবহেলার চোখে দেখা হয়। কিন্তু এ ধইঞ্চার আছে নানামূখী ব্যবহার। কখনো সবুজ সার, কখনো জ্বালানি, কখনো আবার ঘরের বেড়া এবং কখনো বা সবজির মাচা হিসেবেও কাজে লাগানো যায়। আবার ধইঞ্চার পাতা এবং বীজ গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে। অন্যদিকে চর এলাকায় মাটির ক্ষয়রোধের জন্যও ধইঞ্চা চাষ করে থাকেন কৃষকরা। বর্তমানে সিংগাইর উপজেলার বাঘারচর গ্রামের কৃষকদের মধ্যে ধইঞ্চা চাষের প্রবণতা বেড়েছে। গ্রামের ২০ জন কৃষক নিয়মিত ধইঞ্চা চাষ করে বিভিন্নভাবে লাভবান হচ্ছেন। উক্ত গ্রামের নিজাম উদ্দিন, হাচান ভুইয়া, আয়শা বেগম, বাদল মিয়া, হারুন মিয়া, চান মিয়াসহ আরো অনেকে ধইঞ্চা চাষে বিভিন্নভাবে উপকৃত হয়েছেন বলে জানান। সাধারণত এক ফসল থেকে আরেক ফসলের মাঝখানে যে সময় জমি ফাকা থাকে উক্ত সময়ে এলাকার কৃষকরা ধইঞ্চা বীজ বপন করেন। অনেকসময় ১৫ থেকে ২০ দিনের ধইঞ্চা লাঙ্গল দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়। ফলে জমির উবর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়। কৃষক বেঁচে যায় বাড়তি খরচের হাত থেকে।
ধইঞ্চা চাষের উপযুক্ত সময় সাধারণত বৈশাখ মাস। বীজ সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হচ্ছে কার্তিক মাস বলে কৃষকরা জানান। তবে জমির উর্বরাশক্তি ধরে রাখার জন্য সারাবছরই ধইঞ্চা চাষ করে থাকেন অনেক কৃষক। মুলত ফসল চক্রকে ঠিক রাখার জন্য ধইঞ্চা একটি সমন্বয়কারী ফসল। এই প্রসঙ্গে মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার বাঘারচর গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিন ভুইয়া বলেন, “আমি প্রতিবছর ৯ শতাংশ জমিতে ধইঞ্চা চাষ করি। ধইঞ্চা উঠার পরে আলু চাষ করি, আলুর পরে মাশকলাই, মাশকলাইর পরে ভুট্টা চাষ করি। এভাবে আমার জমি সবসময়ই চাষের মধ্যে রাখি।” অনেকে আবার ধইঞ্চা চাষ করে জ্বালানির চাহিদা এবং গবাদিপশুর খাদ্য চাহিদা পূরণ করে থাকেন। এই প্রসঙ্গে একই এলাকার আয়শা বেগম বলেন, “ধইঞ্চা ডাটা আমি জালানি হিসাবে ব্যবহার করি। ধইঞ্চা পাতা গরু ছাগলকে খাওয়াই। ধইঞ্চা বীজ চালের খুদের সাথে সিদ্ধ করে গরুরে দেই। এতে গরুর স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং গরু দুধ ভালো হয়।” জমির উর্বরাশক্তি বাড়ানো, জ্বালানি ও পশু খাদ্য ছাড়া এই উদ্ভিদ দিয়ে কৃষকরা বহুমূখী ব্যবহার করে থাকেন। কেননা ধইঞ্চা দিয়ে রান্না ঘর, গোয়াল ঘরের বেড়া দেওয়া যায়। কৃষকরা জানান উইপোকায় না ধরলে এই বেড়া ৩ থেকে চার বছর পর্যন্ত টিকে থাকে।
অন্যদিকে মাটির ক্ষয়রোধ করার জন্যও ধইঞ্চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই প্রসঙ্গে কৃষক চান মিয়া বলেন, “আমি নদীর পাশে বালু মাটি ধরে রাখার জন্য ১০ শতাংশ জমিতে ধইঞ্চা চাষ করেছি।” মাটির ক্ষয়রোধ করার জন্য একইভাবে বাঘারচর গ্রামের মো. সিরাজ মিয়া ১০ শতক জমিতে, মো. বাদল মিয়া ৩৫ শতক জমিতে, মো. সিয়াম ভূঁইয়া ৩৫ শতক জমিতে, হাচান ভূঁইয়া ২০ শতক জমিতে, মো. হারুন ৫ শতক জমিতে, চান মিয়া ১০ শতক জমিতে এবং আয়েশা বেগম ৩৫ শতক জমিতে নিয়মিত ধইঞ্চা চাষ করছেন। কোন একটি নিদির্ষ্ট জমিতে ধইঞ্চা চাষ করলে পাশের জমিতেও এর সুফল পাওয়া যায়। এই প্রসঙ্গে কৃষক হারুন মিয়া বলেন, “ধইঞ্চা লাগালে পাশের জমিতেও উপকার হয়। যখন পানি আসে তখন পাতা হলুদ হয়ে পানিতে ঝড়ে পড়ে যায়। এই পাতা ভাসতে ভাসতে চলে যায় অন্যের জমিতে। তখন মাটির সাথে মিশে সার হয়। মাটি ভালো রাখে।”
তাই বলা যায়, ধইঞ্চা চাষ একদিকে যেমন কৃষি জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করা যায় অন্যদিকে জালানিসহ অন্যভাবেও কৃষকরা উপকৃত হয়। তাই জমির শক্তি বাড়ানোর স্বার্থেই ধইঞ্চা চাষ করা উচিত।