ছাতিমফুলে হেমন্তবরণ
নেত্রকোনা থেকে পার্বতী রাণী, রোখসানা রুমি ও সুইটি আক্তার
সময় যায়। ঋতু বদলায়। বদলায় রঙ। রূপ। সৌন্দর্য্য। প্রকৃতি বদলায়, সময় বদলায়, মানুষের মনও বদলায়। এক এক ঋতুতে এক এক ফল, ফুল, সবজি, খাদ্য, অনুষ্ঠান, সংস্কৃতি, গীতবাদ্য, নানান বৈচিত্র্য আর প্রাণে মানুষ মেতে উঠে। প্রকৃতির এই লীলাখেলায় নবান্নের আমেজ নিয়ে আসে হেমন্তকাল। ষড়ঋতুর আবর্তনের পালায় কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের সময়টা হেমন্তকাল। হেমন্তকাল শীতের আগামবার্তা বয়ে আনে। হেমন্তকালে নবান্ন উৎসবের ছোঁয়া লাগে গ্রামীণ জনপদে।
হেমন্তের সকালে শিশির ভেজা ঘাস অপূর্ব দ্যুতি ছড়ায়। লতাপাতা ও ধানগাছের পাতায় শিশির বিন্দু মুক্তো দানার মতো হাসি ছড়ায়। হেমন্তের সকাল, দুপুর, বিকেল, গোধূলি বেলা অপরূপ নৈসর্গিক আবহের সৃষ্টি করে। হেমন্তের রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ সবকিছু যেন একসাথে হয়ে ধরা দেয় জীবনানন্দ দাশের কবিতার চরণে: ‘আবার আসিব ফিরে, ধানসিঁড়িটির তীরে, এই বাংলায়…কার্তিকের নবান্নের দেশে… কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এই কাঁঠাল ছায়ায়…।’
নেত্রকোনা রামেশ্বরপুর গ্রামের ‘আমরা করবো জয়’ কিশোরী সংগঠনের সদস্যরা এই হেমন্তকে বরণ করে নিতে চান। হেমন্তকে বরণ করার জন্য সদস্য কিশোরীরা ছাতিম আর কামিনী ফুল সংগ্রহ করেন। এই ফুলগুলো দিয়ে তারা একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেন হেমন্তকে বরণ করার জন্য। হেমন্তকে বরণ করার জন্য অনুষ্ঠানে কিশোরীদের কেউ কেউ ধানক্ষেতে দাঁড়িয়ে ঘ্রাণ নেয় নতুন ধানের। অন্যদিকে কিশোরী মুসলিমা আক্তার বন্ধুদের সাথে হেমন্ত বরণ করার জন্য বানিয়ে নেন নতুন ধানের চিতই পিঠা। তিনি একে একে তার বন্ধুকে চিতই পিঠা বিতরণ করেন এবং হেমন্তকে বরণ করেন। অনুষ্ঠানের একটি অংশ হিসেবে কবিতা পাঠের আসরও বসে। মনি আক্তার আবৃক্তি করেন কবি সুফিয়া কামালের হেমন্তের কবিতা। অন্যদিকে হেমন্তের ওপর রচনা তৈরি করে পাঠ করে সুইটি আক্তার পাঠ করে সবাইকে শুনান। এভাবে কিশোরীরা তাদের সাধ্যমতো আনন্দের সাথে হেমন্ত ঋতুকে বরণ করে নেন। হেমন্ত ঋতুর আগমণে নিজেদের তৈরি করেন।
হেমন্তের শিশির ঝরা নিশিতে ফোটে গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি আর কামিনী। হেমন্তকালে দীঘির জলে, বিলে, ঝিলে ফোটে কত না রঙের পদ্ম। এদিকে ক্ষেত-খামারে রাশি রাশি সোনালি ধান উঠতে থাকে। ঘরে চলে নবান্ন উৎসব। নেত্রকোনার এই কিশোরীরা প্রতি ঋতুকেই এভাবেই বরণ করে নেন। তারা মনে করেন জীবনকে আরো বৈচিত্র্যময় ও শান্তিময় করতে হলে এভাবেই ঋতুবৈচিত্র্যকে মনে ধারণ করতে হবে।