সাম্প্রতিক পোস্ট

আমরা করবো জয়

মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার

“আমরা করবো জয়” এই প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলছে মানিকগঞ্জ জেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেয়েরা। ওরা প্রমাণ করেছে সুযোগ পেলে ওরাও পারে ভালো কিছু করতে, ওরাও পারে বিজয় মুকুট পড়তে।

একটা সময় ছিল যখন নারীদের খেলা বলতে মিউজিক্যাল চেয়ার, সঁূেচ-সুতা পড়ানো, গোলক নিক্ষেপ, বিস্কুট খেলা, বালিশ খেলা এগুলোই সামনে চলে আসতো। সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে মানুষের ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-ভাবনা ও কাজেও পরিবর্তন এসেছে। পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে নারীরাও এগিয়ে চলছেন।  বর্তমান সময়ে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, ব্যাডমিন্টনসহ সব ধরণের খেলায় নারীরা অংশগ্রহণ করছেন। শুধু অংশগ্রহণ নয় বিজয়ী হয়েও ফিরেছেন এমন উদাহরণ অনেক আছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামের মেয়েরাও এসব খেলায় অংশগ্রহণ করছেন। শুধু কথায় নয় কাজেও মেয়েরা প্রমাণ করেছে “আমরাও পারি।”

বাসুদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীর সুমা, লাবনী, সুবর্ণা, শিরিন, সেলেনা, মহুয়া, সুমাইয়া, ময়না, ফাতেমা, বিথী, আলিফা, পারভীন, শিরিন-২, মৌ, খাদিজা, সাফিয়াসহ ২০ জন কিশোরীদের নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে একটি ফুটবল টিম। যার অধিনায়ক খাদিজা আক্তার, গোল কীপার সাফিয়া আক্তার। এবং এই টিম পরিচালনা করছেন উক্ত বিদ্যালয়ের ২ জন শিক্ষক-সুফিয়া বেগম ও মো. আসাদুজ্জামান খান। এরা ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে থাকে।
DSC00153
গত ১০ মে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা টুর্নামেন্ট’-২০১৬ উপলক্ষে ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বাসুদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেয়েরা রাজীবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়। তাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মকিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেয়েরা। সকাল ১০.০০ মি. খেলা শুরু হয়। ট্রাইবেকারে দুই গোলে মকিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেয়েদের হারিয়ে তারা জয়ী হয়। সকলে উল্লসিত, আনন্দিত। তারা বলে “আমরা জানতাম আমরা পারবোই। সত্যিই আমরা পেরেছি।”

কিশোরী ফুটবল টিমের সদস্যদের সাথে আলোচনায় জানা গেল, তাদের পিতামাতা খেলাধুলায় তাদেরকে অনেক উৎসাহ দেয়; কখনও নিষেধ করেন না। সাফিয়া আক্তার বলে, “আমার ফুটবল খেলতে খুব ভালো লাগে। এ খেলায় আমি খুব মজা পাই। একবার তো রাজীবপুর স্কুলে খেলতে গেছি। গিয়ে দেখি অন্য দল আসেইনি। আমরা বিজয়ী হরে ফিরে আসি। আমার বাড়ি থেকে কখনো না করে না। মা-বাবাও উৎসাহ দেয়।”
মহুয়া আক্তার বলে, “আমার বল খেলতে ভালো লাগে। পরিবার থেকে কোন বাধা দেয় না। সবাই উৎসাহ দেয়। যখন কোথাও খেলতে যাই আমার ভাই আমাকে সাথে করে নিয়ে যায়। অর্ধেক খেলা হলে আমার যতœ নেয়। আমাকে বলে দেয় এইভাবে খেলতে হবে। আমারা যখন জয়ী হই তখন খুব ভালো লাগে।”

এই প্রসঙ্গে মহুয়ার ভাই মো. সাইফুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, “আজকাল নারী পুরুষের খেলা বলে কিছু আছে নাকি! সবাই সব ধরণের খেলা খেলে। ও (মহুয়া) ফুটবল খেলতে পছন্দ করে। তাই ওকে নিয়ে আসি। উৎসাহ দেই। ওদের দল যখন জয়ী হয় তখন আমারও ভালো লাগে। বোনের জন্য গর্ব হয়।”

শিক্ষক সুফিয়া বেগম  বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ের মেয়েরা সব ধরণের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলা, নাচ, গান, আবৃত্তি সব কিছুতেই ওরা অংশগ্রহণ করে। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়েও অংশ নেয়। গত বছর আমাদের স্কুলের মেয়েরা জেলা পর্যায় অংশ নেয়। সবটায় জয়ী হতে পারে না কিন্তু ওরা যে সাহস করে অংশ নেয় এটাই বড় আমি মনে করি।”
DSC00144
একই কথা বলেন শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন বলেন, “আমাদের স্কুলের মেয়েরা অনেক ভালো খেলে বলবো না তবে ভালো খেলে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করে। আমাদের সময় আমরা স্যারদের রুমের সামনে দিয়ে যেতে ভয় পেতাম। এখনকার সময় ওরা ভয় পায় না। ওদের জানার অনেক বিষয় ওরা আমার সাথে শেয়ার করে। আমিও ওদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেই।” তিনি আরও বলেন, “ওরা খেলার পাশাপাশি লেখাপড়ায়ও ভালো করে। তাছাড়া ওদের পরিবার থেকেও ওদের অংশগ্রহণ করতে দেয়। নিষেধ করে না। এটা ভালো দিক। কারণ পরিবার থেকে যদি বাধা দিত তাহলে এটা সম্ভব হত না।”
আমরা করবো জয় এই প্রত্যয় নিয়ে ওরা স্বপ্ন দেখছে একদিন ওরাও জেলা পর্যায় জয়ী হবে। সবাই ওদের চিনবে খেলোয়াড় হিসাবে, মেয়ে বলে নয়। মেয়ে বলে পরিবারে বোঝা হয়ে থাকবে না। সামনে এগিয়ে যাবে সমানতালে এই প্রত্যাশা ওদের, আমাদের ও সকলের।

happy wheels 2