সাম্প্রতিক পোস্ট

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে দাড়াঁলো যুবসংগঠনের সদস্যরা

সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান
‘যেখানে বন্যার পানি নামতে দেরি করছে সেখানে উচু জায়গায় বীজতলা তৈরি করা যায়, উচু জায়গায় কলা গাছের ভেলা তৈরি করে চাটাই এর উপর কাদামাটি দিয়ে বীজতলা তৈরি করে দড়ি বা খুটির সাহায্যে গাছের সাথে বেধে রাখা যায়, বীজতলায় উৎপাদিত চার ২ সপ্তাহের মধ্যে রোপণ করা যায়, বন্যার পানি নেমে গেলে বিনা চাষে লালশাক, ডাটা পুই, ধনিয়া, ভুট্টা, সরিষা, মাসকালাই, আলু আবাদ করা যায়, শিম, লাউ এসব সবজির চারার গোড়ায় পানি আসলে চারাগুলো মাটির পাত্রে বা কলার খোলে ভাসিয়ে রেখে পানি সরে গেলে মাটিতে লাগানো যায়, এভাবেই যদি আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকবেলা করার কৌশল গ্রহণ করি তাহলে কৃষকের বীজের যে সংকট তা কাটিয়ে উঠা সম্ভব।’


সম্প্রীতি বীজ সংকট নিরসনে বারসিক ছাত্র ও যুব কল্যাণ উন্নয়ন সংঘ ও বারসিক’র যৌথ আয়োজনে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপরোক্ত কথাগুলো বলছিলেন সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের অভিজ্ঞ কৃষক ও ব্রী কালিয়াকৈর পল্লি উন্নয়ন যুবক সমিতির সভাপতি মো. ইংরাজ আলী মাতবর।
বারসিক কর্মকতা শিমুল কুমার বিশ^াসের স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সংগঠনের সভাপতি শামিম হোসেনের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেনের সঞ্চালনায় বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানে কার্যক্রমের উপর বক্তব্য রাখেন ব্রী কালিয়াকৈর পল্লি উন্নয়ন যুবক সমিতির সভাপতি মো: ইংরাজ আলী মাতবর, মোঃ হায়দার আলী তারা, সমাজ সেবক বিল্লাল উদ্দিন, যুবনেতা মো. এরশাদ আলী, সংগঠনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. নাইম।


শামীম হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ও জীবন জীবিকা মূলত কৃষিনির্ভর। কৃষি কাজের মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় ফসল উৎপাদন করে নিজেদের আয় বৃদ্ধি ও গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। কৃষি কাজের মাধ্যমেই বিশাল এই জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও জিডিপির সমৃদ্ধি এই কৃষির হাত ধরেই। কিন্তু বাংলাদেশের কৃষি যখন মানুষের জীবন-জীবিকার কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে ধাপে ধাপে এগুচ্ছিলো ঠিক তখনই বিশ^ব্যাপি ভয়াবহভাবে দেখা দেয় করোনা নামক ভাইরাস। তবুুও করোনার ভয়কে সাথে নিয়েই অধিক জনবহুল এই দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্ঠির নিশ্চয়তার দায়িত্ব নিয়েছিলেন এই দেশের কৃষক। বন্যায় কৃষকের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এসময় তাদের পাশে আছে যুব সংগঠন।’


সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘করোনাকালিন সময়ে করোনা শনাক্ত মানুষ ও করোনার হাত থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য ভিটামিন সি জাতীয় খাবার, প্রচুর পরিমাণ শাকসবজি ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের কথা চিন্তা করে কৃষকরা চাষ করেছিলেন বৈচিত্র্যময় ফসল। সবুজ ফসলে ভরা ছিল কৃষকের মাঠ ও বসতবাড়ির আঙিনা। কিন্তু করোনার ভয়াবহতা কেটে যাওয়ার আগেই কৃষকের মধ্যে নেমে আসে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা। আমরা কৃষকের সন্তান কৃষকের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। কৃষকের এক ইঞ্চি জায়গাও যেন পতিত না থাকে সেই লক্ষ্যে আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ৫০ জন কৃষকের মাঝে বীজ বিতরণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। কৃষকের জন্য আমাদের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।’


বিল্লাল উদ্দিন বলেন, ‘বারসিক সব সময়ই আমাদের এই ছাত্রদের উৎসাহ দিয়ে থাকে। ছাত্রদের উদ্যোগ আরো গতিশীল করার জন্য বারসিক যেন সব সময়ই তাদের সহায়তা দেয়। আমি জানি বারসিক নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করার জন্য প্রচার কাজ করে থাকে, ছাত্রদের এ ধরনের প্রচার কাজে অংশ নিতে হবে। প্রত্যেক কৃষকই যেন নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করতে উৎসাহিত হয়। আমরা গ্রামবাসী সব সময়ই ছাত্রদের যে কোন ভালো কাজে পাশে থাকবো।’


ইংরাজ আলী মাতবর বলেন, ‘করোনার শুরুতে নি¤œ আয়ের মানুষের মধ্যে খাদ্য সহায়তার যোগান দিয়েছিল সরকারি, বেসরকারি ও সামজিক সংগঠনগুলো। ছাত্র ও যুব কল্যাণ উন্নয়ন সংঘ ও করোনাকালিন সময়ে নি¤œ আয়ের মানুষের মধ্যে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার শারীরিক দুরুত্ব বজায় রাখতে জনসচেতনতা তৈরি, বিলবোর্ড প্রদান, খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করেছে। নিরাপদ সবজি বাজার তৈরি করে মানুষে পাশে ছিল। এবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দিশেহারা কৃষকের পাশে তারা দাঁড়িয়েছে। আমাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘মানবিক ও সামাজিক কাজের মাধ্যমে সামাজিক সংগঠন হিসেবে ছাত্র ও যুব কল্যাণ উন্নয়ন সংঘ গ্রামের সকলে কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। সংগঠনের এই উদ্যোগ একটি মানবিক সমাজ গঠনে সহায়তা করবে। তাদের কাজ দেখে অন্যান্য গ্রামেও এ ধরনের সামাজিক সংগঠন তৈরি হবে বলে আমি মনে করি।’

happy wheels 2

Comments