মাছের রাজ্য মাছ শুণ্য
হাওরাঞ্চল, কিশোরগঞ্জ থেকে টিটু দাস::
দেশের অন্যতম মৎস্য ভান্ডারখ্যাত কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর উপজেলাগুলোতে বর্তমানে দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছের অভাব দেখা দিয়েছে। অবৈধ কারেন্ট জাল, কোনা ভেড়, ভীম জাল, অসাধু জেলে, নাব্যতাহীন নদী আর জীব বৈচিত্রের ধ্বংস নিয়েই এখনও টিকে আছে কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলের ১১ হাজার ৭৫২ হেক্টর’এ অবস্থিত ১৭৯ টি জলমহাল। যেখানে থেকে প্রতি বছর মিঠাপানির চিংড়িসহ বহু প্রজাতির দেশীয় মাছ দেশসহ বিদেশে রপ্তানি করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় হয়ে থাকে।
জেলা মৎস অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, হাওরাঞ্চলে মিঠাপানির ২৬০ টি প্রজাতির মাছ রয়েছে। এর মধ্যে মারাত্মকভাবে বিপন্ন ১২টি প্রজাতির মাছ। আর ২৮টি প্রজাতির মাছ মোটামোটি বিপন্ন।
হারিয়ে যাওয়া মাছের সংখ্যা ও নাম জেলা মৎস্য অধিদপ্তরে সংরক্ষিত না থাকলেও স্থানীয় মৎস্য জীবিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় শতাধিক দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেছে হাওর অঞ্চল থেকে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য মাছগুলো হচ্ছে নামাবিল, সিনং, ভূম মাছ, চেলাপাতা, কাশি খয়ারা, ধারকিনা, লালচান্দা, তিতপুটি, নেফটানি, নাপিত কৈই, বাঘা গোতম, নাঙ্গাটালু, গোলা, কাঙলা, মধু, আকস মাছ, পান মাছ, মাসুল মাছ, কোরাল মাছ, রানী বা রানদী, হিলুরীন, চেলা, বিলুশৈল, মহাশৈল এবং এলং মাছ।
এছাড়াও হারিয়ে যাওয়ার পথে কাতল, বামট বা বামস, কৈলাশ, কাল বাউশ, চিতল, নানীন, ভাচাঁ, গাওরা, গাগলা, পাবদা, বাগাই, রিডা, পুমা, লাচু, টেকা, লিকো বা কাজলী, বেদা বা মিনিক, কাদলা, খাইক্কা, পাঙ্গাস, মৃগেল, শিং, মাগুর, কৈই, চান্দা, বাইলা ও টেংরা, বাতাই বা আলনি। এসব মাছও এখন আর আগের মত পাওয়া যায় না।
আবহাওয়ার বৈরী আচরণ ও অসাধু জেলেদের শিকার হয়েও টিকে আছে বোয়াল, রুই, টেংরা, গোলসা, লটকটি, বাইম, তারা বাইম, চিকড়া বাইম, পুটি, চেলা, মলা-ঢেলা, চাইপলা, টাকি, ল্যাইটা, আইর গাঘট, শৈল, গজার, চান্দা, গোতোম প্রভৃতি মাছ।
হাওরবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এক সময় হাওর ছিল মৎস সম্পদের ভান্ডারের বিশাল আবাসস্থল। এসব মাছ জলবায়ুর বিরুƒপ প্রতিক্রিয়ার আর মানব সৃষ্ট দূর্যোগের কারনে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে। নদীর নাব্যতা হারানো এবং মৎস্য অভয়াশ্রম না থাকায়, কৃষি জমিতে মাত্রারিতিক্ত সার প্রয়োগ, অবৈধ জাল ব্যবহার করে নির্বিচার মৎস্য নিধন, কীটনাশকের মাধ্যমে মাছ ধরা ও জীববৈচিত্র ধবংসের কারনেই দেশীয় প্রজাতির মিঠাপানির মৎস্য সম্পদের বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলা মৎস অধিদপ্তরের জেলা মৎস কর্মকর্তা ড. মো. মুজিবুর রহমান জানান, নদী ভরাট, ইঞ্জিন চালিত নৌকাগুলোর ফুয়েল পানিতে পড়ে পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কারনে মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, তবে আশার কথা হচ্ছে সরকার হাওরে মৎস সম্পদ রক্ষার্থে ৫ টি প্রকল্প চালু করেছে।