বৃক্ষায়ণের প্রচেষ্টায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘লিবারেল মাইন্ডস’
কুমিল্লা থেকে মো. মতিউর রহমান
‘গাছ মানুষের পরম বন্ধু’ এ বাক্যটির সাথে কমবেশি আমরা সকলেই পরিচিত। বৃক্ষায়ণ বিষয়ক জনসচেতনামূলক অনেক অনুষ্ঠান এখন থেকে বহু আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনে নিয়মিত প্রচারিত হতো। ভিজুয়্যাল এ জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠানগুলো সে সময়ের জনপ্রিয় সব অভিনয় শিল্পীরা অভিনয় করতেন। গাছ কেন লাগাতে হবে? গাছে উপকারিতা কি? ইত্যদি বিষয়গুলো ঐ সকল অনুষ্ঠানগুলোতে প্রচার করা হতো। তবে এখন আর তেমনভাবে এ সকল অনুষ্ঠানগুলো নির্মিতও হয় না প্রচারিতও হয় না।
পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গাছপালার ভূমিকা অপরিসীম। একটি দেশে মোট ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশে বর্তমানে শতকরা ১৩ শতাংশ বনভূমি রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকির ব্যাপার। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বৃদ্ধিজনিত হেতুর ফলে গত কয়েক শতক ধরে নির্বিচারে বনভূমি, চাষাবাদযোগ্য ভূমি, জলাভূমি, সমভূমি ভরাট করে বসতি স্থাপন করা হচ্ছে।
গাছ লাগানো কেন জরুরি? বিষয়টি জানা খুবই অত্যাবশক। গাছ মূলত কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে বিনিময়ে অক্সিজেন আমাদের মাঝে বিতরণ করে থাকে। যানবাহন, কলকারখানার প্রজ্জ্বলিত আগুন, মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে নির্গত কার্বন-ড্রাই অক্সাইড ক্রমাগত বাতাসকে ভারী করে তুলছে। ফলে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে এবং ক্ষতিকর কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাছ মূলত বাতাস থেকে ক্ষতিকর কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে থাকে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় গাছপালার সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। ফলে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছাসসহ নানা দূর্যোগ ঘটে চলেছে।
পরিবেশের ভারসম্য রক্ষা এবং সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে নিয়ে গাছ লাগানোর বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘লিবারেল মাইন্ডস’। বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে এ সংগঠনটি পরিচালিত হয়ে থাকে। বৃক্ষায়ণ এবং ক্যাম্পাসকে সবুজায়ণ করার লক্ষ্য নিয়ে এ সংগঠনটি গড়ে তুলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সংগঠনটি ‘ফরেস্ট অব আর্ডেন’ নামে একটি ঊদ্যান প্রতিষ্ঠায় মাঠে নেমেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ লাগোয়া খালি একটি জায়গাকে ইংরেজি কথা সাহিত্যিক উইলিয়াম সেক্সপিয়ারের জন্মস্থান আরর্ডেনের সাথে মিলিয়ে নাম করণ করা হয়েছে ‘ফরেস্ট অব আর্ডেন’।
প্রাথমিক পর্যায়ে ফলজ, বনজ,এবং ঔষধি গাছসহ মোট ৩০টি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে গাছ লাগিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সংগঠনটি। সংগঠনটির বর্তমান আহ্বায়ক ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল হায়াত বলেন, “কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়ি পরিবেশেকে আরো বেশি সবুজ এবং সুশীতল ছায়া ঘেরা নিবিড় পরিবেশে রূপ দানের লক্ষ্যে আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। প্রাথমিকভাবে আমরা কিছু সংখ্যক গাছ ‘ফরেস্ট অব আর্ডেনে’ লাগিয়েছি। এ চারাগাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজনকে দায়িত্বও দিয়েছি আমরা।”
সদ্য রোপিত এ চারাগাছগুলো পরিপূর্ণ রূপ ধারণ করলে এক সময় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হবে এ ‘ফরেস্ট অব আর্ডেন’ এমনটাই প্রত্যাশা সংগঠনটির সদস্যদের।