যমুনা তীরে ২শ’ বছরের ঐতিহ্য মহাবারুণী স্নানে মানুষের ঢল

যমুনা তীরে ২শ’ বছরের ঐতিহ্য মহাবারুণী স্নানে মানুষের ঢল

আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ ॥

হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব মহাবারুণী স্নান উপলক্ষে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় যমুনা নদীর তীরে মানুষের ঢল নেমেছিল। হিন্দু ধর্মের প্রথা অনুযায়ী বারুণী তিথিতে এখানে স্নান অনুষ্ঠিত হয়। কথিত আছে, এ তিথিতে এখানে  স্নান করে এক মনে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে ঈশ্বর সব পাপ ক্ষমা করে দেন। যদিও এটা হিন্দুদের একটা ধর্মীয় উৎসব। তবে এ উৎসব ও মেলায় সব ধর্মের মানুষদের থাকে অংশগ্রহণ। প্রতিটি বাড়িতে থাকে উৎসবের আমেজ। বেড়ে যায় আত্মীয়স্বজনদের আনাগনা। এ যেন আন্তরিকতার মিলন মেলা।

1 (1)
উৎসবের প্রথম দিন গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত স্নান চলতে থাকে। স্নান করতে আসা প্রত্যেক পুণ্যার্থীকে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শত শত পূণ্যার্থী নারী-পুরুষ এ স্নান উৎসবে অংশ নেন। এদিকে, এ স্নান উৎসবকে ঘিরে ৫ দিনব্যাপী মেলা শুরু হয়েছে। কবে এই মেলা শুরু হয়েছে তা সঠিকভাবে কেউ বলতে পারেনা। তবে স্থানীয়দের ধারণা এ উৎসবের ঐতিহ্য ২ শত বছরেরও বেশি।

কয়েক শতাব্দীর প্রাচীন এ স্নানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বয়সী অসংখ্য পুণ্যার্থী অংশ নেন। আরিচা ঘাটের পাশে যমুনা নদীতে অনুষ্ঠিত হয় স্নান উৎসব। শিবালয় বন্দর ব্যবসায়ী সমাজকল্যাণ সমিতির ব্যবস্থাপনায় সুষ্ঠুুভাবে উৎসব সম্পন্ন হয়। উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু মহাজোট, ইসকন, রামকৃষ্ণ মিশনসহ স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন অনুষ্ঠান আয়োজনে সহযোগিতা করে।

1 (2)
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সাধারণ সম্পাদক রথীন সাহা ও হিন্দু মহাজোট সভাপতি রামানন্দ পাল জানান জানান, সনাতন পন্থী নারী-পুরুষ সারাবছর পাপ-গ্লানি, হিংসা, বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকার উদ্দেশ্যে এ মহা স্নান উপলক্ষে যমুনায় অবগাহন করে তৃপ্তি লাভ করেন। স্নান উপলক্ষে আগত পুণ্যার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন সংগঠন প্রসাদ বিতরণ করে।

শিবালয় বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত খন্দকার জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে এ মহা স্নানের লগ্ন শুরুর সাথে-সাথে যমুনা পাড়ে শুরু হয় পুণ্যার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। স্নান উপলক্ষে যমুনা পাড়ে পাঁচ দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় পুলিশ, গ্রামপুলিশ, সমিতির নেতৃবৃন্দ ও নৈশপ্রহরীর সমন্বয়ে সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মেলায় দূর-দূরান্তের বহু ব্যবসায়ী পসরা সাজিয়ে বসেছে। শিশু-কিশোরদের চিত্তবিনোদনে নাগরদোলা, পুতুল নাচ, সার্কাস ও জাদু প্রদর্শনীসহ রকমারি খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।

1 (3)
যমুনার তীরে বসা ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় চিত্ত-বিনোদনের জন্য সার্কাস, পুতুল নাচ, নাগরদোলা, বায়স্কোপসহ নানা আয়োজন রয়েছে। হ্যান্ডিক্রাফট, খেলনা, প্রসাধনী, সাজ-সজ্জার নানা দোকান, কাঠ, বেত, মাটি, লোহার তৈরি আসবাবপত্রসহ গৃহকাজে ব্যবহার্য সামগ্রীর দোকান, মিষ্টি, বিন্নি, খৈই, সাজ, বাতাসাসহ নানা ধরণের খাদ্য সামগ্রীর দোকান বসেছে এ মেলায়। শিবালয় বন্দর ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২০০ বছর ধরে এ বারুনী স্নান ও মেলা আরিচায় যমুনার তীরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ উৎসব হিন্দু ধর্মালম্বীদের হলেও মেলাকে ঘিরে হিন্দু ও মুসলমানদের সৌহার্দপূর্ণ মিলনমেলায় পরিণত হয়। সকলের সহযোগিতায় আমরা এ ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

স্নান করতে আসা টেপড়া এলাকার বৃদ্ধা যোগীদাস বালা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে এখানে স্নান করছি। স্নান করলে দেহ-মনে পাপ মোচন হয়। তাই স্নান করতে এসেছি।” বানিয়াজুরী এলাকার বিকাশ মন্ডল বলেন, “আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শুনেছি এ স্নানের মাধ্যমে পাপ মোচন হয়। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে স্নান করতে এসেছি।”

happy wheels 2

Comments