কোয়েলের খামারে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছে ঘিওরের মতিয়ার
আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ থেকে
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ক্রমশই বাণিজ্যিকভিত্তিক কোয়েল পালন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কোয়েল পাখি পালন করে স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভবান হচ্ছেন মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার মৃত. খলিল উদ্দিন মোল্লার ছেলে মতিয়ার রহমান (৬২)। বর্তমানে তিনি দুই হাজার কোয়েল পাখি পালন করলেও অতি দ্রুতই তিনি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আরো পাঁচ হাজার কোয়েল পাখি পালনের প্রচেষ্টায় রয়েছেন বলেও জানান।
ঘিওর উপজেলার জনতার মোড় এলাকার নিজ বাড়িতে কোয়েল পালনের নানান দিক নিয়ে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে। এসময় তিনি জানান, পেশাগত জীবনে সরকারি কলেজের হিসাব রক্ষক ছিলেন। অবসরে আসার পর সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে তিনি শুরু করেছিলেন শেয়ার বাজারের ব্যবসা। কিন্তু ওই ব্যবসাই তাকে আর্থিকভাবে পুঙ্গু করে দিয়েছিল। সবশেষে তিনি নিঃস্ব হয়ে বাড়িতেই বসে ছিলেন একবারে বেকার অবস্থায়।
এরপর তিনি নিজের ইচ্ছায় তার বাড়িতেই কোয়েল পাখি পালনের ব্যবসা করবেন বলে মনস্থির করলেন। সেই উদ্দেশেই তিনি বছর খানেক আগে গাজীপুরের টঙ্গী থেকে ৫শ’ কোয়েল পাখির বাচ্চা ক্রয় করেন। যে বাচ্চার ডিমগুলোই এখন তার ভাগ্য বদলের হাতিয়ার। এছাড়া কয়েকদিন আগে তিনি আরও দেড় হাজার বাচ্চা ক্রয় করেছেন। কিন্তু বিদ্যুত সরবারহ ঠিক মতো না থাকার কারণে সেখান থেকে অনেক বাচ্চাই মারা গেছে। তাতেও হতাশ হননি তিনি বরং নব উদ্যমে কোয়েল পালন আরও প্রসারিত করার প্রত্যয়ের স্বপ্নে বিভোর তিনি।
দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক মতিয়ার জানান, এক দিন বয়সের কোয়েল পাখির ওই বাচ্চাগুলো গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে মাত্র ১১ টাকা দিয়ে ক্রয় করেন তিনি। এরপর সেই বাচ্চাগুলো অত্যন্ত যতœসহকারে পালন করা শুরু করেন। তার নিজ বাড়িতেই ২৪ ফুট লম্বা আর ১৩ ফুট পাশের একটি টিনশেড ঘর রয়েছে। এখানেই তিনি এক হাজার কোয়েল পাখি পালন করছেন অনায়াসে। ৪৬ দিন বয়স থেকেই কোয়েল পাখিগুলো ডিম দিতে শুরু করে। একটানা ১৪ মাস এভাবেই ডিম দেয় পাখিগুলো। এতে করে প্রতিবছর একেকটি পাখি থেকে বছরে কমপক্ষে ২৫০টি ডিম পাওয়া যায়। এভাবেই পর্যায়ক্রমে কমপক্ষে চার বছর সময় পর্যন্ত প্রতিটি পাখি ডিম দিতে থাকে বলেও জানান তিনি। স্থানীয় বাজারে প্রতি হালি ডিমের মুল্য ১০ টাকা।
মাত্র ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করা মতিয়ার রহমান আরো জানান, প্রতিদিন মাত্র ২৫ গ্রাম খাবার খাওয়া কোয়েল পাখির রোগ কম হলেও পাখিগুলোকে সবসময় পর্যাপ্ত আলোর মধ্যে রাখতে হয় বলে বিদুৎ না থাকলে ঝামেলায় পড়তে হয়। এছাড়া একদিন বয়সের বাচ্চাগুলো বড় হওয়ার পরপরই সেখান থেকে পুরুষ পাখিগুলোকে বিক্রি করে দিতে হয়। এতে করে মেয়ে পাখিগুলো দীর্ঘদিন একটানা ডিম দিতে পারে।
এসময় মতিয়ার রহমান জানান, এখন তিনি ৫শ’ ডিম বিক্রি করে মাস শেষে সব খরচ বাদে যে টাকা আয় করেন তাতেই তার পরিবারের জন্যে অনেকটা উপকারী। তবে খুব শিঘ্রই তিনি এক হাজার ডিম উত্তোলন করতে পারলে তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হবে না বলে মন্তব্য তার।
ঘিওর উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তা ডাঃ মো. আনোয়ার হোসেন জানান, অল্প জায়গা ও অল্প ব্যয়ে কোয়েল পাখি পালন করে খুব স্বল্প সময়েই অধিক আয় করা সম্ভব। তিনি বলেন, “এ বিষয়ে যে কোন পরামর্শের জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে সব সময় তৎপর রয়েছি।” খুব অল্প সময়েই ওই উপজেলায় মতিয়ার রহমান ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন খামারী এই ব্যবসায় আসবেন বলেও মন্তব্য তার।