পাহাড়ি ঢলে বিপর্যস্ত কলমাকান্দা সীমান্ত এলাকার গ্রাম

নেত্রকোনা থেকে শংকর ম্রং:
এক সপ্তাহে পর পর দু’বারের পাহাড়ি ঢলে কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্ত এলাকার গ্রামীণ জনজীবন বিপর্যস্ত। গত ২৬ জুন রাত থেকে উজান থেকে বয়ে আসা এ যাবত কালের ভয়াবহ পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর, লেঙ্গুড়া, খরনৈ ও রংছাতি ইউনিয়নের জনগোষ্ঠী আজ ভয়াবহ দুর্যোগে।
জুন মাসের চতুর্থ সপ্তাহে বছরের প্রথম পাহাড়ি ঢলে জনগোষ্ঠীর জানমালের তেমন ক্ষতি না হলেও ক্ষতি হয়েছিল কৃষকদের আমন মৌসুমের ধানের বীজতলার। কৃষকরা এই সামান্য ক্ষতি মেনে নিয়ে দ্বিতীয়বার বীজতলায় বীজ বপন করেছিলেন। কিন্তু সপ্তাহ না যেতেই দ্বিতীয়বারের ভয়াবহ পাহাড়ি ঢলে সীমান্ত এলাকার পাহাড়ী নদীর ৬/৭টি স্থানে বাঁধ ভেঙে বালি পানি বসতবাড়িসহ কৃষি জমিতে প্রবেশ করে সমস্ত ফসলী জমি, ধানের বীজতলা, পুকুর ও বাড়িঘর ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।
কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের নলছাপ্রা, ভেলুয়াতলী, রহিমপুর, রামপুর, বালুচড়া, তারানগর, চৈতানগর, খারনৈ ইউনিয়নের সেনপাড়া, দমদমা, গোবিন্দপুর, বামনগাও, রংছাতি ইউনিয়নের বরুয়াকোনা, পাতলাবন, বাঘবেড়, চন্দ্রডিঙ্গা, হাতিবেড়, পাঁচগাওসহ বেশকিছু গ্রামে পাহাড়ি ঢলের ফলে বালি পানি প্রবল বেগে ঢুকে সবজি ক্ষেত, ধানের বীজতলা ও পুকুর ডুবিয়ে দেয়। ফলে কৃষকরা কয়েক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে।
নাজিরপুর ইউনিয়নের নলছাপ্রা, ভেলুয়াতলী, বালুচড়া, রহিমপুর তারানগর গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পূর্ব নলছাপ্রা থেকে বাজার হয়ে বালুচড়া মিশন স্কুল পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার বাঁধের রাস্তার পাঁচটি স্থানে বড় ধরণের ভাঙনের ফলে অনেক ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। রাস্তা ভাঙনের ফলে এবং এখন পর্যন্ত জমিতে পানি জমে থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বর্তমানে অচল হয়ে পড়েছে। কৃষকরা দুই দুইবার আমন ধানের বীজতলা করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বীজ সংকটে পড়েছে। অন্যদিকে ঢলের পানিতে পুকুর ডুবে সমস্ত মাছ ভেসে যাওয়ায় কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষকরা চলতি মৌসুমে পরিবেশ রক্ষার জন্য রাস্তার ধারে ও বসতভিটায় অনেক গাছের চারা রোপণ করেছিলেন। ঢলের পানির স্রোত সমস্ত চারা ভেসে গেছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নেতৃবৃন্দদের নিয়ে কলমাকান্দা-দূর্গাপুর ্আসনের মাননীয় সাংসদ বাবু মানবেন্দ্র মজুমদার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।


খারনৈ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর ও রংছাতি ইউনিয়নের বরুয়াকোনা, পাতলাবান, বেতগড়া, চন্দ্রডিঙ্গা, হাতিবেড়সহ হাওরাঞ্চলের অনেক গ্রাম পানিকে ঢুবে গেছে। গ্রামের বাঁধে ছোট ছোট ভাঙনের ফলে গ্রামগুলো জলাবদ্ধ রয়েছে। অনেক বাড়িঘরে ভেঙে পড়েছে এবং অনেকগুলো ভেঙে পড়ার উপক্রম। লেঙ্গুড়া, খারনৈ ও রংছাতি ইউনিয়নে নদীর পানি প্রবল স্রোতে টইটুম্বর হয়ে ব্যাপক ক্ষতি করেছে বলে এলাকাবাসী জানান।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষক মোতালিব মিয়া বলেন, ‘পাহাড়ি ঢলে এলাকার অনেক কৃষকের ন্যায় তার পুকুর ডুবে সমস্ত মাছ ভেসে গেছে। এতে আমার প্রায় ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমন ধানের বীজ বপন না করায় নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে চারা অঙ্কুরোদগমন হওয়ায় ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে রেখেছি। পানি দ্রুত নেমে না গেলে বীজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় আমন মৌসুমে ধানের চারার ব্যাপক সংকট দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে বীজতলা করার সময় থাকলেও বাজারে দ্বিগুণ মূল্যে বীজ ক্রয় করতে হতে পারে।’ এ অবস্থায় তিনি কৃষি বিভাগ, মৎস্য বিভাগ ও বন বিভাগকে জরুরিভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান।

happy wheels 2