ফুলেল বসন্ত! মধুময় বসন্ত!

ফুলেল বসন্ত! মধুময় বসন্ত!

মানিকগঞ্জ থেকে এম. আর. লিটন
পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত এলেই বাঙালির মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথের সেই পরিচিত গান-

“আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে,
এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়…।”
কিংবা,
“রঙ লাগালে বনে বনে, ঢেউ জাগালে সমীরণে,
আজ ভুবনের দুয়ার খোলা, দোল দিয়েছে বনের দোল।”

 

আজ পহেলা ফাল্গুন। বসন্তের এই আগমনে প্রকৃতির সাথে তরুণ হৃদয়েও লেগেছে দোলা। সকল কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, বিভেদ ভুলে, নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে বসন্তের উপস্থিতি। তাই কবির ভাষায়- ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’। ফুলেল বসন্ত, মধুময় বসন্ত। যৌবনের উদ্দামতা বয়ে আনার বসন্ত আর আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও উদ্বেলতায় মন-প্রাণ উজাড় করার দিন।

2
নতুন সাজে মন রাঙিয়ে গুণ গুণ করে অনেকেই গেয়ে উঠে- “মনেতে ফাগুন এলো…।” বসন্তের আগমন বার্তার সাথে সাথে আসে বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতির অন্যতম দু’টি উৎসব, নিয়ে আসে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ও বাংলা একাডেমি আয়োজিত বার্ষিক ‘একুশে বইমেলা’। বসন্ত আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্তে রঙিন পুষ্পিত রক্তের স্মৃতির ওপর রঙ ছড়ায়। ১৯৫২ সালের ৮ই ফাল্গুন বা ২১শে ফেব্রুয়ারি’র পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ার যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে।

বসন্তের প্রথম দিনে অসংখ্য নারী বাসন্তী রঙে নিজেকে রাঙিয়ে তোলেন। গায়ে হলুদ আর বাসন্তী রঙের শাড়ি জড়িয়ে তরুণী ও পাঞ্জাবি পরা তরুণরাও এদিন নিজেদের রঙিন সাজে সাজাতে কম যান না! বসন্ত তারুণ্যেরই ঋতু। তাই সবারই মনে বেজে ওঠে- ‘বসন্ত ছুঁয়েছে আমাকে। ঘুমন্ত মন তাই জেগেছে, পহেলা ফাল্গুন আনন্দের দিনে।’
বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ঋতু বসন্ত। বসন্ত ঋতু ফাল্গুন এবং চৈত্র মাস নিয়ে। ফাল্গুন মাসের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন’ বা ‘বসন্ত উৎসব’ হিসেবে। বাঙালির নিজস্ব সার্বজনীন প্রাণের উৎসবগুলোর মাঝে এই উৎসবটি এখন গোটা বাঙালির কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। এই উৎসব এখন প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে।
মোঘল স¤্রাট আকবর ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘বসন্ত উৎসব’। তবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ইতিহাসে ১৪০১ বঙ্গাব্দ থেকে ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন শুরু হয় বলে তথ্য পাওয়া যায়। প্রাচীন প্রথা বা বিশ্বাস, বাংলার জাগরণ বা ভালোবাসা যে রঙেই সাজুক বসন্তজুড়ে থাকবে বাংলার প্রতিটি মানুষের মনে। পোশাকে, সাজে, শুভেচ্ছা বিনিময়ে দিনভর মুখর থাকে প্রতিটি অফিস, ক্যাম্পাস ও পথ-ঘাট।

1
একইভাবে ঋতু রাজ বসন্তকে বরণ করে নিল মানিকগঞ্জ জেলার জাগীর ইউনিয়নের দিয়ারা ভবানীপুর গ্রামের ‘মানবকল্যাণ কিশোরী সংগঠন’র সদস্যরা। প্রকৃতির বিভিন্ন ধরনের ফুলের প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে বসন্তকে স্বাগত জানায়। মানবকল্যাণ কিশোরী সংগঠনের উদ্যোগ ও আয়োজনে এবং বারসিক মানিকগঞ্জ রিসোর্স সেন্টার এর সহযোগিতায় দিনব্যাপী বসন্ত উৎসব উপলক্ষে ফুল উৎসব, পাঠচক্র উদ্বোধন ও বনভোজন অনুষ্ঠিত হয়। কিশোরীরা প্রত্যেকেই বিভিন্ন ধরণের বই দিয়ে পাঠচক্রের উদ্বোধন করে।
কিশোরীদের কন্ঠে “আমরা করবো জয়” এই গান পরিবেশনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। মানবকল্যাণ কিশোরী সংগঠনের সভাপতি রিক্তামনির সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বারসিক মানিকগঞ্জ রিসোর্স সেন্টার এর আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায়, প্রোগ্রাম অফিসার রাশেদা আক্তার, দিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খালেদা আক্তার ও কিশোরী সংগঠনের সদস্য এবং অভিভাবক। বসন্ত বরণ ও পাঠচক্র উদ্বোধন শেষে দিয়ারা ভবানীপুর গ্রামের পাশের গ্রাম গাড়াকুল নদীর পাড়ে একটি কাঠ বাগানে তারা বনভোজন করে। এসময় কিশোরীদের গানে গানে মুখরিত হয়ে উঠে চারপাশ। কলা পাতায় খাবার পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

happy wheels 2

Comments