করোনাকালে তরুণদের সবজি উৎপাদনের উদ্যোগ
রাজশাহীর তানোর থেকে উত্তম কুমার
চারিদিকে যখন খাদ্য সংকটের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তখন গ্রামের কৃষক তরুণ-যুবকরা দেশের খাদ্য উৎপাদনে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। নিজের পরিবারকে সহায়তা করার পাশাপাশি তারা যৌথ উদ্যোগে গ্রামের মানুষের সবজির ঘটতি মেটাতে গ্রামের পরিত্যাক্ত জমিগুলো চাষাবাদের উপযোগী করে তুলছে। স্বেচাশ্রমে তারা যৌথভাবে সবজি উৎপাদনে অবসর সময়গুলো কাজে লাগাচ্ছে। তেমনি একটি দারুণ উদ্যোগ নিয়েছেন রাজশাহীর তানোর উপজেলার মোহর গ্রামের স্বপ্ন আশার আলো যুব সংগঠনের তরুণ স্বেচ্চাসেবীরা।সবকিছু যখন থমকে গেছে তখন এই বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালীন সময়ে কৃষিই মানুষকে টিকিয়ে রেখেছে। আমরা জানি, দিন যতই অতিবাহিত হচ্ছে করোনার ভয়াবহতা প্রকাশ পাচ্ছে। যেকোন মহামারী মোকাবেলায় কৃষি ক্ষেত্রই একমাত্র উপায় হয়ে মানুষকে সহযোগিতা করে। কারণ অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান তিনটি আসে কৃষি থেকেই। এমনকি চিকিৎসার বিভিন্ন কাঁচামালও আসে এই কৃষি উৎপাদন থেকেই।
করোনাকালে খাদ্য সংকট বিষয়টি অনুধাবন করে তা মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল ধরনের জমি পতিত না রেখে চাষাবাদ করার পরামর্শ দিয়েছেন। করোনা যতই মহামারী রূপ নিয়েছে মানুষ ততই কৃষিতে এর সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেছেন। কৃষকরা করে চলেছেন নিরলস প্রচেষ্টা খাদ্য উৎপাদনে।
রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলার মোহর গ্রামের যুব সংগঠনের সদস্যরা প্রথমে নিজেদের মধ্য আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সংগঠনভিত্তিক সবজি চাষ করবেন। এরপর গ্রামেরই পরিত্যক্ত জমির মালিক শ্রী জয়দেব কুমারের সাথে আলোচনা করেন। সব শুনে জয়বেদ কুমার শর্তহীনভাবে ১৫ শতাংশ জমি দিতে আগ্রহী হয়। স্বপ্ন আশার আলো সংগঠনের সদস্যরা অবসর সময়ে শ্রম দিয়ে গত ১৫ এপ্রিল-২০২০ থেকে শুরু করেন সবজি চাষের কার্যক্রম। সংগঠনের ১২জন মিলে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে জমিতে শ্রম দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
প্রথমে সবাই মিলে জমি পরিষ্কার করে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে জমি প্রস্তুত করা হয়। এরপর গ্রামের নারী সংগঠনের সদস্যদের নিকট থেকে লাউ,মিষ্টি কুমড়া, বেগুনের চারা, কাঠুয়া ডাটা, পুঁইশাক, লালশাক, পাটশাক, মরিচের বীজ নিয়ে সেগুলো রোপণ করা হয়। সবাই সমানভাবে চাঁদা দিয়ে বাগানটি ঘেরা দেওয়ার কাজ শেষ করেন।সংগঠনভিত্তিক সবজি বাগান করার বিষয়ে স্বপ্ন আশার আলো সংগঠনের সদস্য মো. সবজুল হোসেন (৩০) বলেন, ‘করানোকালীন সাধারণ ছুটির সময় আমাদের সদস্যদের সবারই কাজ মোটামুটি কমে যাওয়ায় সবাই বাড়িতে অবস্থান করি। তখন আমরা নিজেদের মধ্য আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এমন কি কাজ করলে নিজেদেরও উপকার হবে আবার সেখান থেকে গ্রামের গরিব মানুষকেও সহযোগিতা করা যাবে। তখন আমরা চিন্তা করি সবাই মিলে যদি একটি জমিতে সবজি চাষ করা যায় তাহলে আমাদেরও উপকার হবে আবার সেখান থেকে আমরা গ্রামের গরিব মানুষদের সহযোগিতাও করতে পারব।’
সংগঠনের সহ-সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন (৩২) বলেন, ‘জমিতে সবজিগুলো রোপণ করার ১৫-২০ দিনের মধ্য শাকগুলো খাওয়ার উপযোগি হয়। আমরা নিয়মিত সংগ্রহ করে নিজেদের মধ্য সমান ভাগে ভাগ করে নিই এবং যেটুকু বেশি হয় তা জমির মালিককে দিয়েও ১০টি গরির পরিবারে লালশাক, পাটশাক দেওয়া সম্ভব হয়। পুনরায় সেখানে আমরা আবার লালশাক, পাটশাক রোপণ করি।’কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে নিজেদের মধ্য সবজিগুলো ভাগ করে নেওয়ার পরও ৪৫টি গরিব পরিবারে ২বার করে সবজি বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে। এ বিষয়ে তালন্দ ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ এমতাজ আলী(৫০) বলেন, ‘যুবকদের এ ধরনের কাজকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। কারণ এই করোনা মহামারীতে তারা বাড়িতে বসে না থেকে সমাজিক দুরত্ব রেখেও মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।’
একটি সমাজ উন্নয়নে ও খাদ্য নিরাপত্তায় যুবকরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন হয় সহজতর। মোহর স্বপ্ন আশার আলো যুব সংগঠনের এ উদ্দ্যোগটি এই করোনা মহামারী সময়ের একটি অনন্য উদাহরণ, যা করোনা মহামারী সময়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাতে অবদান রাখছে।