তিথি সরেন: সবজি চাষে সচ্ছলতা ও গ্রামের প্রেরণা
রাজশাহী থেকে রিনা মাহালী
রাজশাহীর তানোর উপজেলার যোগিশো গ্রামের আদিবাসী কৃষাণী তিথি সরেন, যিনি বর্তমানে সবজি চাষ এবং কেঁচো সার উৎপাদনের মাধ্যমে আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করেছেন। তিনি যোগিশো আদিবাসী কৃষাণী সংগঠনের সদস্য এবং একজন আদর্শ শতবাড়ি মডেলের উদ্যোক্তা।
তিথির পরিবারে ৮ জন সদস্য রয়েছেন, যাঁদের সবাই কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। পরিবারের জমিতে চাষাবাদ করার পাশাপাশি, তিথি বাড়ির পাশে থাকা পতিত জায়গায় বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করছেন। বারসিকের সহযোগিতায় তিনি জৈব পদ্ধতিতে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে মনোনিবেশ করেছেন।
তিথি সরেনের মডেল শতবাড়িতে রয়েছে ৩ জাতের শিম, ২ জাতের পুঁই, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, মরিচ, টমেটো, সজিনা, পেঁপে, করলা, এবং অন্যান্য সবজি। তিনি সবজির বীজ সংরক্ষণ শুরু করেছেন, যা সবজি বৈচিত্র্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।
২০২৩ সালের শীতকালে তিথি প্রায় ৪,৫০০ টাকার সবজি বিক্রি করেছেন এবং কিছু সবজি প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিনিময়ও করেছেন। তার উদাহরণ দেখে গ্রামের নারীরা সবজি বীজ সংরক্ষণ ও চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
তিথি সরেন কেঁচো সার তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ উদ্যোগে ৪টি চাড়ি কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন। বারসিকের সহায়তায় কেঁচো ও সরঞ্জাম পেয়ে তিনি এই উদ্যোগকে আরও সম্প্রসারিত করেছেন। তিথি বলেন, “কেঁচো সার দিয়ে সবজি উৎপাদন করলে শরীর, স্বাস্থ্য এবং মাটির গুণাগুণ ভালো থাকে।” তার এই উদ্যোগ দেখে গ্রামের দুইজন কৃষাণীও কেঁচো সার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন।
তিথি সরেন তার মডেল শতবাড়ি আরও সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি একটি বড় বীজ বাড়ি তৈরির স্বপ্ন দেখছেন, যেখানে গ্রামের মানুষ এবং আশেপাশের জনগোষ্ঠী বীজ বিনিময়ের সুযোগ পাবে। বারসিকের সহযোগিতায় তিথি সরেন শুধু নিজের পরিবারকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করছেন না, বরং গ্রামের অন্য নারীদের জন্যও একটি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন।
তিথি সরেনের এই গল্প আমাদের শিখিয়েছে, সঠিক উদ্যোগ, পরামর্শ, এবং প্রশিক্ষণ থাকলে নারীরাই হতে পারেন স্থায়িত্বশীল কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নের অগ্রদূত।