উপকূলীয় এলাকায় এখনও দেদারসে ব্যবহৃত হচ্ছে দেশী মাছের ফাঁদ চাই
দেবদাস মজুমদার, বিশেষ প্রতিনিধি, উপকূলীয় অঞ্চল
পিরোজপুর ও বরগুণা উপকূলীয় এলাকার খাল বিল, নালায় এখন সর্বত্র পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে চিংড়িসহ নানা প্রজাতির দেশী মাছের আনাগোনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ মৌসুমে মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় মাছের পোনাও বাড়তে শুরু করেছে। চিংড়ি ও দেশী মিঠা পানির মাছ ধরার জন্য বাঁশের তৈরি চাইয়ের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অবৈধ এ চাই ব্যবহারের ফলে মাছের প্রজনন মৌসুমে নিধন করা হচ্ছে দেশী প্রজাতির নানা প্রকার মাছের ছোট পোনা। মাছের ফাঁদ বাঁশের ‘চাই’ নিষিদ্ধ হলেও বর্ষা মৌসুম শুরুর সাথে সাথে এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। পিরোজপুর ও বরগুণার উপকূলীয় হাট বাজারে বাঁশের তৈরি চাইয়ের ব্যাপক বাণিজ্যিক প্রসার ঘটেছে।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, এ চাই ব্যবহার করা হচ্ছে মূলত চিংড়ি মাছ ধরার জন্য। তবে এতে ব্যাপক হারে মিঠা পানির দেশী প্রজাতির মাছের পোনা উজাড় হচ্ছে। ফলে দেশীয় প্রজাতির মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, ভা-ারিয়া ও কাউখালীতে এ মৌসুমে অবৈধ চাই উৎপাদন করছেন এক শ্রেণীর অসাধু চাই ব্যবসায়ীরা। এসব অবৈধ চাই উপকূলীয় হাট বাজারে অবাধে বিক্রয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৎস্য অধিদপ্তর নিষিদ্ধ চাই বাজারজাত বন্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ না দেওয়ায় নির্বিঘেœ চাইয়ের প্রসার ঘটছে বলে অভিমত অনেকের। মঠবাড়িয়া, ভা-ারিয়া ও কাউখালীতে গড়ে উঠছে চাই বেচা কেনার বাণিজ্যিক হাট। এসব হাটে একজোড়া চাই ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রয় হয়।
পিরোজপুরের নাজিরপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে উঠে চাই তৈরি শিল্প। এছাড়া পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া, হুলারহাট, মঠবাড়িয়া, ঝালকাঠি রাজাপুর, কাঠালিয়া, বরগুনার বামনা, পাথরঘাটা এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাই তৈরি হয়। আসন্ন বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই দেশী মাছের রেণু পোনাসহ দেশী প্রজাতির ছোট বড় মাছ নিধন করার করা হচ্ছে। ফলে মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বাঁশ দিয়ে বিশেষ কায়দায় তৈরি করা মাছ ধরার ফাঁদ চাই তৈরি করে তা বাজারে বিক্রয় করা হচ্ছে প্রকাশ্যে।
এ ব্যাপারে মঠবাড়িয়ার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম খলিল ফরাজি বলেন, “বাঁশের চাই চিংড়ি ও দেশী প্রজাতির মাছের ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এতে আমাদের দেশী মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। চাই বিক্রয় ও বাজারজাত নিষিদ্ধ হলেও তা প্রকাশ্যেই সাপ্তাহিক হাটে বিক্রয় হয়।”
মঠবাড়িয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, “চাই দিয়ে মাছ নিধন সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়িরা চাইয়ের বাণিজ্যিক প্রসার ঘটিয়েছে। চাই বর্ষা মৌসুমে মাছের ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এতে আমাদের দেশী নানা প্রজাতির মাছ ধ্বংস হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, মৎস্য বিভাগের উদ্যোগে প্রায়ই অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ চাই জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। তবে দেশী মৎস্য সম্পদ রক্ষায় চাই দিয়ে মাছ নিধন বন্ধে জনসাধারণকেও সচেতন ও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।”