বর্ষা এলে আমাদের কদর বাড়ে, বাড়ে না মজুরি
রাজশাহী থেকে জাহিদ আলী
সমতল ভুমির আদিবাসীর একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে উত্তরাঞ্চলের বরেন্দ্র অঞ্চল। রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রায় ৩ লাখ আদিবাসীর বসবাস। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এদের শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগই কৃষি কাজে নিয়োজিত। এর মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার আদিবাসী অন্যের জমিতে দিনমজুর হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করেন। পুরুষের পাশাপাশি আদিবাসীরা নারীরাও সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন। ধানের চারা রোপণে নারীরা বিশেষ পারদর্শী তবে জমি নিড়ানী, ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজে তাদের দক্ষতা বেশি দেখা যায়। ফলে এ অঞ্চলে কৃষি কাজে শ্রমিক হিসেবে আদিবাসী নারী শ্রমিকদের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক।পরিবার সামলানোর পাশপাশি নারী শ্রমিকরা শ্রম দিয়ে পরিবারে জন্য আনছে স্বচ্ছলতাও!তবে পুরুষদের সমান কাজ করেও নায্য মজুরি থেকে তারা বঞ্চিত।
এই প্রসঙ্গে দেওপাড়া ইউনিয়নের ঈশ্বরীপুর গ্রামের এ্যামিলি মুর্মু জানান, তারা স্বামী-স্ত্রী দুইজনই জমি কাজ করেন। তাঁর স্বামী মুজরি হিসেবে ১৫০ টাকা ও দেড় কেজি চাল পান। কিন্তু তিনি ১২০ টাকা আর খোরাকিসহ দেড় কেজি চাল পান বলে জানান। তিনি আরও জানান, নারীদের কাজের কোন অভাব হয় না। একটি জমিতে কাজ করার সময়েই অন্য জমিতে কাজ করার অর্ডার পান তারা। এছাড়া অনেকসময় গৃহস্থরা বাড়িতে গিয়ে কাজের অর্ডার দেন।
একই কথা জানান কৃষানী শ্যামলী মুর্মু। তিনি বলেন, “বর্ষার এই সময়টিতে আমাদের কদর বাড়ে, কাজের কোন অভাব হয়না। প্রায় দুই মাস জমিতে ধান লাগানোর কাজ করা যায়। ধান লাগানোর কাজ শেষ হলে জমি থেকে ঘাস তোলার কাজ করা যায়।” তিনি আরও বলেন, “বর্ষার এই সময়ে এলাকায় মানুষ বেশি ধান লাগায়। বর্ষা শেষে ধান কাটা, মাড়াইয়ের কাজ করা যায়। ধান কাটা ও মাড়াই জিন (চুক্তি) হিসেবে করা হয়। তারপরও পুরুষরা যে কাজ করে বেশি টাকা পায় আমরা সেই কাজ করেও কম টাকা পাই।”
কৃষাণী সেফালী বিশ্বাসের অভিজ্ঞতাও একই। তিনি বলেন, “সারাবছরই আমাদের কাজ করে খেতে হয়। বিয়ের আগে বাপের বাড়িতে কাজ করলেও শ্বশুরবাড়িতে বিয়ের কিছুদিন পরেই মাঠে নামতে হয়। বর্ষা ও শীতে ধান লাগানো, কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করলেও বছরের এই সময়ের কাজের টাকা দিয়েই সংসারের বাড়তি খরচ করা হয়।” তিনি বলেন, “আমরা কাজ করে যা আয় করি তা সংসারের অনেক কাজে ব্যবহার করতে পারি। বিশেষ করে ঘরের টিন লাগানো, বাচ্চাদের নতুন জামা কাপড় দেয়া, লেখাপড়ার বাড়তি খরচ, কিস্তি পরিশোধের মত কাজগুলো এই টাকা থেকেই করা হয়। তবে একই কাজ করার পরও পুরুষের তুলনায় আমাদের মজুরি কম।”
আদিবাসী নারীদের এই শ্রমবৈষম্য দিনের পর দিন চলে আসলেও কাজ না পাওয়ার ভয়ে তারা কেউ মুখ খুলতে পারছেন না। পরিশ্রমের নায্য মজুরি না পাওয়ায় বরাবরের মত ভাগ্যকে দুষছেন ওই আদিবাসী নারী।