আকাশলীনা ইকোট্যুরিজম -পর্যটকের হৃদয় টানে
সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল
পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। বিশ্ব ঐতিহ্যখ্যাত নয়নাভিরাম এ প্রকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি খ্যাত সুন্দরবনের পাদদেশে গড়ে উঠেছে আকাশনীলা ইকো ট্যুরিজম নামের মিনি পার্ক। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমের সর্বশেষ জেলা সাতক্ষীরা জেলার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ বাজারের সন্নিকটে মালঞ্চ নদীর চরে গড়ে উঠেছে আকাশনীলা ইকো ট্যুরিজম। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পাবলিক ইন ইনোভেশান সার্ভিস প্রকল্পের আওতায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুস সামাদের নির্দেশনা মোতাবেক সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সুন্দরবনের কোলঘেঁষে নির্মিত হয়েছে আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার। পশ্চিম সুন্দরবনের প্রবেশদ্বারে মুন্সিগঞ্জে গড়ে উঠা আকাশনীলা ইকো ট্যুরিজম মিনি পার্ক তৈরি করা হয়েছে মূলত সুন্দরবন ভ্রমণ পিপাসুদের কথা চিন্তা করেই। কেননা সুন্দরবন দর্শনের জন্য প্রতিবছর দেশী ও বিদেশী প্রচুর পর্যটক সমাগম ঘটে।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুস সামাদ জীবনান্দ দাশের আকাশলীনা কবিতা অবলম্বনে মিনি পর্যটন কেন্দ্রটির নামকরণ করেছেন আকাশলীনা ইকোট্যুরিজম। উপকূলীয় শ্যামনগরে ইকো ট্যুরিজম প্রকল্পের কাজ সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ এস. এম. জগলুল হায়দার এর সার্বিক সহযোগিতায় ও বিভাগীয় কমিশনারের পরামর্শে শ্যামনগরের ইউএনও আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম মহসীন উল মুলক, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জাফর রানা ও কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দীনসহ সংশ্লিষ্ট জনের একান্ত প্রচেষ্টায় উন্নয়ন অব্যহত রয়েছে।
সুন্দরবন ভ্রমণ পিপাসু দর্শনার্থীদের জন্য যাবতীয় আধুনিক সুযোগ সুবিধা বজায় রেখে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ১৭ একর জমি নিয়ে ইকো ট্যুরিজম সেন্টারটির যাত্রা শুরু হয়। তবে ভবিষ্যতে আয়তন বৃদ্ধির পাশাপাশি আরো সুদুর প্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানালেন কর্তৃপক্ষ। সুন্দরবনের পাশে মুন্সিগঞ্জে পর্যটকদের থাকা খাওয়া, ঘোরা ফেরার সুবিধার্থে জোয়ার, সুশীলন, বর্ষা ও ক্যারাম মুরা ইকো পার্ক গড়ে উঠলেও সরকারি উদ্যোগে আকাশনীলা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার প্রস্তুত করা হচ্ছে সুন্দরবন ভ্রমণপিপাসু দেশী বিদেশী পর্যকটদের কথা চিন্তা করেই। পশ্চিম সুন্দরবনকে লোকালয় থেকে বিভক্ত করা মালঞ্চ নদীর চরে গড়ে উঠা সুন্দর মনোরম পরিবেশে আকাশনীলা ইকো ট্যুরিজম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত আধুনিকতার ছোয়ায় ভরপুর এ ইকো ট্যুরিজম সেন্টার।
সামগ্রিক উন্নয়ন তরান্বিত করার লক্ষ্যে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ট্যুরিজম সেন্টারে দর্শনার্থীদের প্রবেশ ফি জন প্রতি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা। খাওয়ার সুবিধাসহ রয়েছে গাড়ি পার্কিং সুবিধা। সারি সারি সুবিশাল কেওড়া গাছের মধ্য দিয়ে আঁকা বাঁকা মনোরম দৃশ্যধারী সরু রাস্তা, মাঝে মাঝে বসার ঘর যেন সতিকার এক প্রাকৃতিক স্বপ্নপুরি। যেখানে দেখা মিলবে নানা প্রজাতির মাছ, কাঁকড়া, পাখ-পাখালী ও বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। এছাড়া দেখা যাবে সুন্দরবন নির্ভর জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার জীবন্ত চিত্র। বাওয়ালী নিয়ে যাচ্ছে জ্বালানী, দুনুরী ধরছে বরশি দিয়ে মাছ, মৌয়ালী সংগ্রহ করছে মধু, মাছ ও কাঁকড়া ধরছে জেলে। ভাগ্য সহায়ক হলে দেখা মিলবে কুমির, হরিণ, বানর, সাপ, শুকোর ও প্রিয় বড় মামার (রয়েল বেঙ্গল টাইগার) সাথে।
পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় হাজারো দর্শনার্থীর ভীড়ে মুখরিত আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার। এ মিনি পার্কে গেলে মনটা ভেসে যায় সুর ও ছন্দে “শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে মালঞ্চ নদীর তীরে, স্ব-মহিমায় উঠল সেথায় আকাশলীনা গড়ে। নজর কাড়ে হৃদয় নড়ে গেলে আকাশলীনায়, বাঘ, হরিণ আর পাখ-পাখালি মিলবে দেখা সেথায়”।
এই প্রসঙ্গে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সায়েদ মো. মুনজুর আলম বলেন,“খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক কিছু টিআর বরাদ্দ করে এবং শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসনের কিছু বরাদ্দ একত্রিত করে ‘এ টু আই’ প্রকল্পের ইনোভেশন ইন পাবলিক সার্ভিস এর আওতায় কমিউনিটি বেজড কালচারাল ইকো ট্যুরিজম প্রকল্পের মাধ্যমে আকাশলীনা ইকোটুরিজম সেন্টারটি গড়ে তোলা হয়। যেখানে উপকুলীয় এলাকার পেশাজীবিদের জীবনজীবিকার মিউজিয়াম, ফিস মিউজিয়াম, ওয়াচ টাওয়ার ও থাকার ব্যবস্থাসহ সব ধরনের আধুনিক ব্যবস্থা থাকবে।”
প্রতিদিন বহু দুর দুরান্ত থেকে সুন্দরবন ভ্রমণপিপাসু অনেক দর্শনার্থী পাড়ি জমায় আকাশলীনায় প্রকৃতির নির্মল পরিবেশে থেকে হৃদয়কে খানিকটা হালকা করার জন্য। ডুবু ডুবু সুর্যের রক্তিম সন্ধ্যায় সুন্দরবনের কোলে বসে নদীর কুলকুল ধনীতে হৃদয় নেচে উঠবে যে কারোরই। নির্জনে মনের অজান্তে সহসা মনটা চলে যাবে কবি দুনিয়ায়। গুনগুনিয়ে আবেগী মন হয়তো বা গেয়ে উঠবে ধন ধান্যে পুষ্প ভরা আমাদের এ বসুন্ধরা। অবকাঠামো উন্নয়নসহ আকাশলীনা ইকোট্যুরিজম সেন্টারটির সামগ্রিক কাজ সম্পন্ন হলে সুন্দরবনে পর্যটক সংখ্যা বাড়বে। ঘটবে বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের প্রসা