দুর্যোগ মোকাবেলায় চারা সংরক্ষণ

সত্যরঞ্জন সাহা, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ

পদ্মা নদীর তীরে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলা অবস্থিত। এখানে বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সহজেই মাঠে-ঘাটে প্রবেশ করে। তাতে পলি পড়ে কৃষকের ফসলী জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু কৃষকের পক্ষে মৌসুমের কোন সময় বন্যার পানি মাঠে আসবে তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়। আবার কখন পানি বাড়বে, কখন পানি কমবে; কৃষিতে সময় নির্ধারণ আবাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কৃষকের দুর্যোগ সম্পর্কে জানা অজানার কারণেই ঝুঁকি নিয়ে আবাদ করলে কখনও ফসলহানি হয় আবার কখনওবা সফলতা আসে। দুর্যোগ মোকাবেলায় আবাদে খাপ খাওয়ানোর মাধ্যমে চাষাবাদে সফল হওয়া যায়।

69923272_655901798247783_6431409459255312384_n

আন্ধারমানিকের কৃষক সুনিল বিশ্বাস (৫৫) এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘হরিরামপুর এলাকা নিচু হওয়ায় বর্ষা বা বন্যার পানি সহজে মাঠে উঠে যায়। মাঠে পানি উঠলে বা অতি বৃষ্টিতে চারা নষ্ট হয়। ফলে দুর্যোগ মোকাবেলায় উঁচু ভিটায় বা উঠানে সবজি চারা বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি তৈরি সহজ হয়। উঁচু ভিটায় বা উঠানে সবজি চারা রোপণ করার মত উপযুক্ত হতে ৩৫ থেকে ৪০ দিন সময় লাগে। চারগুলো তুলে মাঠের মাটির জো/রোপণ করার উপযুক্ত হলে সবজি চারা রোপণ করি।’

69928555_2459919214266976_3617115903574933504_n
অন্যদিকে বরুন্ডির কৃষাণী সুভা রাণী রায় (৫২) বলেন, ‘আমাদের দেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি কথাটি সত্য। কারণ হলো যেখানে যা রোপণ করি তাই ফল দেয়। ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষক মাটি, পানি, আলো, বাতাসের বিষয়টি বিবেচনা করে আবাদ করে থাকি। আমি বন্যার সময় নিরাপদ খাবারের জন্য বাড়ির সাইস্যায়/উঠানে বিন্দু মরিচ, কালো মরিচ, ভেলাবাইজা, ভাউয়ঝাক মরিচ চারা সংরক্ষণ করি। উক্ত চারা বন্যার পানি নেমে গেলে মাঠে ও উঠানে মরিচ চাষ করি। আমার উঠানের জৈব উপায়ে চাষকৃত মরিচ খেয়েও বাঁচে। অতিরিক্ত মরিচ, শাক-সবজি বিক্রয় করে সংসারে উপকারে আসে।’

আন্ধারমানিকের রেবা সরকার (৫৬) বলেন, ‘বন্যা আর শীত নাই আমার বাড়ির অল্প জায়গায় সারাবছর মরিচ, আদা, হলুদ, পেঁপে থাকবেই। আরো আছে লতা জাতীয় শাকসবজি দুন্দুল, পুইশাক, লাউ, চালকুমড়া। বাড়িতে আবাদ করতে সার বিষ লাগে না, এমনিতেই ভালো হয়। দুর্যোগে (বন্যা) খাবার চাহিদা মিটিয়ে, বন্যার সময় মরিচ বিক্রয়ে ভালো লাভবান হওয়া যায়। তাছাড়াও শাকসবজি নিজেদের খাবার ভালোভাবে চলে যায়। আমার নিকট থেকে মরিচের চারা ও শাকসবজির বীজ নিয়ে গ্রামের মানুষজন চাষ করেন।’

70769896_549645728956391_5609618388297973760_n

প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় বীজ হিসাবে কচুর চারা সংরক্ষণে কৃষকের উঁচু জায়গা নির্ধারণ করে চারা রোপণ করে থাকেন। তাছাড়াও বন্যার পরবর্তীতে চারা রোপণের জন্য উঁচু জায়গায় মরিচ, শাকসবজির চারা তৈরি করে আবাদে সফল হন। উঁচু জায়গায় চারা তৈরিতে কৃষি আবাদে সময় বাঁচে ও ফলন পাওয়া যায় তাড়াতাড়ি। উঁচু জায়গায় আবাদে বন্যার সময় খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়ক হয় বলে কৃষকরা মনে করেন।

happy wheels 2

Comments