অভিজ্ঞতা মানে নতুন কিছু
সাতক্ষীরা শ্যামনগর থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
উপকূলীয় প্রাণবৈচিত্র্য নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের জীবন জীবিকার মান উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছেন। কখনো নিজেদের মধ্যে আলোচনা, কখনো অন্যের সমস্যা সমাধান আবার কখনো বা বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান ও সম্পদ আদান প্রদান করে চলেছে। এভাবে দেখে শুনে বুঝে নিজেরা আগ্রহী ও উদ্যোগী হয়ে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছেন। তার মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর অন্যতম।
অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যে বেশ সম্প্রতি কর্মএলাকার কৃষক-কৃষাণীরা নিজেদের মধ্যে পারস্পারিক জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা এবং সম্পদ বিনিময়ে ধারাবাহিকতায় বারসিকের উদ্যোগে এক অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরের আয়োজন করা হয়। এই অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরে কর্মএলাকার কাশিমাড়ি ইউনিয়নের শংকরকাটি ও গোবিন্দপুর, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগর, ইশ্বরীপুর ইউনিয়নের গুমানতলী ও শ্রফিলকাটি এবং শ্যামনগর উপজেলার বাদঘাটা ও জাওয়াখালী গ্রামের আগ্রহী ও উদ্যোগী ২১জন কৃষক-কৃষাণী অংশগ্রহণ করে ধমুঘাট গ্রামের অল্পনা রানীর কৃষি বাড়ি পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনে তারা প্রথমত অল্পনা রানীর কৃষি বাড়িতে তার স্থায়িত্বশীল কৃষি, ফসল ব্যবস্থাপনা, অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের প্লট, বীজ সংরক্ষণ, প্রাণী সম্পদ, ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর হাজোল, পরিবেশবান্ধব চুলা, পুকুরে মাচ চাষ, এবং বিভিন্ন পুরুস্কার ও সম্মাননা স্মারক পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভার শুরতে বারসিক কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ মন্ডল বর্ণ বৈষম্য বিলোপ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, ‘আজ বর্ণ বৈষম্য বিলোপ দিবস। আমরা বিভিন্ন ধর্মের বর্ণের মানুষ বাস করি। আর প্রত্যেক পেশা বা বর্ণের মানুষ আমাদের দরকার আমরা একটাকে বাদ দিয়ে চলতে পারিনা। প্রত্যেক পেশার মানুষ আমাদের জন্য অবদান রেখে চলেছেন। তাদের অবদানের কথা অস্বীকার করার কোন জায়গা নেই। তাই প্রত্যেক পেশা বা বর্ণের প্রতি আমাদের সকলের শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। আজকে আমরা এ অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরের তাদের অবদানে কথাকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের পাশে থাকার জন্য একই সাথে অঙ্গীকার বদ্ধ হওয়ার শপথ নিই।’
এরপর অংশগ্রহণকারীরা অল্পনা রানীর কাছে তার এভাবে এগিয়ে যাওয়ার গল্প শোনেন, কিভাবে ফসল চাষ করেন, কিভাবে বীজ সংরক্ষণ করেন, কিভাবে বীজতলা তৈরি করেন, ফসল ব্যবস্থাপনা কিভাবে করেন, মৌসুম উপযোগী সময়ে কি কি ফসল লাগান, কি রকম লাভ হয়, সংগঠন কবে ও কিভাবে তৈরি কতজন সদস্য, সংগঠনের কি কাজ করেন, কিভাবে পুরুস্কার পেলেন এরকম অনেক বিষয় তার কাছে জানতে চান এবং অল্পনা রানী তাদের প্রশ্নে উত্তর দেন।
পরিদর্শনে অংশগ্রহণকারী নাজমা, শেফালী, স্বপ্নারা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘অল্পনা রানী অনেক দূরে এগিয়ে গিয়েছে অল্প সময়ে। আমরাও ইচ্ছা করলে তাঁর মতো এগিয়ে যেতে পারবো। এর জন্য আমাদের চেষ্টা থাকতে হবে। আমরা আজকে এখানে আসলাম। আগামী বছর আমাদের ঔখানে এই সফর করতে পারবো সেরকম বিশ্বাস আছে আমাদের।’ আগামীতে শংকরকাটি গ্রামে একটি নারী সংগঠন ও দুটি কৃষি বাড়ি এবং জাওয়াখালী গ্রামে একটি সংগঠন ও একটি কৃষি বাড়ি তৈরির কথা জানান তাঁরা।
অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ‘আমরা এটা মনে করি যে অভিজ্ঞতা মানে নতুন কিছু। আজ নতুন কিছু জানলাম যা আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আমাদের সংগঠন তৈরি এবং এরকম বাড়ি তৈরির জন্য অল্পনা রানী ও বারসিককে সহায়তা করতে হবে। তাহলে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো।’