বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি কালচে হলদের ঘাঁটি ও উর্বরতায় খাঁটি
মানিকগঞ্জ থেকে মো.নজরুল ইসলাম
‘নারী পুরুষে বৈষম্য রোধ করি,বৈচিত্র্যময় সমাজ গড়ি’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বারসিক মানিকগঞ্জ সিংগাইর অঞ্চলে নারীবান্ধব সমাজের জন্য গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদি সাংস্কৃতিক চর্চা ও উন্নয়ণ প্রকল্পের কাজ চলমান। এই কাজকে আরো বেগবান করার লক্ষ্যে মানিকগঞ্জ সদর থেকে সম্প্রতি আমরা আঞ্চলিক সমন্বয়কারি বিমল রায়, হরিরামপুর থেকে কর্মসূচি কর্মকর্তা সত্তরঞ্চন সাহা, মুক্তার হোসেন এবং মো.নজরুল ইসলামসহ ৪ জনের একটি টিম বারসিক রাজশাহী রিসোর্স সেন্টার, দুবাইল তানোর এ নবান্ন উৎসব ও বীজ বিনিময় অনুষ্ঠানসহ কমিউনিটি পর্যায়ের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে অংশগ্রহণ করি। গত ৭ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি এবং যথাসময়ে অবস্থান করে প্রয়োজনীয় কাজ ও অভিজ্ঞতা শেষে ৯ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জে ফিরি। টিম লিডার বিমল রায়ের নেতৃত্বে যাত্রাপথে গোয়ালন্দ রেল স্টেশন কামরায় স্থানীয় সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতা কমরেড শেখ রাজিবসহ কয়েজন সমাজকর্মীর সাথে ঢাকা-মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া রেল লাইন ও ২য় পদ্মা সেতু বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকালেই হাঁটার ফাকে দেখি রাজশাহী নগর ভবন, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন সবুজ নগরীর পাশেই পদ্মা নদীর পারে ইকো পার্ক, বোটানিকাল গার্ডেন, বরেন্দ্র যাদুঘর।
বিখ্যাত বরেন্দ্র অঞ্চল বলে খ্যাত দুবাইল তানোরে নবান্ন ও বীজ বিনিময় উৎসবে অংশগ্রহণ করি আমরা সফররত দল।দুবাইল কৃষক সংগঠনের আয়োজনে বরেন্দ্র কৃষক বীজ ব্যংক চত্ত¡রে সংগঠনের সভাপতি পদকপ্রাপ্ত আদর্শ কৃষক মো.ইউসুফ মোল্লার সভাপতিত্বে সংগঠনের সম্পাদক মো.নুরুল ইসলামসহ সদস্যদের পরিচালনায় আলোচনা অনুষ্ঠান, স্থানীয় বিখ্যাত কবিদের নবান্ন কেন্দ্রিক কবিতা আবৃত্তি এবং স্থানীয় শিল্পীদের দ্বারা নবান্ন ও কৃষি কেন্দ্রিক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সুর দর্শক ¯্রােতাদের হৃদয়ে দাগ কোটে যায়। অনুষ্ঠান শেষে একটি র্যালি নিয়ে সফররত দল ইউসুফ মোল্লার বাড়িতে যাই। দুপুরের খাবারে সাথে আস্বাধন করি হরেক রকমের পিঠাপুলি, মাছ দিয়ে ডাউলের ঘাটি, আমন ধানের ভাত। এই মজার খাবার বাড়িতে মানুষে কানায় কানায় ভরপুর, বসে দাঁড়িয়ে বিভিন্নভাবে পিঠা স্বাদ গ্রহণ করলেও কারো মনে বিরক্তি ও কষ্ট নেই বরং আমরা সবাই আনন্দিত। সংগঠনের সদস্যরা সারারাত জেগে তিলকুলি, পাটিসাপটা, ভাপা ও চিতই পিঠাসহ হরেক রকমের পিঠার পাশাপশি মাছঘাটি দিয়ে ভাতও দিয়েছেন সবাইকে। গ্রামীণ পরিবেশে এটি একটি বৈচিত্র্যময় আয়োজন। মেলায় প্রদর্শিত ও বিনিময় হয় বিভিন্ন ধরনের ধান বীজ। পাশেই বরেন্দ্র কৃষক বীজ ব্যাংক এবং সংগ্রহে আছে তিনশত প্রজাতির লুপ্তপ্রায় ধান। অনুষ্ঠানে নারীবান্ধব সমাজ বির্নিমাণে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো এবং বারসিক সাংস্কৃতিক দলের নেতৃত্ব পরিবেশিত হয় নারীজাগরণের গান। আবৃত্তি করা হয় হরেক রকমের কবিতা।
আমরা বিকেলে কমিউনিটিতে কৃষক নিয়ন্ত্রিত জাত গবেষণা কেন্দ্রে বিভিন্ন প্রকারের মশলা জাতের নমুনা ও জমিতে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদের কৌশল দেখতে পাই এবং জমিতে দাঁড়িয়েই অঞ্চলভিত্তিক ফসলের জাত ও চাষবাস পদ্ধতি নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়। রাতে বারসিক রাজশাহী রিসোর্স সেন্টার মিলনায়তনে বারসিক রাজশাহী অঞ্চল সমন্বয়কারি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অঞ্চলভিত্তিক কাজের সহভাগিতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় বিষয়ক আলোচনা সভায় আলোচনায় অংশগ্রহন করেন বারসিক পরিচালক কৃষিবিদ এ বি এম তৌহিদুল আলম, বিমল রায়, আল রাফি, ব্রজেন সরকার, অমিত সাহা প্রমুখ।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমঅঞ্চলের ১১টি জেলার ৭ লাখ হেক্টর জমিজুড়ে রয়েছে বরেন্দ্র এলাকা। এর মধ্যে রাজশাহী জেলা রয়েছে প্রাণকেন্দ্রে এবং তানোর ও গোদাগারি উপজেলা বেশি পরিচিত। শুস্ক আবহাওয়ার কারনে বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ কম বিধায় অনেক বড় চকে দাঁড়ালে চোখ ধু ধু করে এবং কিছু জায়গার জমি সোনালি রঙের এবং কালচে ধরনের আবার একজাযগায় কালো পরের জমিতেই হলুদ রঙ এ যেন কালচে হলুদের মহামিলন। কৃষক মো.নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বারসিক’র মাধ্যমে রাসায়নিকের কুফল এবং জৈব পদ্ধতির সুফল জানতে পেরেছি। তাই আমরা প্রাণ-প্রকৃতি প্রতিবেশ রক্ষায় বদ্ধপরিকর।’
সরকারি কৃষি বিভাগ ও বেসরকারিভাবে বারসিকসহ অন্যান্য বেসরকারি সেচ্ছাসেবী সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকের পাশে থেকে মাটিতে জৈব সারের ব্যপকতা বাড়ানের লক্ষ্যে মিশ্র ফলস চাষ, সবুজ সার ও জৈব সার তৈরীর কলাকৌশল ও ব্যবহার বৃদ্ব্যির লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করছে।