সাম্প্রতিক পোস্ট

গাছগুলো বড় হলে গ্রামের ও হাওরের পরিবেশ সুন্দর হবে

মদন, নেত্রকোনা থেকে সুমন তালুকদার
নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার হাওর অধ্যুষিত গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের ভূমিহীন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশ সরকারের নব নির্মিত গুচ্ছগ্রামটি আফালের (বন্যার ঢেউ) ভাঙন থেকে রক্ষায় সম্প্রতি যুব জনগোষ্ঠীর ব্যবস্থাপনায় পানি সহনশীল ২০০টি হিজল ও করচের চারা রোপণ করা হয়েছে। গোবিন্দশ্রী ধান-নদী-হাওর যুব সংগঠনের উদ্যোগে গুচ্ছগ্রামবাসীদের অংশগ্রহণে ও বারসিক’র সহযোগিতায় গুচ্ছগ্রামের চারপাশে পানি সহনশীল (হিজল, করচ ও মূর্ত্যা) বনায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মেদ। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. কাজল মোড়ল, গুচ্ছগ্রামবাসী ও গোবিন্দশ্রী যুব সংগঠনের সদস্যরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মদ গুচ্ছগ্রাম ও হাওরের পরিবেশ রক্ষায় পানি সহনশীল গাছের বনায়নে বারসিক ও গোবিন্দশ্রী যুব সংগঠনের উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ‘গুচ্ছগ্রামের চারপাশে পানি সহনশীল গাছের চারা রোপণের ফলে পানিতে এসব গাছের কোন ক্ষতি হবেনা। এগুলো বড় হলে কয়েকবছরের মধ্যেই গ্রামের ও হাওরের পরিবেশ সুন্দর হবে। কৃষকরা গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে পারবে, গাছে পাখি বসবে, নারীরা গাছের নিচে বসে গৃহস্থারীর কাজ করতে পারবে এবং ঢেউয়ে বসতভিটার কোন ক্ষয়ক্ষতি হবেনা।’ তিনি গুচ্ছগ্রামবাসীদের উদ্দেশ্য আরও বলেন, ‘যুব সংগঠন ও বারসিক চারাগুলো রোপণ করার পর আপনাদেরকে এগুলোর যত্ন নিতে হবে। গরু-ছাগলে বা বাচ্চারা যাতে এগুলো ভেঙ্গে না ফেলে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই গুচ্ছগ্রাম ও হাওরের পরিবেশ উন্নত ও সুরক্ষিত হবে।’


চারাগুলো রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে গোবিন্দশ্রী ধান-নদী-হাওর যুব সংগঠন এবং তাদের সাথে গুচ্ছগ্রামবাসীরাও অংশগ্রহণ করছেন। গোবিন্দশ্রী ধান-নদী-হাওর যুব সংগঠনের সদস্য মেহেদী হাসান বাবু গুচ্ছগ্রামের চারপাশে পানি সহনশীল গাছের চারা রোপণের উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন, ‘গোবিন্দশ্রী গুচ্ছগ্রামটির নির্মাণ কাজ ২০১৯ সালে সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৯ সালে উপজেলা প্রশাসন ইউনিয়নের ৫০টি দরিদ্র ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে গুচ্ছগ্রামের ৫০টি ঘর হস্তান্তর করে। নির্বাচিত পরিবারগুলোকে ঘরগুলো হস্তান্তরের পর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মেহগনিসহ বিভিন্ন ধরণের গাছের চারা গ্রামের চারিপাশে রোপণ করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বারসিক’র উদ্যোগেও প্রতিটি পরিবারকে একটি করে থাই পেয়ারা ও উন্নত জাতের পেঁপে চারা দেয়া হয়। কিন্তু চলতি বছরে বন্যার পানিতে গুচ্ছ গ্রামের অধিকাংশ গাছই মরে যায়। তাই গুচ্ছগ্রামবাসীদের চাহিদা পানিসহনশীল গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে, যাতে বন্যার পানিতেও চারা মরে না যায়। বারসিক’র সহযোগিতায় গুচ্ছগ্রামবাসীদের চাহিদা পূরণে এবং হাওরের পরিবেশ রক্ষায় যুব সংগঠনের উদ্যোগে আমরা আজ গ্রামের চারপাশে পানি সহনশীল হিজল, করচ ও মূর্ত্যা গাছের চারা রোপণ করছি।’


স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর (মেম্বার) কাজল মোড়ল বলেন, ‘চলতি বছরের বন্যায় গুচ্ছগ্রামের অনেক মাটি ধুয়ে গেছে। পানি সহনশীল না হওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রোপণকৃত গাছের চারাগুলোও মরে গেছে। আফালের ভাঙন থেকে গুচ্ছগ্রামের বসতভিটা রক্ষায় প্রয়োজন পানি সহনশীল গাছের বনায়ন। বারসিক’র সহযোগিতায় গোবিন্দশ্রী যুব সংগঠনের উদ্যোগে পানি সহনশীল হিজল, করচ ও মূর্ত্যা গাছের বনায়ন একটি যথার্থ উদ্যোগ।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ গাছগুলো পানিতে মরেনা, গাছগুলো বড় হলে গ্রামে ছায়া হবে যেখানে বসে গুচ্ছগ্রামবাসী ও হাওরের কৃষকরা বিশ্রাম নিতে পারবে। হাওরের পাখির আবাসন তৈরি হবে, বসতভিটার ভাঙন রোধ হবে, নারীরা মূর্ত্যা বেতের পাটি ও অন্যান্য গৃহস্থালী উপকরণ তৈরী করে পারিবারিক আয় বাড়াতে পারবে।’ তিনি গুচ্ছগ্রামবাসীদেরকে নিজ নিজ ঘরের সামনের গাছের চারাগুলোর যতœ নেয়ার পরামর্শ দেন।


গুচ্ছগ্রামবাসী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমরা গুচ্ছগ্রামে উঠার পরেই বারসিক আমারার প্রইত্যেক পরিবারকে একটা কইরা থাই গয়ব (পেয়ারা) ও পাপদা (পেঁপে) চারা দিছিল। আমরা হেগুলা খুব যতন কইরা লাগাইছি। পাপদা গাছে পাপদাও ধরছিল, কিন্তু বন্যায় সব মইরা গেছে, তবে গয়ব গাছগুলা টিইক্যা আছে। হিজল ও করচ চারা লাগানোতে কয়েক বছরের মধ্যেই গুচ্ছগ্রামে ছেমা (ছায়া) দিব। আমরা গাছের নিচত বইয়া মূর্ত্যা বেতের পাটি ও নানান জিনিস বুনতে পারমু। গাছগুলা লাগানের লাইগা বন্যায় ও আফালে বসতভিটা ভাঙবোনা। গাছগুলাও পানিতে মরতনা, পাখি বইবো। দেখত ও শুনতেও সুন্দর লাগবো।’
আলোচনা শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একটি করচ গাছের চারা রোপণ করে বৃক্ষরোপন কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন করেন। গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কমিশনার মোঃ কাজল মোড়ল ও যুব নেতৃবৃন্দ একটি করে গাছের চারা রোপণ করেন। ৪ সেপ্টেম্বর যুব সংগঠনের সকল সদস্যরা গুচ্ছগ্রামবাসীদের সহযোগিতায় গ্রামের চারপাশে হিজল, করচ ও মূর্ত্যা গাছের চারা রোপন সম্পন্ন করে।

happy wheels 2

Comments