প্রকৃতিকে বাঁচান, জীবন বদলে যাবে
নেত্রকোনা থেকে হেপী রায়
“প্রকৃতিকে বাঁচান, জীবন বদলে যাবে”। এই মূলভাবকে সামনে রেখে সম্প্রতি (১৭ সেপ্টেম্বর) নেত্রকোনার জ্বালানিবান্ধব সহায়ক টিম এর সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৬ সালে নেত্রকোনা জেলার কর্মএলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষদের সমন্বয়ে এই টিম গঠিত হয়। উক্ত টিম এর সদস্যদের মধ্যে রয়েছে কলেজের অধ্যাপক, স্কুল শিক্ষক, কবিরাজ, জৈব চাষী, জন উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিচালক, নার্সারির মালিক, সমাজকর্মী, ভূগর্ভস্থ পানির সীমিত ব্যবহারকারী, পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী চুলা প্রস্তুতকারী, বায়োগ্যাস ব্যবহারকারী এবং শিক্ষার্থী।
এই টিম এর সকল সদস্য জ্বালানির সীমিত ব্যবহার ও পরিবেশবান্ধব চর্চায় নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। পাশাপাশি স্ব স্ব অবস্থান থেকে অন্যদের সচেতন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই সভাটি ছিল মূলত প্রত্যেকে গত ৬ মাস কি ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন সে বিষয়ে সহভাগিতা করা এবং সামনের দিনে আরও কি ধরনের কাজ করা যায় তার পরিকল্পনা করা। অনুষ্ঠানের শুরুতে বারসিক পরিচালিত বিভিন্ন সমীক্ষা ও গবেষণা যেমন জ্বালানি বৈষম্য : ধনী দরিদ্রের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ, নেত্রকোনা অঞ্চলের চুলাসমূহ, নেত্রকোনার ঋষি সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকা সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধান, নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয়ক গ্রাম গবেষণা জরিপ ইত্যাদির মূল বিষয় ও ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।
সদস্যদের মধ্যে আবু আব্বাছ কলেজ এর অধ্যাপক জিয়াউল হক বলেন,“বারসিক যে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে প্রথমবার শুনলে অবাক হতে হয়।” তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, “যখন ডায়রিয়া রোগে বাংলাদেশের অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছিল তখন একটি বেসরকারী সংগঠনের পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার স্যালাইন তৈরির পদ্ধতি শেখানো হয়েছিল। যা অনেকের কাছেই হাস্যকর বিষয় ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে সবাই ঘরে ঘরে স্যালাইন তৈরি করতে পারে। তেমনিভাবেই বারসিক’র কার্যক্রম সম্পর্কে অনেকে হাস্যকর মন্তব্য করতে পারেন। আমার কাছেও প্রথমবার এমনই মনে হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন এর সাথে যুক্ত থেকে আমি নিজে উপলব্ধি করতে পেরেছি যে, এই বিষয়গুলো জনমানুষের কল্যাণের জন্য। এমন একটা সময় আসবে যখন বারসিক’র কার্যক্রম সবার চর্চার মধ্যে চলে আসবে বলে আমার বিশ্বাস”।
অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও জৈব চাষী বারেক বলেন, “প্রয়োজন বুঝে আমাদের কাজ করতে হবে। আমার যখন ক্ষুধা লাগে তখন আমি আমার পছন্দের খাবার খাই। কিন্তু যখন জমি চাষ করি তখন জমিতে তার প্রয়োজনীয় খাবারই দিতে হয়। আমার পছন্দের খাবার দিলে জমির কাছে গ্রহণযোগ্য হবেনা। সেই রকম ভাবে প্রত্যেকটা জিনিসের নিজস্বতা আছে। এভাবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে”।
“ব্যক্তি উদ্যোগই সবচেয়ে বড়। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার ও অপচয় রোধে সামাজিক আন্দোলন দরকার। আমরা আগে প্রত্যেকে সচেতন হবো তার পর অন্য ৫ জন করে সচেতন করবো। প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহার করতে হবে। তাহলে আমি নিরাপদ থাকবো, ভবিষ্যত সচল হবে”। এভাবেই তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করেন এই টিম এ নতুনভাবে যুক্ত হওয়া শিক্ষক মো. শহীদুল আমিন জুয়েল।