শতবর্ষী অচিন গাছ: হরিরামপুরের সংস্কৃতি ও প্রকৃতির গর্ব
সত্যরঞ্জন সাহা, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
হরিরামপুর উপজেলার লাউতা গ্রামের একটি গাছ, যাকে স্থানীয় মানুষজন “অচিন গাছ” নামে চেনেন, প্রাচীনত্ব ও রহস্যময়তায় ঘেরা। লোকমুখে জানা যায়, প্রায় ৩০০ বছর আগে জন্ম নেওয়া এই গাছের প্রকৃত নাম গুটি কদম। কিন্তু গাছটির নাম না জানা থাকায় স্থানীয় মানুষজন একে অচিন গাছ বলে ডাকেন।
প্রকৃতির বুকে টিকে থাকা এক ঐতিহ্য
অচিন গাছ শুধু একটি বৃক্ষ নয়, এটি স্থানীয় মানুষের আবেগ, অনুভূতি এবং সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। শতাব্দী ধরে এটি প্রকৃতির মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। গাছটিকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা পূজা ও সিন্নি আয়োজন করেন। এই উপলক্ষে এলাকার সকল শ্রেণির মানুষ একত্রিত হয়ে গাছের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান জানায়।
গাছের সুরক্ষায় উদ্যোগ
হরিরামপুরের বৃক্ষপ্রেমিক কালাচাঁন সরকার (৫৫) জানান, ১৫ বছর আগে অচিন গাছকে কেন্দ্র করে একটি মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। সেই মেলায় গাজির গান ও সিন্নির মাধ্যমে মানুষ আনন্দ ভাগাভাগি করেছিল। দীর্ঘ বিরতির পর, বারসিকের সহযোগিতায় এই বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসে গাছ রক্ষায় মানববন্ধন, বৃক্ষরোপণ এবং উৎসবের আয়োজন করা হয়।
স্থানীয়দের আনন্দ–উৎসব
ঔষধ ব্যবসায়ী সুশান্ত সাহা (৫০) বলেন, “অচিন গাছ শুধু একটি বৃক্ষ নয়, এটি প্রাণবৈচিত্র্যের আশ্রয়স্থল। বিভিন্ন পাখি এবং প্রাণীর সাথে মানুষের আবেগও এই গাছের সাথে জরিয়ে আছে।”
সমাজসেবক আব্দুর রশিদ মিয়া (৪৮) বলেন, “অচিন গাছ আমাদের গ্রামের গর্ব এবং পরিচয়ের অংশ। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি গাছের জায়গাটি দান বা ওয়াকফ করে দেব এবং প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট দিনে মেলার আয়োজন করব। বারসিকের সহযোগিতায় এবার আমরা উৎসব সফলভাবে আয়োজন করেছি এবং আগামী বছর আরও বড় পরিসরে আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।”
অচিন গাছ: প্রাণ প্রকৃতির প্রতীক
শতবর্ষী অচিন গাছ শুধু লাউতা গ্রাম নয়, পুরো হরিরামপুরের মানুষের জন্য একটি গর্বের প্রতীক। এটি প্রাণ প্রকৃতি, পাখি, এবং মানুষের আবেগের এক মেলবন্ধন। স্থানীয় জনগণের উদ্যোগে অচিন গাছকে সংরক্ষণ এবং এর ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়।