মালশিরা ধানে হাসছে আশুজিয়ার কৃষকরা
নেত্রকোনা থেকে রুখসানা রুমী
কৃষির বিষয়ে নতুন কোন তথ্য ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণের দ্রুততম মাধ্যম হলো আমাদের দেশের কৃষক। ২০১৬ সালে কেন্দুয়ার আশুজিয়া ‘সবুজ শ্যামল কৃষক সংগঠন’র সভাপ্রতি আবুল কালাম বারসিক রামেশ্বরপুর তুষাইপাড়ের কৃষক সংগঠন থেকে ১০টি স্থানীয় জাতের ধানের বীজ সংগ্রহ করে সংগঠনের উদ্যোগে আমন ২০১৬ মৌসুমে কৃষক নেতৃত্বে এলাকা উপযোগি ধানের জাত নির্বাচনের জন্য একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। গবেষণা কার্যক্রমের ফলাফল সহভাগিতা ও এলাকা উপযোগি ধানের জাত নির্বাচনের জন্য কৃষক মাঠ দিবস আয়োজন করা হলে মাঠ দিবসে অংশগ্রহণকারী ৪ জন কৃষক গবেষণাধীন স্থানীয় জাতের ‘মালশিরা’ ধানের জাতটি পছন্দ করেন।
আমন ২০১৭ মৌসুমে উক্ত চারজন কৃষক নিজ নিজ জমিতে মালশিরা ধানের বীজ নিয়ে চাষ করেন। সংগঠনটির উদ্যোগে আমন ২০১৮ মৌসুমে পুনরায় ধানের জাত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। আগ্রহী কৃষকেরা মালশিরা ধানের জাতটি সর্ম্পকে বিশেষভাবে- এই ধানের উৎস কি? বীজ নেয়া যাবে কিনা? আমন ২০১৭ মৌসুমের ধানের জাত গবেষণাকে কেন্দ্র করে একটি কৃষক মাঠ দিবসে ১০ জন কৃষকও ভাল ফলন, ধান ছোট ও সুগন্ধি হওয়ায় ‘মালশিরা’ ধানটি পছন্দ করে এবং ধানের বীজ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে।
আমন ২০১৮ মৌসুমে আশুজিয়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম তার ১২০ শতাংশ জমিতে মালশিরা ধান চাষ করেছেন এবং গ্রামের আরও ৫ জন কৃষককে মালশিরা ধানের বীজ বিতরণ করেন। এই ৫ জন কৃষক তাদের তিন একর/৩০০ শতাংশ জমিতে এ জাতের ধানটি চাষ করেন। আমন ২০১৮ মৌসুমে মালশিরা ধানকে কেন্দ্র করে অনেক বড় করে আশুজিয়া গ্রামে কৃষক মাঠ দিবস আয়োজন করা হয়েছে।
মালশিরা ধান গাছের গড় উচ্চতা ১০৫ সে.মি. গাছ মাঝারি আকারের হওয়ায় হেলে পড়েনা, রোগ-বালাই হয়নি, শীষের দৈর্ঘ্য ২৩ সে.মি., মোট সময়কাল (বীজতলা-কাটা পর্যন্ত) ১৩৯ দিন, প্রতি শীষে পুষ্ট ধানের সংখ্যা ২১৫টি এবং চিটার সংখ্যা গড়ে ১০টি, ধানের আকার মাঝারী চিকন ও চাল সাদা বর্ণের।
প্রতি ১০ শতাংশ জমিতে ১৮০-২০০ কেজি (বা ৪-৫ মন/কাঁচা মাপে) ধান হয়েছে। মাঠ দিবসে কৃষকরা তাদের পছন্দ করা ধান কেটে মাড়াই করে এবং ফলন ওজন করেছেন। চারটি গ্রামের ৮ জন কৃষক ৫ কেজি করে মোট ৪০ কেজি মালশিরা ধান বীজ গবেষণা কমিটির নিকট থেকে সংগ্রহ করে আগামী আমন মৌসুমে নিজেদের জমিতে চাষ করার জন্য নিয়ে যান। আশুজিয়া গ্রামের কৃষক আ. মালেক বলেন, ‘মালশিরা ধানের উৎপাদন অনেক ভালা, আগামী বছর অনেক কৃষক এই ধান চাষ করার আশা করেছে।’
কৃষকেরা আশা করছেন মালশিরা ধানটি আগামীতে কেন্দুয়া এলাকার সকল কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে। শুধু কেন্দুয়া নয় আশেপাশের গ্রামের কৃষকের মাঝেও মালশিরা ধানের জাতটি ছড়িয়ে পড়বে বলে কৃষকেরা মনে করেন।